ঢাকা, শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪, ০৫:০৮ পূর্বাহ্ন
বন বিভাগের এই মৃত্যুর মিছিল থামবে কবে, এরপর কে?
ফেইসবুক থেকে ::

আসেন একটু কল্পনা করি

৩০ তারিখ সারারাত ডিউটি করে মাটি বোঝায় ডাম্পার আটক করে, বাকি কাজ সেরে গাড়ি অফিস হেফাজতে রেখে সকাল ৮ টায় ঘুমাতে গেলেন এরপর কয়েক ঘন্টা পরে উঠে ফিল্ডের জংগল কাটা, নার্সারি করা ইত্যাদি যাবতীয় কাজের তদাকরি করে ইফতার করে আবার অফিসের কাজে বসলেন, এর মাঝেই বিভিন্ন সাংবাদিক এবং সুপারিশ কারিদের সময় দিলেন, এত্তো কিছুর মাঝে রাতের খাবার সময় করতে পারেন নাই । মামলা রেডি করে, মাসিক প্রতিবেদন রেডি করে বাকি কাজ আগামীকাল সকালে করবেন চিন্তা করে অফিস থেকে ৩১ তারিখ রাত ১:৩০ টায় বের হয়ে বাসায় গেলেন। বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে রাত ২:৩০ দিকে রাতের খাবার আর সেহেরি এক সাথে করে নিলেন। এমন সময় খবর পেলেন যে পাহাড় খেকোরা সেহেরির টাইমের সুযোগ নিয়ে সংরক্ষিত বন থেকে ডাম্পারে করে মাটি পাচারের জন্য কাজ শুরু করেছে। কি করবেন? যা খুশি হোক আমি আর পারবো না চিন্তা করে সারাদিনের ক্লান্ত শরীর নিয়ে ঘুমিয়ে পড়বেন? নাকি নিজের দায়িত্ব পালনের জন্য জীবনের ঝুকি নিয়ে বেরিয়ে পড়বেন দেশের বনভূমি রক্ষা করতে?

আমার খুব কাছের ছোট ভাই সহকর্মী ২০২০ সালে ফরেস্টার পদে নিয়োগ প্রাপ্ত মো: সাজ্জাদুজ্জামান সজল এত্তো কিছু করেও ক্লান্ত শরীর নিয়ে না ঘুমিয়ে রাত ৩ টার সময় বের হয়ে যান মাটি চোরদের ধরার উদ্দেশ্যে। সাথে নেওয়ার মতো লোকবলের সংখ্যাও অপ্রতুল। রাতে যদি সবাইকে নিয়ে ডিউটি তে যায় তবে সকালে নার্সারিতে আর বাগানের জংগল কাটার ডিউটি কে করবে। সেই চিন্তা করেই ড্রাইভার আলি কে নিয়ে মোটরসাইকেল যোগে বের হয়ে যান ঘটনা স্থলের উদ্দেশ্যে। যাওয়াত পথেই মাটি বোঝায় গাড়ি দেখে মোটরসাইকেল থামিয়ে গাড়িটিকে থামার সিগনাল দেন। যেহেতু গতচার রাতে চারটি গাড়ি নিজের সাহসিকতায় আটক করেছিলো তাই এবারো দাঁড়িয়ে যান পাহাড় খেকো অমানুষদের বিরুদ্ধে। হত্যাকারী চালক সরাসরি গাড়ি উঠিয়ে দেন সজলের শরীরে, ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে মাথার উপর দিয়ে চাকা উঠিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়।

ঘটনা স্থলেই শেষ হয়ে যায় ৯ মাস বয়সী একটি কন্যা সন্তানের পিতার জীবন। সদ্য ২বছরের বিবাহিত স্ত্রী হয়ে গেলেন বিধবা। দুই ছেলের মাঝে একটি হারিয়ে স্কুল শিক্ষক পিতা মাতা এখন পাগল প্রায়।

সজলের বড় ভাইয়ের করা প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে পারিনি। উনি নিজ হাতেই ছোট্ট ভাইয়ের থেতলানো মাথা ব্যান্ডেজ করছিলেন আর বলছিলেন আমি কি নিয়ে বাড়ি যাব, এই মুখ আমি কিভাবে দেখাবো আমার পরিবারের মানুষকে?? কারন শেষ বার দেখানোর মতো কোনো চেহারা অবশিষ্ট নেই তার ছোট ভাইয়ের।

বন বিভাগের এই মৃত্যুর মিছিল থামবে কবে? শুধু কক্সবাজারেই বিভিন্ন অভিযানে আহতদের তালিকায় আছেন অনেক বনকর্মী আর জীবন দিয়ে গেলো আমার ব্যাচে নিয়োগ প্রাপ্ত ২ জন। আগে গেছে আমার বন্ধু ইউসুফ এখন গেলো আমার ছোট ভাই সজল। এর পর কে?

 

লেখক, শোভন জামান

ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, হিমছড়ি টহল ফাঁড়ি, কক্সবাজার 

লেখাটি লেখকের ফেসবুক ওয়াল থেকে নেওয়া। 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *