বাধ্যতামূলক সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার আইনের অধীনে মিয়ানমার প্রতি মাসে কমপক্ষে ৫০০০ যুবক-যুবতীকে যুক্ত করার খসড়া শুরু করছে। এ হিসেবে প্রতিবছর সেখানে সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে হবে প্রায় ৬০,০০০ যুবক, যুবতীকে। এমন আইন করার ফলে অনেক যুবক-যুবতী এরই মধ্যে দেশ ছেড়ে পালানোর কথা চিন্তা করছেন। দেশটিতে নতুন বর্ষবরণ হবে এপ্রিলে। এ সময় রীতি অনুযায়ী বর্ষবরণের পর শুরু হবে এই কার্যক্রম। এ খবর দিয়ে অনলাইন মিয়ামি হেরাল্ড লিখেছে- সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলক যোগ দেয়ার আইন শনিবার ঘোষণা করে সামরিক জান্তা, সামরিক কাউন্সিলের চেয়ারম্যান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং। তার আকস্মিক এই ঘোষণা এটাই বলে দেয় যে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দুর্বল হয়ে পড়ছে। তাদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। বিশেষ করে গণতন্ত্রপন্থি বিভিন্ন বাহিনীর ক্রমাগত চাপের মুখে এ ঘটনা ঘটছে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে বেসামরিক নেত্রী অং সান সুচির কাছ থেকে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা কেড়ে নেয়ার পর থেকেই এই চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সেনাবাহিনীর আকার এখন যে মাত্রায় আছে, তা নির্ভরযোগ্য নয়। সিআইএ ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুক অনুযায়ী, গত বছর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সদস্য সংখ্যা দেড় লাখ থেকে চার লাখের মধ্যে ছিল।
ওয়াশিংটনভিত্তিক ইউএস ইনস্টিটিউট অব পিস বলছে, সেনাবাহিনী ক্ষমতা নেয়ার পর থেকে ২১,০০০ সদস্য কমে গেছে। এর মধ্যে আছে হতাহত হওয়া, চাকরি ছেড়ে যাওয়া অথবা পক্ষত্যাগ করা। এর ফলে মিয়ানমারে কার্যত সেনাবাহিনীর সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ। নতুন আইনের অধীনে ১৮ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যকার পুরুষ এবং ১৮ থেকে ২৭ বছরের মধ্যকার বয়সী নারীদেরকে সেনাবাহিনীতে দু’বছরের প্রশিক্ষণ নিতে হবে। তবে সুনির্দিষ্ট কিছু পেশাগত ক্যাটেগরিতে, যেমন ডাক্তার ও ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য এই বয়সসীমা যথাক্রমে ৪৫ এবং ৩৫ বছর হতে পারে। এক্ষেত্রে তাদের প্রশিক্ষণের সময় হবে তিন বছর। সাংবাদিকদের কাছে একটি বিবৃতি দিয়েছে সেনাবাহিনীর তথ্য বিষয়ক অফিস। তাতে বলা হয়েছে, প্রতি মাসে ৫০০০ যুবক ও যুবতীকে ডাকা হবে এবং তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। যুবতীদেরকে পঞ্চম ব্যাচ থেকে ডাকা হবে। সেনা সরকারের মুখপাত্র মেজর জেনারেল জাওয়া মিন তুনের একটি বিবৃতি সম্প্রতি প্রকাশিত হয় রাষ্ট্র পরিচালিত মিয়ানমা অ্যালিন পত্রিকায়।
তাতে বলা হয়, দেশের ৫ কোটি ৬০ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় এক কোটি ৪০ লাখ মানুষ সামরিক দায়িত্বের জন্য যোগ্য। এর মধ্যে ৬৩ লাখ যুবক এবং ৭৭ লাখ যুবতী। তিনি বিবিসিকে মঙ্গলবার বলেছেন, মধ্য এপ্রিলে পালিত হবে মিয়ানমারের থিনগায়েন নতুন বছর। এই উৎসব পালনের পর পরই প্রথম ৫০০০ জনের ব্যাচকে ডাকা হবে। কিন্তু এই আইন সক্রিয় করা নিয়ে আতঙ্ক, উদ্বেগ এবং হতাশা দেখা দিয়েছে যুবক, যুবতী এবং তাদের অভিভাবকদের মধ্যে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় তারা এই হতাশার কথা প্রকাশ করছেন। অনেকে দেশ ছেড়ে যাওয়ার কথা বিবেচনা করছেন। জাতিগত সংখ্যালঘুরা যেসব এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে সীমান্ত অতিক্রম করে সেসব এলাকায় চলে যেতে চাইছেন কেউ কেউ। আবার প্রতিরোধ যুদ্ধে যোগ দিতে চাইছেন কেউ কেউ। কিন্তু এক্ষেত্রে কড়া শাস্তির বিধান রেখেছে সামরিক জান্তা। কেউ সেনাবাহিনীতে যোগ না দিয়ে পালানোর চেষ্টা করলে তার শাস্তি তিন থেকে পাঁচ বছরের জেল এবং জরিমানা। তবে ধর্মীয় বিষয়টি এক্ষেত্রে বাইরে রাখা হবে। সরকারি চাকরিজীবী এবং ছাত্রছাত্রীরা অস্থায়ী সময়ের জন্য নিস্তার পাবেন। সামরিক জান্তা রিজার্ভ ফোর্সেস ল নামে একটি আইন সক্রিয় করেছে। এর অধীনে বর্ষীয়ান সেনা কর্মকর্তাদেরকে অতিরিক্ত ৫ বছর দায়িত্ব পালন করতে হবে তাদের পদত্যাগ বা অবসরের সময়ের পর।
Leave a Reply