ঢাকা, শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪, ০২:৪৮ অপরাহ্ন
ভালুকের জেলখানা
ডেস্ক রিপোর্ট ::

পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই অপরাধীদের শাস্তি দেয়ার জন্য জেলখানা রয়েছে। তবে কানাডার চার্চিল প্রদেশের ম্যানিটোবা শহরে রয়েছে অন্য রকম এক জেলখানা। সেই জেলখানায় মানুষের পরিবর্তে আটকে রাখা হয় মেরু ভালুককে।

শহরটিতে এত বেশি মেরু ভালুকের উৎপাত যে, এদের আক্রমণ থেকে বাঁচতে স্থানীয় প্রশাসনকে এটি তৈরি করতে হয়।

ব্লিটজলাইফ ম্যাগাজিনে ছাপা হওয়া স্যামুয়েল রিজনের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভালুকের যন্ত্রণায় অঞ্চলটিতে পোলার বিয়ার অ্যালার্ট প্রোগ্রাম নামে একটি অভিযান শুরু হয়েছে।

Polar bear

প্রোগ্রামটির কর্মীরা রীতিমতো শক্তিশালী ট্রাঙ্কুলাইজার ডার্ট (অজ্ঞান করার অস্ত্র, যার মাধ্যমে দূর থেকে গুলির মতো ইনজেকশন ছোড়া যায়) হাতে হেলিকপ্টারে করে অঞ্চলটিতে ঘুরে ঘুরে মেরু ভালুক খুঁজে বেড়ান। তাদের মতে আগেভাগেই পশুগুলোকে পাকড়াও না করলে পরে তারা নানা রকম ক্ষয়ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

গ্রেপ্তারকৃত ভালুকগুলোকে মানুষের মতোই নাম্বারে চিহ্নিত করা হয়।

যেমন এখন যে ভালুকটিকে নিয়ে কথা বলছি, তার নাম্বার হলো- ১৯১৭৩। এটি ৮০০ পাউন্ডের এক বিশালাকার পুরুষ ভালুক। এই ভালুকটি খাবারের খোঁজে মানুষের এলাকায় ঢুকে পড়ে। ভেঙে ফেলে একটা দামি পোরশে গাড়ি। একটা হাসপাতালেও সে ঢুকে পড়ে এবং ভাঙচুর চালায়। তার ভয়ে লোকজনকে হাসপাতাল ছেড়ে পালাতে হয়েছিল।

Polar bear

এই মেরু ভালুকটির ধারণা হয়েছিল, শীতকাল অর্থাৎ বরফের দিন চলে গেলে সবচেয়ে ভালো খাবার পাওয়া যায় শহরে থাকা ডাস্টবিনগুলোতে। আর এখান থেকেই যত বিপত্তি।

মনে রাখতে হবে, মেরু ভালুকদের কাছে মানুষ সব সময় প্রিয় শিকার। তাদের মধ্যে কোনো মনুষ্যভীতি নেই। সামনে পেলে তারা অনায়াসেই মানুষ শিকার করে।

হেলিকপ্টার থেকে ট্রাঙ্কুলাইজার ডার্টের মাধ্যমে অজ্ঞান করার পর ভালুকটিকে ট্রাকে করে পোলার বিয়ার প্রিজন বা মেরু ভালুকের জেলখানাটিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

জেলখানাটি যেখানে অবস্থিত, সেটি নর্দার্ন ক্যাপিটেল অব দি ওয়ার্ল্ড বা পৃথিবীর উত্তরের রাজধানী নামেও পরিচিত। অনেক ক্ষেত্রে এটিকে বিশ্বমানচিত্রে পোলার বিয়ার ক্যাপিটেল বা মেরু ভালুকের রাজধানী বলেও ডাকা হয়।

এই পোলার বিয়ার প্রিজন প্রথমে আর্মির বিমানের হ্যাঙ্গার (যেখানে বিমান রাখা হয়) ছিল। পরবর্তীকালে ভালুকের উৎপাত থেকে বাঁচতে ১৯৮১ সালে একে জেলখানা বানানো হয়। এটিতে মোট ২৮টি সেল রয়েছে।

এখানে নিয়ে আসা ভালুকগুলোকে প্রথম ৩০ দিন শুধু তুষার আর পানি খেতে দেয়া হয়। এতে করে প্রাণীগুলোর মানসিক পরিবর্তন ঘটে। ফলে এরা খাবারের খোঁজে শহরে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। এক মাস কারাদণ্ডের পর এদেরকে মেরুর বরফে ছেড়ে আসা হয়। এই পুরো প্রক্রিয়াটিকে বলা হয় আইস রিলিজ বা বরফ মুক্তি।

যদিও অনেকের মতে ভালুকগুলোকে এমনভাবে জেলে বন্দি করে রাখা একটি নির্মম ব্যাপার। কিন্তু কর্মীরা মনে করেন, এটি কেবলই একটি সংরক্ষণ প্রক্রিয়া। কোনো না কোনোভাবে প্রায় প্রতিটি নর্দার্ন শহরকেই করতে হয়।

কেননা জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ভালুকের খাবারের উৎস কমে গেছে। ফলে নিজেদের বাসস্থানে পর্যাপ্ত খাবার না পেয়ে, খুঁজতে খুঁজতে এরা শহরের দিকে চলে আসে।

ভালুকের আবাসস্থলের খুব কাছাকাছি হওয়ায় ম্যানিটোবা অঞ্চলটিতে এ সমস্যা বেশি।

যদিও আগে উৎপাত থেকে বাঁচতে লোকজন ভালুকগুলোকে গুলি করে মেরে ফেলত। কিন্তু বর্তমান আইন অনুযায়ী কোনো ভালুককে মারা যাবে না। নিয়ম হচ্ছে কোনোভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রাণীগুলোকে তাড়িয়ে দেয়া। আর যেসব ভালুক বেশি সমস্যা করে, যেগুলোকে ভয় দেখিয়েও তাড়ানো যায় না, তাদের জন্যই তৈরি করা হয়েছে এই কারাগার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *