ঢাকা, শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪, ১০:০৬ পূর্বাহ্ন
মাসুদ রানা থেকে যেভাবে সুপারস্টার শাকিব খান
বিনোদন ডেস্ক ::

এখন বাংলাদেশের সিনেমা মানেই যার নাম, ঢাকাই চলচ্চিত্রে একচেটিয়া রাজত্ব করে যাচ্ছেন যিনি, তিনি শাকিব খান রানা। সেই সাধারণ মাসুদ রানা থেকে সুপারস্টার শাকিব খান হয়ে ওঠার পথটা সহজ ছিল না। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আজ শাকিব রাজত্ব করছেন এই চলচ্চিত্র অঙ্গনে।

ভালোবাসা, কঠোর পরিশ্রম আর স্বপ্নকে বাস্তব হতে দেখার জন্য ব্যর্থতার পরও কাজ করে গেছেন। এই মন্ত্রেই তিনি হয়ে উঠেছেন আজকের সুপারস্টার। আজ সুপারস্টার, কিং খান, ঢালিউড কিং-এসব বিশেষণে ডাকতেই বেশি আনন্দ পান ভক্তরা।

‘অনন্ত ভালোবাসা’ সিনেমা দেখে কী কখনো মনে হয়েছিল বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে একদিন রাজত্ব করবে সেই হ্যাংলা-পাতলা ছেলেটি। বর্তমানে সাফল্য ও দর্শকপ্রিয়তার বিচারে এই নায়কের ধারে-কাছেও যেন কেউ নেই।

রানা থেকে শাকিব খান হয়ে উঠার শুরুটা হয়েছিল ১৯৯৯ সালে। পরিচালক আফতাব খান টুলুর হাত ধরে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালেও শাকিব খান অভিনীত মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম চলচ্চিত্র সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘অনন্ত ভালবাসা’। ছবিটি সে সময় খুব একটা সফল না হলেও নায়ক হিসেবে শাকিব সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। অভিনয় জীবনের দ্বিতীয় বছরেই সেই সময়ের শীর্ষ অভিনেত্রী শাবনূরের বিপরীতে ‘গোলাম’ সিনেমায় অভিনয় করে আলোচনায় আসেন তিনি। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।

একে একে দুজন দুজনার, বিষে ভরা নাগিন, শিকারী, স্বপ্নের বাসর, মায়ের জেহাদ, রাঙ্গা মাস্তান, হিংসার পতন, বন্ধু যখন শত্রু’র মতো জনপ্রিয় সিনেমা জমা পড়ে তার ঝুলিতে। তবে এর মাঝে দেখেছেন ব্যর্থতার রূপও। তবু থেমে থাকেনি তার পথচলা।

চিত্রনায়ক মান্নার মৃত্যুর পর চলচ্চিত্র যখন থমকে যাওয়ার উপক্রম, সেখানেই হুট করে জ্বলে উঠেন শাকিব। জ্বলছেন আজও। আজ ঢাকা তো কাল ভারত, মালয়েশিয়া, স্কটল্যান্ড, লন্ডন হয়ে অস্ট্রেলিয়া। অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায়া অপ্রতিদ্বন্দ্বী পথচলা অভিযাত্রী শাকিব খানের।

তবে ২০১৬ সালে যৌথ প্রযোজনার সিনেমা শিকারী দিয়ে পর্দায় এক নতুন শাকিব খানের দেখা মেলে। চারদিকে সাড়া ফেলে তার সেই নতুন রূপ। বাংলাদেশের পাশাপাশি শাকিব ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও হয়ে উঠেন আলোচিত। বলা যায়- তারকা শাকিবের নবজন্ম ছিল সেই বছর। এরপর নবাব, সত্ত্বা এবং বীর সিনেমা দিয়েও হইচই ফেলে দেন শাকিব।

২৪ বছরের কর্মজীবনে শাকিবের ঝুলিতে এসেছে একাধিক পুরস্কার। যার মধ্যে রয়েছে চারটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, আটটি মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার, তিনটি বাচসাস পুরস্কার ও চারটি সিজেএফবি পারফরম্যান্স পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার।

ভালোবাসলেই ঘর বাঁধা যায় না, খোদার পরে মা, আরও ভালোবাসবো তোমায় এবং সত্তা সিনেমার জন্য চারবার শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন তিনি।

শোভা, আমার প্রাণের স্বামী, প্রিয়া আমার প্রিয়া, বলবো কথা বাসর ঘরে, আদরের জামাই, ডন নাম্বার ওয়ান, পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী, রাজনীতি, চালবাজ, ভাইজান এলো রে ইত্যাদি তার উল্লেখযোগ্য সিনেমা। তবে শুধু সিনেমাতে অভিনয়ই নয় চলচ্চিত্র প্রযোজনা, মঞ্চ পরিবেশনা, বিজ্ঞাপনেও রয়েছে তার বিচরণ। এছাড়া ২০১১ সালে মনের জ্বালা চলচ্চিত্রে প্রথমবারে মতো তিনি নেপথ্য সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে গানে কণ্ঠ দেন।

এই সুপারস্টারের জন্ম ১৯৭৯ সালের ২৮ মার্চ গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার রাঘদীতে। বাবা-মায়ের দেওয়া নাম ছিল মাসুদ রানা। বাবা সরকারি কর্মচারী হওয়ায় চাকরির সুবাদে তার শৈশব কৈশোর থেকে বেড়ে ওঠা নারায়ণগঞ্জ জেলায়। আজকের সুপারস্টারের শৈশবের স্বপ্নের গল্পটাও ছিল আপনার আমার মতোই খুব সাধারণ। আট-দশজনের মতোই ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার ইচ্ছা থাকলেও শেষমেশ হয়ে গেলেন অভিনেতা।

ব্যক্তিগত জীবনে শাকিব খান দুই পুত্রের জনক। তবে ভেঙে গেছে তার দাম্পত্য জীবন। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে স্ত্রী চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাসকে ডিভোর্স দিয়েছেন তিনি। এখন আলাদা থাকছেন দ্বিতীয় স্ত্রী বুবলীর সঙ্গেও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *