ঢাকা, শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪, ০১:৩৬ অপরাহ্ন
পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে মিয়ানমারের জান্তা?
উখিয়া নিউজ ডেস্ক :

মিয়ানমারের জান্তা সরকার সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার তিন বছর পর এই মুহূর্তে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক সরকার ক্ষমতা দখলের পর থেকেই উত্তেজনা চলতে থাকলেও এতোটা কোণঠাসা পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীকে এর আগে আর পড়তে হয়নি।

গত অক্টোবরে জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে সামরিক টহল চৌকি, অস্ত্রাগার ও বেশ কিছু শহরের নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে বিদ্রোহীদের হাতে। সবশেষ ঘুমধুম সীমান্তে বিদ্রোহীদের আক্রমণের মুখে মিয়ানমারের শতাধিক সীমান্তরক্ষী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে, যাদের অনেকেই আহত। শুধু বাংলাদেশ নয়, প্রতিবেশি আরও দুটি দেশ চীন ও ভারতেও মিয়ানমারের সেনারা এর আগেও আশ্রয় নিয়েছে।

এ ধরনের জয় বিদ্রোহী অন্য গোষ্ঠীগুলোকেও সামরিক বাহিনীর ওপর আক্রমণে উৎসাহিত করেছে।

ভয়েস অব আমেরিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের বিরোধী সশস্ত্র দলে জাতিগত ২০টি গোষ্ঠীর এক লাখ ৩৫ হাজার সদস্য, ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্টের (এনইউজি) আওতায় পিপলস ডিফেন্স ফোর্সের ৬৫ হাজার সদস্য এবং সিভিল ডিসঅবিডিয়েন্ট মুভমেন্টের অধীনে প্রায় দুই লাখের মতো কর্মী রয়েছে।

এনইউজির আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক উপমন্ত্রী ডেভিড গাম অংয়ের আগে ভয়েস অব আমেরিকাকে বলেন, ‘‘স্বায়ত্বশাসনের জন্য লড়ছে এমন কয়েকটি জাতিগত গোষ্ঠীর সাথে ২০২২ সালে জোট গঠন করেছে এনইউজি। তাদের প্রায় দুই লাখ সেনার একটি বাহিনী রয়েছে যা আরো বাড়তে থাকবে। এটা জেনারেল মিন অং হ্লেইংয়ের বাহিনীকে মোকাবিলা করার জন্য যথেষ্ঠ।’’

অন্য দিকে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীতে প্রায় চার লাখ সেনা রয়েছে বলে মনে করা হয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ইন্সটিটিউট ফর পিসের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির সামরিক বাহিনীতে প্রায় দেড় লাখের মতো সেনা রয়েছে। এর মধ্যে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত বা কমব্যাট রেডি ৭০ হাজার সেনাও অন্তর্ভুক্ত।

মিয়ানমারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে কাজ করা বিশেষজ্ঞদের একটি দল যারা স্পেশাল অ্যাডভাইসরি কাউন্সিল ফর মিয়ানমার নামে পরিচিত। তাদের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির জান্তা সরকারের ‘‘পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ’’ রয়েছে মাত্র ১৭ শতাংশ ভূখণ্ডের ওপর, ২৩ শতাংশ ভূখণ্ড নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে। আর বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর দখলে রয়েছে ৫২ শতাংশের মতো ভূখণ্ড। তবে এ তথ্য নিয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

বিবিসির বার্মিজ সার্ভিসের সহকারী সম্পাদক আয় থু সান বলেছেন, ২০২৩ সালের অক্টোবরে তিনটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর জোট থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের আলোচিত ‘‘অপারেশন ১০২৭’’ শুরুর পর থেকে এখনও পর্যন্ত তারা দেশটির ৩০টি শহরের দখল নিয়েছে।

আর সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী গত তিন বছরে দেশের অনেক স্থানের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। বর্তমানে সামরিক বাহিনী এমন সশস্ত্র প্রতিরোধের মুখে পড়েছে যা এর আগে মিয়ানমারের ইতিহাসে কখনও ঘটেনি। সামরিক বাহিনীর মধ্যেও নজিরবিহীন আত্মসমর্পণের ঘটনা দেখা গেছে। সামরিক বাহিনীর নেতারা সামরিক পরাজয় মানতে বাধ্য হয়েছেন।

মিয়ানমারের থিংকট্যাঙ্ক ইন্সটিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড পলিসির (আইএসপি) চালানো জরিপের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির মোট ভূখণ্ডের ৩৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে সামরিক কাউন্সিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *