ঢাকা, শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪, ০৫:৫০ অপরাহ্ন
কেন পালাচ্ছেন মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা
উখিয়া নিউজ ডেস্ক :

মিয়ানমারে জান্তা বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর ব্যাপক সংঘর্ষ চলছে। সংঘর্ষের মুখে টিকতে না পেরে জান্তা বাহিনীর অনেক সদস্য আত্মসমর্পণ করেছেন, আবার অনেকে পার্শ্ববর্তী দেশে পালিয়ে যাচ্ছেন।

মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে তুমব্রু ঘুমধুম সীমান্তের তিনটি স্থান দিয়ে রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে শুরু করেন মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির সদস্যরা। সোমবার সকাল পর্যন্ত ৯৫ জন প্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছে বিজিবি।

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর যুদ্ধ চলছে কয়েক মাস থেকে। মিয়ানমারের সামরিক জান্তার দখলে থাকা অনেক শহর ও এলাকা বিদ্রোহীরা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে বলেও খবর আসছে।

থাইল্যান্ডে নির্বাসিত মিয়ানমার নাগরিকদের পরিচালিত সংবাদমাধ্যম ‘ইরাবতী’ জানিয়েছে, বাংলাদেশের সীমান্তসংলগ্ন মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির আরেকটি ব্যাটেলিয়ন দখলে নিয়েছে আরাকান আর্মির যোদ্ধারা। আরাকান আর্মির বরাত দিয়ে ইরাবতী জানিয়েছে, গত বুধবার রাখাইন রাজ্যের উপকূলীয় রামরি এলাকায় জান্তা বাহিনীর সঙ্গে তাদের লড়াই হয়। বঙ্গোপসাগরের ওই দ্বীপ শহরে আরাকান আর্মির যোদ্ধারা ঢোকার পর সেখানে জান্তা বাহিনীর অস্ত্র, গোলাবারুদ ও সৈনিকদের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন তারা।

সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, আরাকান আর্মি ১৩ নভেম্বর রাখাইনে ‘অপারেশন ১০২৭’ শুরু করার পর সিতওয়ে-র নিকটবর্তী পাউকতাও শহর এবং চীন প্রদেশের পালেতাওয়া শহরসহ ১৬০টি অবস্থান থেকে মিয়ানমার বাহিনীকে উৎখাত করেছে। এই ধারাবাহিকতায় গত জানুয়ারির শেষ দিকে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাখাইন ও আরাকান রাজ্যেও যুদ্ধ-পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে।

রোববার শেষ রাত থেকে গোলাগুলি শুরু হয় ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার অংশে। ভোররাত থেকে এই পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। কেঁপে ওঠে সীমান্তের বাংলাদেশ অংশও।

ঘুমধুম সীমান্তে বিজিবি ৩৪ ব্যাটেলিয়ানেরর অধিনায়ক আব্দুল্লাহ আল আশরোকি বলেন, আমাদের স্থানীয় বাসিন্দাদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার জন্য স্থান ত্যাগের কথা আগে থেকেই বলা হয়েছে। অন্যান্য প্রয়োজনীয় যেসব ব্যবস্থা রয়েছে, সীমান্ত রক্ষার জন্য তা জোরদার করেছি।

স্থানীয়রা জানান, সীমান্তের ওপারে গোলাগুলি চললেও তা এপাড়ে এসে পড়ছে। এ ঘটনায় রোববার সীমান্তের বাংলাদেশ অংশে একজন গুলিবিদ্ধ ও আরেকজন আহত হয়েছেন। এ অবস্থায় পুরো সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছেন অনেকে।

এদিকে মিয়ানমারের যুদ্ধ পরিস্থিতিতে চীনের কাছে সহযোগিতা চাওয়ার কথা বলছে বাংলাদেশ। গতকাল সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমে বলেন, মিয়ানমারে যে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তার আঁচ বাংলাদেশের সীমান্তে এসে পড়ছে। ফলে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে চীনের সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে। এ বিষয়ে সহযোগিতার জন্য ইতিবাচক সাড়াও দিয়েছে চীন।

সীমান্তে স্কুল বন্ধ, আতঙ্কিত লোকজন

শনিবার রাতে মিয়ানমার থেকে ছোঁড়া একটি মর্টার শেল এসে পড়ে তুমব্রু সীমান্তের কোনারপাড়ার ইউনুছ ওরফে ভুলুর বাড়িতে। বাড়ির টিন ছিদ্র হয়ে মর্টার শেলটি ঘরের ভিতরে এসে পড়ে। তবে সে সময়ে পরিবারের সদস্যরা কেউ বাড়ি না থাকায় হতাহত হননি কেউ। এ অবস্থায় ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্তের কাছে পাঁচটি প্রাথমিক বিদ্যালয় এক দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বন্ধ হওয়া স্কুলগুলো হলো বাইশপারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাজাবনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তুমব্রু পশ্চিমকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রেজু গর্জন বুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এগুলো সোমবারও বন্ধ রাখার কথা জানিয়েছেন বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকারিয়া।

কক্সবাজারের জেলা পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম বলেন, এখানকার পরিস্থিতি উদ্বেগজক। বিজিবি শক্তি জোরদার করেছে। সীমান্ত বরাবর তাদের অবস্থান ধরে রেখেছে যেন কেউ প্রবেশ করতে না পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *