ঢাকা, শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১:৫৮ পূর্বাহ্ন
সুদের টাকার জন্য বিক্রি করা হয় শিশু, চলে নির্যাতন
ডেস্ক রিপোর্ট ::

ইটভাটার শ্রমিক বাবুল গাজী। ৩০০ টাকা মজুরিতে কাজ করেন। ছয় সদস্যের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় বাবুল গাজীকে। পরিবারের এক সদস্যের চিকিৎসার জন্য বাধ্য হয়েই সপ্তাহে এক হাজার টাকা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদে পাঁচ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন বাবুল। সেই ঋণের আসল শোধ হয়ে গেলেও মহাজনের সুদের বোঝা শেষ হয়নি এখনও। উল্টো সুদের টাকা শোধ না করায় মহাজনের আঘাতের চিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছেন বাবুল গাজী।

একই এলাকার পিঠাবিক্রেতা রহিমা বেগম। তিনিও এমন চড়া সুদে ঋণ নিয়েছিলেন। আসলের টাকা শোধ হলেও সুদের টাকা শোধ করতে মহাজনের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করেছেন প্রায় এক বছর। আর রানী বেগম সুদের টাকা শোধ করতে বিক্রি করেছিলেন তার গর্ভের সন্তান।

বাবুল গাজী, রহিমা বেগম ও রানী বেগমের মতো ওই এলাকার কয়েকশ শ্রমিক ও দিনমজুর মহাজনের সুদের ফাঁদে এমনভাবে জড়িয়েছেন যেন মুক্তির কোনো পথ নেই। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য এমন মহাজনী প্রথা এখনও সমাজে রয়েছে এবং আমাদের আশপাশেই। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পাগলা এলাকায় ঋণের টাকার সুদ পরিশোধ করতে সদ্য নবজাতক বিক্রির ঘটনা প্রকাশ পাওয়ার পরই এমন অনেক ঘটনাই সামনে আসছে।

ঘটনার শুরু যেভাবে

নারায়ণগঞ্জের পাগলা আলীগঞ্জ এলাকায় পিডব্লিউডি কলোনির বেশ পরিচিত নাম লাকী বেগম। স্থানীয়দের কাছে যিনি পরিচিত ‘জল্লাদ লাকী’ হিসেবে। তার প্রধান ব্যবসা টাকা ধার দিয়ে সুদ আদায় করা। দুই বছর আগে লাকী বেগমের কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন দিনমজুর রানী আক্তারের স্বামী নির্মাণশ্রমিক হান্নান চৌকিদার। রানী আক্তার নিজেও কাজ করেন একটি ইটভাটায়। ঋণের শর্ত ছিল পাঁচ হাজার টাকায় সপ্তাহে এক হাজার টাকা সুদ দিতে হবে। অর্থাৎ মাসে সুদের পরিমাণ হবে চার হাজার টাকা। আর তাতেই সুদের জালে আটকা পড়েন দরিদ্র দম্পতি।

এক বছরে সুদের টাকা পরিশোধ করা নিয়ে বেশ কয়েকবার মহাজন লাকী বেগম ও তার লোকজনের হাতে মার খেতে হয়েছে হান্নানকে। একপর্যায়ে তিনি এ ঋণের ভয়ে গর্ভবতী স্ত্রী রানীকে রেখেই পালিয়ে যান। স্বামীর ঋণ আর সুদের বোঝা বইতে বইতে সেই আসল পাঁচ হাজারের সুদ এক লাখ ৬০ হাজার টাকা শোধও করেছেন লাকী। কিন্তু মাফ মেলেনি মহাজনের। শেষপর্যন্ত এক বছর আগে রানীর নবজাতককে বিক্রি করে দেন লাকী বেগম। এ শিশু বিক্রির জন্য ক্রেতা ঠিক করা থেকে শুরু করে সব ব্যবস্থা করেছেন মহাজন লাকী বেগম। কিন্তু এক বছর পর সেই সুদের জন্য আবারও চাপ দিতে থাকায় এবার সাহস করে থানায় অভিযোগ করেন রানী। প্রকাশ পায় সুদের টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে নিজের নবজাতক সন্তান বিক্রির বিষয়টি।

পুলিশ সেই অভিযোগ আমলে নিয়ে গত ১৭ এপ্রিল মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর এলাকা থেকে রানীর সেই বিক্রি করে দেওয়া সন্তানকে উদ্ধার করে। গ্রেপ্তার করা হয় সুদের কারবারি লাকী ওরফে জল্লাদ লাকীসহ দুজনকে। এলাকায় গিয়ে বিষয়টি খোঁজ নিলে বেরিয়ে আসে সুদের মহাজনী প্রথার নানা ভয়ংকর চিত্র।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *