ঢাকা, শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৩:৩১ অপরাহ্ন
শীর্ষ জঙ্গিদের জেল থেকে মুক্ত করার পরিকল্পনা করছিলেন তারা
ডেস্ক রিপোর্ট ::

নীলফামারী থেকে আটক হওয়া পাঁচ জঙ্গি ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) দিয়ে বোমা হামলা চালিয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি এবং শীর্ষ জঙ্গিদের জেল থেকে মুক্ত করার পরিকল্পনা করছিল। আজ শনিবার বিকেলে রংপুর সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।

তিনি জানান, গ্রেপ্তার হওয়া জেএমবি সদস্যরা নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডকে ঘিরে নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করছিলেন। তারা জেএমবির সামরিক শাখার সদস্য। সামরিক শাখার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে তারা আইইডি তৈরি ও আইইডি তৈরি করার প্রশিক্ষণ অনুশীলন এবং নাশকতামূলক হামলার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিলেন।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, ২/৩ মাস আগে জেএমবির রংপুর অঞ্চলের সামরিক শাখার প্রধান আহিদুল ইসলাম ওরফে আহিদ ওরফে পলাশের বাড়িতে ইম্প্রভাইজড এক্সপ্লোসিভস ডিভাইস (আইইডি) তৈরি করেছিলেন। বোমা তৈরির সময় রাতে বোমা বিস্ফোরিত হয়ে আহিদুলের বাড়িতে আগুন ধরে যায়। তারা ইন্টারনেটের বিভিন্ন ওয়েব পেজ দেখে কীভাবে বোমা তৈরি করতে হয় এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ লাভ করেন। জেলখানায় অন্তরীন থাকা শীর্ষ জঙ্গিদের জেলখানা থেকে আদালতে নিয়ে যাওয়া-আসার পথে হামলা চালিয়ে মুক্ত করা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং গুরুত্বপূর্ণ ও জনবহুল স্থাপনায় বোমা হামলা চালিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করার লক্ষ্যে তারা এই বোমাগুলো তৈরি করছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃত অনলাইনে রংপুর অঞ্চলের আমিরের নির্দেশনায় বেশ কয়েকদিন ধরে আইইডি তৈরি করে জঙ্গি শরীফের বাড়িতে রাখেন। তারা রংপুর অঞ্চলের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার প্রায় ২০-২৫ জনকে জঙ্গি সংগঠনের অর্ন্তভুক্ত করেন। তাদের মধ্যে রংপুর অঞ্চলের বেশ কয়েকজন শ্রমিক, অটোচালক, টেইলার ইত্যাদি শ্রেণির পেশাজীবীদের জঙ্গিবাদে অর্ন্তভুক্ত হয়েছেন।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, জেএমবির রংপুর অঞ্চলের সামরিক শাখার প্রধান আহিদুল ইসলাম ওরফে আহিদ ওরফে পলাশ একটি খেলা প্রস্তুতকারক কোম্পানির কোয়ালিটি চেকার চাকরির আড়ালে জেএমবির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তিনি নীলফামারী সদরের উত্তর মুশরত কুখাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন তিনি। ২০১৫ সালে তিনি জেএমবিতে যোগ দেন। রংপুর অঞ্চলের আঞ্চলিক নেতা হওয়ার জন্য তিনি বায়াত গ্রহণ করেন এবং রংপুর অঞ্চলে জেএমবির সামরিক শাখার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসা সংক্রান্ত আন্দোলনে জেএমবির কোনো নাশকতা বা দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির পরিকল্পনা ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। তবে তারা কারাগারে আটক জেএমবির শীর্ষ নেতাদের আদালতে নেওয়ার সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা ও বড় কোন ভবনে হামলাসহ দেশকে অস্থিতিশীল করার পরিকল্পনা করেছিল বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে। রংপুর অঞ্চলের আমিরসহ বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।’

সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্য
ম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। 

 

খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তারকৃত অপর জঙ্গি সদস্য নীলফামারী সদরের উত্তর মুশরত কুখাপাড়ার জাহিদুল ইসলাম ওরফে জাহিদ ওরফে জোবায়ের (২৭), পশ্চিম কুচিয়ামোড় পাঠানপাড়া গ্রামের আহিদুলের অন্যতম সহযোগী ওয়াহেদ আলী ওরফে আব্দুর রহমান (৩০), একই উপজেলার দক্ষিণ বালাপাড়ার আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে ডা. সুজা (২৬), সোনারাই কাচারীপাড়ার নূর আমিন ওরফে সবুজ (২৮)। বিভিন্ন শ্রেণিপেশার আড়ালে তারা জঙ্গি কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত।

তিনি বলেন, তারা জেএমবির উত্তরাঞ্চলীয় সামরিক শাখার প্রধান পলাশের মাধ্যমে ২/৩ বছর আগে জেএমবিতে যোগদান করেন। আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে ডা. সুজা একজন গ্রাম্য ডাক্তার এবং তার শিক্ষাগত যোগ্যতা ডিপ্লোমা ইন এমএটিএস। জাহিদুল ইসলাম ওরফে জাহিদ ওরফে জোবায়ের একটি খেলনা তৈরিকারক কোম্পানির সুপারভাইজার এবং তার শিক্ষাগত যোগ্যতা দাখিল। ওয়াহেদ আলী ওরফে আব্দুর রহমান একটি কোম্পানিতে শ্রমিক হিসেবে কর্মরত এবং নূর আমিন ওরফে সবুজ বেসরকারি চাকুরীজীবী এবং তার শিক্ষাগত যোগ্যতা আলীম পর্যন্ত।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ওয়াহেদ আলী বোমা তৈরির প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তার নেতৃত্বে ওই বাড়িতে বোমা তৈরি করা হতো। রংপুর অঞ্চলে তিনি এই কাজ করতেন। বাড়ির মালিক শরিফুলও উগ্রবাদী সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *