ঢাকা, শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১:১৬ পূর্বাহ্ন
রামপুরায় সড়কে শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর ১২ বাসে আগুন, ভাংচুর ৪০ বাস
ডেস্ক রিপোর্ট ::

রাজধানীর রামপুরায় সোমবার রাতে বাসচাপায় এক শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর ক্ষুব্ধ জনতা ১২টি বাসে আগুন দিয়েছে। এ ছাড়া অন্তত ৪০টি বাস ভাঙচুর করা হয়েছে। ক্ষুব্ধ জনতা মধ্যরাত পর্যন্ত সড়কে অবস্থান নিয়ে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাতে রামপুরা বাজার এলাকায় পূবালী ব্যাংকের সামনে দুর্ঘটনায় মো. মাইনুদ্দিন ওরফে মাইনুল নিহত হয়। এ সময় সাদ্দাম হোসেন নামের আরও এক পথচারী আহত হন বলে জানা গেছে।

মাইনুল এবার একরামুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। তার মৃত্যুর খবরে বন্ধু, সহপাঠী ও এলাকাবাসী বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তারা রাস্তা অবরোধ করে বাসে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর শুরু করে। রাত পৌনে ১টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছিল এলাকাবাসী। এতে রামপুরা থেকে মালিবাগ পর্যন্ত দু’পাশে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে আশপাশ এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

পুলিশ বলছে, দুর্ঘটনায় দায়ী অনাবিল পরিবহনের বাসটি জব্দ করা হয়েছে। এর চালক ও হেলপারকেও আটক করা হয়েছে। ঘটনার বিবরণ দিয়ে নিহত মাইনুদ্দিনের সহপাঠী মো. সবুজ জানায়, পরীক্ষা শেষ হওয়ায় তারা উলুন রোডের বাসায় আড্ডা দিচ্ছিল। রাত পৌনে ১১টার দিকে আড্ডা শেষে মাইনুল রাস্তা পার হয়ে ডিআইটি রোডের বাসায় যাচ্ছিল। তখন অনাবিল পরিবহনের বাসটি সে হাত দিয়ে থামানোর চেষ্টা করলেও সেটি তার ওপর উঠিয়ে দেওয়া হয়। এতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার।

প্রত্যক্ষদর্শী হাসিবুল ইসলামসহ কয়েকজন জানান, বাসটি প্রথমে ওই শিক্ষার্থীকে ধাক্কা দেয়। এতে সে পড়ে গেলে সেটি দ্রুত পালাতে গিয়ে তার চাকায় পিষ্ট হয়। এর পর আশপাশের লোকজন ধাওয়া করে বাসটি আটক করে। খবর পেয়ে নিহত ছাত্রের স্বজন, সহপাঠী ও এলাকার লোকজন ছুটে এসে ভাঙচুর শুরু করে। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় ছোপ ছোপ রক্তের দাগ। মগজ গলে মিশে আছে পিচঢালা রাস্তার ওপর। পুলিশ পুরো এলাকাটি ইট দিয়ে ঘিরে রেখেছে। পাশেই পড়ে ছিল মাইনুদ্দিনের লাশ। পুলিশ লাশটি গাড়িতে তুলতে চাইলে ক্ষুব্ধ জনতা বাধা দেয়। তারা একপর্যায়ে লাশ ঘিরে বিক্ষোভ শুরু করে। তখন পুলিশ পিছু হটে। একপর্যায়ে নিহতের বড় ভাই বাদশা মিয়ার সহায়তায় মাইনুদ্দিনের লাশ মর্গে পাঠানো হয়। রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে রাস্তার দু’পাশে ১২টি বাস ভাঙচুর অবস্থায় দেখা যায়। তখনও একটি বাসে আগুন জ্বলছিল। ভাঙা ও পোড়া বাস পুলিশের রেকার দিয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়।

মাইনুদ্দিনের ভাই বাদশা মিয়া বলেন, তার বাবা নেই। ভাইকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল। সেই ভাইকেই মেরে ফেলল! তিনি এর বিচার দাবি করেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার আ. আহাদ সমকালকে বলেন, দায়ী বাসের চালক-হেলপারকে ঘটনার পরপরই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর পরও কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। তৃতীয় পক্ষের কেউ নাশকতা করে থাকতে পারে।

পুলিশের মতিঝিল বিভাগের এডিসি নুরুল আমিন জানান, পুলিশ ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। নিহত ছাত্রের সহপাঠীরাও পুলিশকে সহায়তা করেছে। তবে বাইরের কেউ ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করতে পারে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

ফায়ার সার্ভিসের এক সদস্য জানান, বাসের আগুন নেভাতে লোকজন বাধা দিচ্ছিল। তবে তাদের সরিয়ে আগুন নেভানো হয়। খিলগাঁও ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার হাসান আলী সমকালকে জানান, ১১টা ৮ মিনিটে তিনি বাসে অগ্নিসংযোগের খবর পান। এর পরই তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। ১২টি বাসে অগ্নিসংযোগ করেছিল বিক্ষুব্ধরা। ১২টা ৪০ মিনেটের মধ্যে সব বাসের আগুন নেভানো সম্ভব হয় বলে জানান তিনি।

সম্প্রতি বাস ভাড়া বাড়ানোর পর যাত্রীরা মালিকদের পাশাপাশি চালক ও হেলপারদের ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন। এরই মধ্যে কয়েকটি দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরও ক্ষোভ জমেছে বাস মালিক ও চালকদের ওপর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *