যুক্তরাজ্যের সাবেক মন্ত্রী কাশ্মীরি বংশোদ্ভূত নুসরাত গনি তার দেশে ইসলমাবিদ্বেষের শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, মুসলিম হওয়ায় তাকে মন্ত্রিত্ব হারাতে হয়েছে। তার এই মন্তব্য ঘিরে দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
নুসরাত গনির একটি সাক্ষাৎকার গত শনিবার প্রকাশ হয়েছে সানডে টাইমসে। এতে তিনি এই অভিযোগ করেছেন। গতকাল আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ে। দুর্নীতি, আইনভঙ্গসহ নানা অভিযোগে চাপে থাকা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সরকারের জন্য একে নতুন ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মের মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন এমপি নুসরাত গনি। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে জনসন মন্ত্রিসভা গঠন করার সময় বাদ পড়েন টরি পার্টির এই এমপি।
সানডে টাইমসের কাছে নুসরাত অভিযোগ করেছেন, মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তখন সরকারি দলের একজন হুইপ তাকে বলেছিলেন, ‘মুসলিমদের নিয়ে একটি সমস্যা তৈরি হয়েছে এবং একজন মুসলমান নারী হিসেবে তিনি তার সহকর্মীদের অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন।’
ওয়েলডেন আসনের এমপি নুসরাত বলেন, ‘আমি তখন বিষয়টি নিয়ে কথা বলিনি। কারণ, আমাকে বলা হয়েছিল, যদি এটি নিয়ে আমি জেদ করি এবং বারবার প্রশ্ন করতে থাকি, তাহলে দল থেকে বহিষ্কার হতে পারি এবং আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ও সম্মান ধ্বংস হতে পারে।’
নুসরাতের অভিযোগের তীর যে কনজারভেটিভ চিফ হুইপ মার্ক স্পেন্সারের দিকে, তা হুইপ নিজেই স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘নুসরাতের অভিযোগ আমার দিকেই। তবে তার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। এটি মানহানিকরও।’ তিনি আরও বলেন, ‘নুসরাত যে অভিযোগ করেছেন, আমি কখনোই তেমন কোনো শব্দ উচ্চারণ করিনি।’
নুসরাত ও স্পেন্সারের পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্যে বিষয়টি তদন্তের দাবি উঠেছে। শিক্ষামন্ত্রী নাদিম জাহাবি এক টুইট বার্তায় বলেন, ‘কনজারভেটিভ পার্টিতে ইসলাম নিয়ে বিদ্বেষ বা অন্য কোনো কিছু নিয়ে বিদ্বেষের কোনো স্থান নেই। উত্থাপিত অভিযোগ তদন্ত করতে হবে এবং বর্ণবিদ্বেষের মূলোৎপাটন করতে হবে।’
২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে নুসরাত গনিকে কনজারভেটিভ দলের সহকারী হুইপ এবং পরিবহন মন্ত্রণালয়ের জুনিয়র মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। নুসরাতই প্রথম কোনো মুসলমান নারী মন্ত্রী, যিনি হাউস অব কমন্সের ডেসপ্যাচ বক্স থেকে বক্তব্য দেন।
১৯৭২ সালে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীরে জন্মগ্রহণ করেন নুসরাত। পিতামাতার হাত ধরে ইংল্যান্ডে পাড়ি দেওয়ার পর বার্মিংহামে বেড়ে ওঠা নুসরাত লিডস ইউনিভার্সিটি থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের সাবেক এই সাংবাদিক ইস্ট সাসেক্সের ওয়েলডেন থেকে ২০১৫ ও ২০১৭ সালের সাধারণ নির্বাচনে লড়াই করে জয়ী হন এবং বর্তমানে এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
Leave a Reply