ঢাকা, রবিবার ২১ জুলাই ২০২৪, ১২:৫৩ পূর্বাহ্ন
মিয়ানমার থেকে “ইয়াবার রুটে”আসছে ভয়ঙ্কর মাদক আইস
ডেস্ক রিপোর্ট ::

মিয়ানমার থেকে আসছে ভয়ঙ্কর মাদক আইস। ইয়াবার রুটে আসা এ মাদক ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে। ব্যয়বহুল এই মাদক সেবনে ঝুঁকছে কোটিপতি ঘরের সন্তানেরা। ব্যবহার হচ্ছে অভিজাত পার্টিতে। ইয়াবার চেয়ে ভয়ঙ্কর এই মাদক সেবনকারীরা জেনেশুনে মৃত্যুকে বরণ করে নিচ্ছে। দেশে আইসের বিস্তার বেড়ে যাওয়ায় চিন্তিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইস মাদক হিসেবে ব্যবহার হলেও এর ভয়াবহতা অন্যান্য মাদকের চেয়ে অনেক বেশি। আইসের জালে একবার জড়ালে মৃত্যু ছাড়া সেবনকারী বের হওয়ার আর রাস্তা নাই।

ভয়াবহ এ মাদক রোধে কাজ করছে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা।
মাদক নিয়ে কাজ করেন এমন কর্মকর্তারা বলছেন, ইয়াবায় এমফিটামিন থাকে মাত্র পাঁচ ভাগ। অথচ আইসের পুরোটাই এমফিটামিন। তাই এটি ইয়াবার চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। ফলে এই মাদক সেবনকারীর শরীরে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। বিশ্বব্যাপী বেশকিছু গবেষণায়ও প্রমাণিত হয়েছে আইস একটি ভয়ঙ্কর মাদক। স্বচ্ছ কাঁচের মতো এই মাদক সেবনে নিদ্রাহীনতা, স্মৃতি বিভ্রম, মস্তিষ্কবিকৃতিসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়। দীর্ঘদিন এটি সেবন করলে কিডনি, হৃদযন্ত্রের সমস্যাসহ ওজন হারানো, বিষণ্নতা ও স্ট্রোকের  মতো বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিষণ্নতা বৃদ্ধির কারণে সেবনকারীর মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়তে পারে। সেবনের নয় মাসের মধ্যে সেবনকারীর নার্ভ সিস্টেম নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
সংশ্লিষ্টসূত্রগুলো বলছে, ক্রমেই বাড়ছে আইসের বিস্তার। বিশেষ করে দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবা সেবনকারীরা এখন আইসের প্রতি ঝুঁকছে। যদিও ব্যয়বহুল হওয়াতে সবার পক্ষে এটি সেবন করা সম্ভব হচ্ছে। মহানগর গোয়েন্দা সংস্থা ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা এখন পর্যন্ত আইস সেবন ও বিক্রির দায়ে অনেককে গ্রেপ্তার করেছেন। যাদের অধিকাংশই বিভিন্ন নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এসব ঘটনায় বেশকিছু মামলা হয়েছে ঢাকার বিভিন্ন থানায়। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা আইস সেবন এবং বিক্রি করে এমন কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীকে নজরদারিতে রেখেছে।
সূত্রগুলো বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাড়া ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধারা, ধানমন্ডি এলাকার কিছু পার্টিতে আইস ব্যবহার হয়। পার্টিতে গ্রুপ বেঁধে সবাই আইস সেবন করে। এসব পার্টিতে চাইলেই যে কেউ অংশগ্রহণ করতে পারে না। গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়। দেশে আইসের বিস্তার একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে থাকায় সরকারি সংস্থাগুলো আইস নিয়ে যথেষ্ট তৎপরতা শুরু করতে পারছে না। কারণ মাদকটি ব্যয়বহুল হওয়াতে এর সঙ্গে জড়িতরা খুব সতর্কতার সঙ্গে পাচার, বিক্রি ও সেবন করছে। ইয়াবার মতো যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে না। এতে করে সহজেই এর সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না।

মাদক গবেষকরা বলছেন, যেভাবে আইসের চালান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে ধরা পড়ছে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি চালান দেশে প্রবেশ করছে। দেশে নয়া কিসিমের এই মাদক সেবনকারীর কাছে দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কারণ আইস ইয়াবার চেয়ে বেশি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে শরীরে। তাই অনুমান করা যাচ্ছে খুব তাড়াতাড়ি এটি ইয়াবার জায়গা দখল করবে। দেশে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রথমবারের মতো ধরা পড়ে পাঁচ গ্রাম আইস। আর গত ১৬ই অক্টোবর যাত্রাবাড়ী থেকে প্রায় পাঁচ কেজি আইসসহ হোসেন ওরফে খোকন ও তার সহযোগী রফিককে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। চলতি বছরের জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত আইসের ১৭টি চালান জব্দ করা হয়। পরিমাণে এটি প্রায় ১৯ কেজি। আর নভেম্বর মাসের ১৫দিনে  বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) তিন কেজি আইস জব্দ করেছে। ২৩শে নভেম্বর রাতে টেকনাফ ব্যাটালিয়নের লেদা বিওপি’র আলীখাল সোলার প্রজেক্টের লবণমাঠ এলাকা থেকে এক কেজি ক্রিস্টাল মেথের একটি চালান উদ্ধার করে। এর ৫দিন পর একই ব্যাটালিয়নের দমদমিয়া বিওপি’র জালিয়ারদ্বীপ দক্ষিণ এলাকা থেকে আরেকটি এক কেজি’র চালান উদ্ধার করেছে। এছাড়া ২৯শে নভেম্বর রাতে হ্নীলা বিওপি’র একটি টহল দল আরও ১ কেজি’র চালান উদ্ধার করেছে। এই তিনটি চালানই মিয়ানমার থেকে এসেছে
সূত্রগুলো বলছে, পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার মাদক পাচারের জন্য বাংলাদেশকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করছে। মিয়ানমার থেকে বিভিন্ন কৌশলে আসা বিভিন্ন ধরনের মাদক ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র। যেটি দেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যান্য মাদকের মতো করে দেশে আইস আনা হচ্ছে।  টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে ঢুকে দেশে আসা আইস  মজুত করা হয় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। নাফ নদী ও টেকনাফের  সমুদ্রসীমানার দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্ত দিয়ে মাছ ধরার ট্রলারে করে আসছে আইস। গন্ধ ও নির্দিষ্ট কোনো আকার না থাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আইসের উপস্থিতি সহজেই টের পাচ্ছেন না। কারণ আইস অনেকটা মিছরি বা ফিটকিরির মতো। এছাড়া আইসের চালান এমনভাবে আনা হয় যা দেখে সহজেই অনুমান করা কঠিন। সূত্র বলছে, একসময় আফ্রিকার দেশে আইস তৈরি হতো। বিভিন্ন দেশ ঘুরে বাংলাদেশে আসতো। পরে থাইল্যান্ড থেকেও আসতো। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আসা আইসের সবক’টি চালানই মিয়ানমার থেকে আসছে। মিয়ানমারের কারবারিরা অল্প দামেই বিক্রি করে বাজার ধরার চেষ্টা করছেন।

র‌্যাব’র আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, অন্যান্য মাদকের পাশাপাশি র‌্যাব আইসের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছে। র‌্যাব’র অভিযানে অনেক বড় চালানও ধরা পড়েছে। আমাদের তদন্তে বেশকিছু নাম পাওয়া গেছে। যারা দেশে আইস কেনা-বেচার জন্য বড় সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *