ঢাকা, সোমবার ২২ জুলাই ২০২৪, ১২:৩১ পূর্বাহ্ন
মিয়ানমারের এমপিটি সিমে যোগাযোগ, বন্ধ হচ্ছে না মাদক
ঢাকা পোষ্ট ::

তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষতায় অপরাধ দমনে যেমন উন্নতি ঘটেছে তেমনি অপরাধীদের মধ্যেও বেড়েছে বিকল্প পন্থার ব্যবহার। টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনের মধ্যবর্তী এলাকা হয়ে নৌপথে পাশের দেশ মিয়ানমার থেকে আসছে ইয়াবা। সম্প্রতি চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় আসছে ভয়ঙ্কর মাদক আইসও (ক্রিস্টাল মেথ)। এজন্য মাদক-কারবারিরা ব্যবহার করছেন মিয়ানমারের সিম এমপিটি।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তা ও তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, মিয়ানমার পোস্টস অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশনস (এমপিটি) এর সিম ব্যবহারের কারণে মাদক-কারবারিদের চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানেও রোমিং করে ব্যবহার করা যাচ্ছে এমপিটি সিম। এছাড়া নিজস্ব যানবাহনে করে ডিলার ও গ্রাহকদের বাসায় পৌঁছে যাচ্ছে আইস ও ইয়াবা। কখনও আচার, কাপড়; আবার কখনও চায়ের প্যাকেটের আড়ালে টেকনাফ থেকে আইসের চালান ঢুকছে ঢাকায়।

সম্প্রতি রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে সর্ববৃহৎ পাঁচ কেজি আইসের (ক্রিস্টাল মেথ) চালানসহ টেকনাফকেন্দ্রিক এ সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা মো. হোছেন ওরফে খোকন এবং তার সহযোগী মোহাম্মদ রফিককে আটক করেন র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) সদস্যরা। এ সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় বিদেশি অস্ত্র ও গুলি। পাওয়া যায় মিয়ানমারের সিম এমপিটি।

অন্যদিকে, রাজধানীর উত্তরা ও দক্ষিণখান এলাকায় গত ১৭ ও ১৮ অক্টোবর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ঢাকা মেট্রোর (উত্তর) একাধিক টিম যৌথ অভিযান চালায়। অভিযানে ক্রিস্টাল মেথ (আইস) উদ্ধারসহ জহিরুল ইসলাম সুমন (৪০), নুরুল ইসলাম (৩৩) ও মেজবাহ উদ্দিন ইমন (৩৩) নামের তিন মাদক-কারবারিকে গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধার করা হয় ৫০০ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ (আইস)।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, গ্রেফতার তিনজনই দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবার কারবারে জড়িত। সম্প্রতি তারা আইসের কারবার শুরু করে। মিয়ানমারে তাদের ছিল নিয়মিত যাতায়াত। টেকনাফ সীমান্তে নিজেদের নিরাপত্তায় ব্যবহার করতেন এমপিটি সিম।

এর আগে ঢাকা পোস্টের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে আসে, মিয়ানমারের মংডু সীমান্তসহ আশপাশের প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বসানো হয়েছে মোবাইলের ফ্রিকোয়েন্সি টাওয়ার। এমপিটি নামের একটি টেলিকম প্রতিষ্ঠানের টাওয়ার বসিয়ে বাংলাদেশে রেজিস্টার্ড সিম পাঠাচ্ছে তারা।

ইয়াবাসহ বাংলাদেশের জন্য ‘হুমকি’— এমন সবকিছুর ডিল (লেনদেন) হচ্ছে এমপিটির ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে। মূলত বাংলাদেশের মাদক-কারবারিরা এসব সিম ব্যবহার করছেন। তারা এ সিমের মাধ্যমে মিয়ানমারে থাকা মাদক-কারবারিদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন। এসব ফোনকল কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না বাংলাদেশ সরকার। এছাড়া সীমান্তে টাওয়ার স্থাপনের ফলে খুব সহজেই বাংলাদেশের অনেক তথ্য পেয়ে যাচ্ছে মিয়ানমার।

এমপিটি সিমের ব্যবহার জানে প্রশাসন
মিয়ানমার সীমান্তে এমপিটি সিমের ব্যবহার এখন ‘ওপেন সিক্রেট’। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সব বিভাগ এ সিমের ব্যবহার ও বিক্রির বিষয়ে জানে। সম্প্রতি র‌্যাবের অভিযানে এমপিটি সিম জব্দের আগেও গত বছরের ১৪ জুন কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে অভিযান চালায় পুলিশ। সেখান থেকে ৪০টি এমপিটি সিম জব্দ করা হয়।

এর আগেও বিভিন্ন সময় এমপিটি সিম উদ্ধার করে পুলিশ। তাদের বক্তব্য হলো- চোরাচালানের মাধ্যমে মিয়ানমার থেকে এমপিটি সিম কার্ডগুলো আনা হয়। এগুলো মূলত মাদক-কারবারিরা ব্যবহার করেন।

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে টেকনাফে হ্নীলা ইউনিয়নে র‍্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নুরুল আমিন (৪৩) নামে এক রোহিঙ্গা ডাকাত নিহত হন। ওই ডাকাতের ব্যাগ থেকে র‍্যাব ১১টি এমপিটি সিম উদ্ধার করে। এছাড়া আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন টেকনাফের নয়াপাড়া শরণার্থী ক্যাম্পের এইচ ব্লকে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করে রোহিঙ্গা ডাকাত জিয়াউর রহমানকে। তার কাছেও মেলে এমপিটি সিম।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালে কক্সবাজারের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে অর্ধশতাধিক ডাকাতকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের মধ্যে নয়জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। সেখানে তারা ডাকাতির আগে যোগাযোগের জন্য এমপিটি সিম ব্যবহারের কথা স্বীকার করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *