ঢাকা, শনিবার ২০ জুলাই ২০২৪, ১২:১০ অপরাহ্ন
মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্রে চলত যৌন নির্যাতন
ডেস্ক রিপোর্ট ::

মাদকাসক্তদের পুনর্বাসনের জন্য কেন্দ্র খোলা হলেও সেখানে চলত শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতন। কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের কাছে থেকে হাতিয়ে নেওয়া হতো লাখ লাখ টাকা। কোনো রোগী তাদের অভিভাবকদের কাছে নির্যাতনের অভিযোগ করলে তার ওপর নির্যাতনের মাত্রা আরও বেড়ে যেত। মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্রের মালিক ফিরোজা নাজনীন বাঁধনসহ তার সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও ছিলেন মাদকাসক্ত।

মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত গাজীপুর জেলা শহরের ভুরুলিয়া কালাসিকদারের ঘাট এলাকায় ‘ভাওয়াল মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্র’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানে র‌্যাব ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অভিযানের পর এমন তথ্য বেরিয়ে আসে। এ সময় ওই কেন্দ্র থেকে মাদক উদ্ধার করা হয়েছে।

এ ঘটনায় ওই পুনর্বাসন কেন্দ্রের মালিক ফিরোজা নাজনীন বাঁধনসহ পাঁচজনকে আটক করেছে র‌্যাব। সেখান থেকে ৪২০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটও উদ্ধার করা হয়েছে। মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্রটি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সিলগালা করে দিয়েছে।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বিকেলে ওই কেন্দ্রের সামনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে নগরীর ভাওয়াল মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্র নামে একটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালানো হয়।

তিনি বলেন, যেভাবে পুনর্বাসন কেন্দ্র পরিচালনা, চিকিৎসা ও রোগীদের সেবা দেওয়ার কথা তা সেখানে দেওয়া হতো না। এ কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মানসিক, শারীরিক ও যৌন নির্যাতন করা হতো বলে কেন্দ্রের মালিক ফিরোজা নাজনীন বাঁধনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা। এখান থেকে শারীরিক নির্যাতনের ফুট প্রিন্ট পাওয়া গেছে। বিশেষ করে রোগীদের ঝুলিয়ে পেটানো এবং শারীরিক নির্যাতনের প্রমাণ হিসেবে রশি উদ্ধার করা হয়েছে। বিভিন্ন ধরণের নির্যাতনের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

খন্দকার আল মঈন বলেন, একটি  মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্র পরিচালনার জন্য যে নিয়ম-কানুন আছে তার অধিকাংশই এখানে মানা হতো না। এ কেন্দ্রে নিম্নমানের খাবার সরবরাহসহ ভর্তিকৃত রোগীদের জন্য কোনো চিকিৎসক ছিল না। এ কেন্দ্রে যে পরিমাণ রোগী থাকার কথা তার চেয়ে বেশি রোগী ছিল। ২০০৯ সালে কেন্দ্রটি অনুমোদনহীন ছাড়াই শুরু হয়।  পরে অনুমোদন নেওয়া হয়। পরে মালিক ফিরোজা নাজনীন বাঁধন সকল প্রকার নিয়ম-কানুন না মেনে কেন্দ্রটি পরিচালনা করতে থাকেন।

তিনি বলেন, এ কেন্দ্র চিকিৎসার নামে জোরপূর্বক রোগীদের আটকে রাখা হতো। এমনও রোগী রয়েছেন যিনি তিন বছর ধরে এ কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। রোগীরা কোনো প্রকার অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে তাদের ওপর নির্যাতন করতো মালিকের পালিত কর্মচারীরা। এ রকম ৫-৭ জন রোগী পাওয়া গেছে, যাদের ওপর শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোগী জানান, কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীকে কেন্দ্রের মালিক ফিরোজা নাজনীন বাঁধনের পছন্দ হলে তার ওপর যৌন নির্যাতন চালানো হতো।

অপর এক রোগীর মা জানান, তার ১৬ বছরের একমাত্র ছেলে ৭ মাস ধরে এ কেন্দ্রে অবস্থান করছে। এ জন্য তার কাছে দেড় লাখ টাকা নেওয়া হয়েছে। ছেলে কেন্দ্র ছেড়ে বাড়িতে ফিরতে চাচ্ছে না।

ভাওয়াল মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্রে থাকা ২৮ জন রোগীকে বিকেলে তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রেস ব্রিফিংকালে গাজীপুর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামীম হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *