ঢাকা, শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৯:২৭ অপরাহ্ন
ভাসানচর থেকে কক্সবাজার বেড়াতে এসে আপ্লুত রোহিঙ্গারা
সরওয়ার আজম মানিক,আমাদের সময় ::

নোয়াখালীর ভাসানচরে বসবাস করা রোহিঙ্গাদের কক্সবাজারে উখিয়া ও টেকনাফে ক্যাম্পে থাকা আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দিয়েছে সরকার। প্রথমবারের মতো এ সুযোগ পেয়েছে ৬৫ জনের একটি দল, যারা এক বছর আগেই কক্সবাজার থেকে ভাসানচর গিয়েছিল। ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ পেয়ে তারা বেশ খুশি। এক সপ্তাহ আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সময় কাটিয়ে আবার ফিরে যাবে ভাসানচর। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এই দলটি ঠিকমতো ফিরে গেলে রোহিঙ্গারা আবেদনের মাধ্যমে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে টেকনাফের ক্যাম্পে আসতে পারবেন।

ভাসানচর ক্যাম্পের ইনচার্জ জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার অনুমতি চেয়ে আমাদের কাছে বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা আবেদন করেছিলেন। আবেদনের ভিত্তিতে সরকারের অনুমতিসাপেক্ষে ৬৫ জনের একটি দল কক্সবাজারে রেখে আসা স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে গেছে। তারা সেখানে (কক্সবাজার) আট দিন থাকবে। এরপর ভাসানচরে ফিরে আসবে। দলটি যদি ঠিকভাবে ফিরে আসে, তাহলে এ প্রক্রিয়া চলমান থাকবে।’

জানা যায়, নৌবাহিনীর একটি জাহাজ মঙ্গলবার সকালে এসব রোহিঙ্গাকে ভাসানচর থেকে চট্টগ্রামে নিয়ে যায়। সেখান থেকে দুটি বাসে তাদের ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। এ বিষয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার শামসুদ্দৌজা নয়ন জানান, ভাসানচর থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ৬৫ জনের একটি দল স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে কক্সবাজারের শরণার্থী ক্যাম্পে এসেছে।

২০২০ সালের ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তর শুরু হয়। এ পর্যন্ত সেখানে গেছেন প্রায় ২০ হাজার রোহিঙ্গা। ভাসানচরের এই বাসিন্দারা শুরু থেকেই কক্সবাজারে যাতায়াতের দাবি জানালেও সরকার এতদিন রাজি হয়নি। এর মধ্যে গত ৯ অক্টোবর ভাসানচরে রোহিঙ্গা শিবির দেখভালের দায়িত্বে জাতিসংঘ যুক্ত হওয়ায় আগের অবস্থান থেকে সরে আসে সরকার। এ বিষয়ে অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা নয়ন বলেন, ‘ভাসানচরে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের অনেক স্বজন এখনো কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে রয়েছে। তাদের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার জন্য ভাসানচরে বসবাসকারীরা সরকারের কাছে আবেদন করেছিল। সব দিক বিবেচনা করে তাদের কক্সবাজার ক্যাম্পে থাকা স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কিছু দিন পর রোহিঙ্গারা আবারও ভাসানচরে ফিরবে।’

এদিকে কক্সবাজারে থাকা স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়ার সিদ্ধান্তে আবেগাপ্লুত ভাসানচরের রোহিঙ্গারা। তাদেরই একজন রশিদা বেগম বলেন, ‘এখানে (ভাসানচর) এসে ভেবেছিলাম আর কোনোদিন কক্সবাজারে থাকা স্বজনদের দেখতে পাব না। কিন্তু আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করতে এখান থেকে একটি দল কক্সবাজার গেছে। এটি সরকারের ভালো উদ্যোগ। আমিও যাওয়ার সুযোগ চেয়ে আবেদন করেছি। আশা করি এ দলটি ফিরলে আমরাও যাওয়ার সুযোগ পাব।’ কক্সবাজারের কুতুপালংয়ের লম্বাশিয়া ক্যাম্পে স্বজনদের কাছে ভাসানচর থেকে বেড়াতে আসা আবদুর রহিম বলেন, ‘এক বছর পর স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে পেরে অনেক ভালো লাগছে। বাংলাদেশ সরকার আমাদের যে সুযোগ দিয়েছে, সেটাকে আমরা ভালোভাবে ব্যবহার করব।’ ভাসানচর থেকে আসা রোহিঙ্গা নারী আয়েশা বেগম বলেন, ‘স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে পেরে মনে হচ্ছে ঈদের আনন্দ উপভোগ করছি। ভাসানচরে অনেক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। সেগুলো সম্পর্কে ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গাদের জানিয়েছি। আমরা নির্ধারিত সময়ে আবার ভাসানচরে চলে যাব।’

স্বজনদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দেখে অনেকে ভাসানচরে যেতে উৎসাহিত হয়ে উঠছেন বলে জানান উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘অনেক রোহিঙ্গা যাতায়াতের সুযোগ না থাকায় ভাসানচরে যেতে চান না। কিন্তু নতুন করে এ সুযোগ দেওয়ায়, অনেকেই ভাসানচরে যেতে আগ্রহী হবেন।’

বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা টেকনাফ ও উখিয়ায় শরণার্থী শিবিরগুলোতে বসবাস করছেন। তাদের বেশিরভাগই ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নৃশংস অভিযানের সময়ে পালিয়ে এসেছিলেন। শরণার্থীদের চাপ কমাতে দুই বছর আগে অন্তত এক লাখ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর হাতিয়ার কাছে মেঘনা মোহনার দ্বীপ ভাসানচরে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এরই মধ্যে ২০ হাজার রোহিঙ্গাকে স্থানান্তর করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *