ঢাকা, শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৫:১৪ অপরাহ্ন
প্রকল্পের ঘর নিয়ে অন্যদের কাছে বিক্রি
ডেস্ক রিপোর্ট ::

নীলফামারীর সৈয়দপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নিয়ে নিজে না থেকে ঘরগুলো অন্যদের কাছে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। আবার ভাড়া দিয়েও টাকা উঠাচ্ছেন অনেক সামর্থ্যবান। এ ছাড়া প্রয়োজন না থাকলেও ঘর বরাদ্দ নিয়ে না থাকায় পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে ঘরগুলো।

সরেজমিন সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের খোর্দ্দ বোতলাগাড়ী আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পে গিয়ে কয়েকটি ঘরের এমনই বেহাল অবস্থা লক্ষ্য করা গেছে।

গত ২০১৭ সালে বোতলাগাড়ী উইনিয়নে খোর্দ্দ বোতলাগাড়ী আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের মাধ্যমে বরাদ্দপ্রাপ্ত এই প্রকল্পে সুবিধাভোগীদের জন্য নির্মাণ করা হয় ১০৯টি আধাপাকা ও টিনশেড বাড়ি। ওই বছরই ইউনিয়নের ভূমিহীন ও দুস্থদের মাঝে ঘরগুলো বরাদ্দ দেয় স্থানীয় প্রশাসন।

অভিযোগে জানা যায়, আশ্রয়ণের ২১নং বাড়িটি বরাদ্দ পেয়েছিলেন ২নং ওয়ার্ডের স্থায়ী বাসিন্দা হোসনে আরা ঢেপো নামের পঞ্চাশোর্ধ নারী। তবে তিনি সচ্ছল ও নিজস্ব জমি-বসতবাড়ি থাকায় আশ্রয়ণের বাড়িটিতে কখনও থাকেননি। বরাদ্দের দিন থেকে এটি পরিত্যক্ত থাকায় এর বিভিন্ন অংশে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে চলছে শেয়াল-কুকুরের নির্বিঘ্ন বসবাস।

আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আরও কয়েকটি বাড়ির অবস্থা প্রায় একই।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বাসিন্দা অভিযোগ করেন, বড় পরিবার নিয়ে আশ্রয়ণের বাড়িতে আমরা কষ্ট করে বসবাস করছি। অথচ বরাদ্দ পাওয়ার পর থেকে কেউ-কেউ একদিনের জন্যও বাড়ির তালা খুলেননি। ফলে দীর্ঘদিন বাড়িগুলো পরিত্যক্ত থেকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সূত্র জানায়, কেউ-কেউ নিজের নামে বরাদ্দ বাসা অন্যকে ভাড়া দিয়েছে আবার বিক্রিও করেছেন।
আশ্রয়ণের বাড়িতে যারা থাকেন না, যারা বাড়ি ভাড়া দিয়েছেন বা বিক্রি করেছেন, তাদের একটি তালিকা এই প্রতিনিধির হাতে এসেছে।

সে তালিকা অনুযায়ী বাড়ি বিক্রি করেছেন নূর ইসলাম, বাসা নং-৭/৩, আকলিমা বাসা নং-১২/০৫, জাহিদুল ইসলাম বাসা নং-৩/৫, খলিল বাসা নং-৯/২।

আবার যাদের বিরুদ্ধে বাড়িতে না থাকার অভিযোগ রয়েছে তারা হলেন— হোসনে আরা ঢেপো, বাসা নং-২১ (টিনশেড), নাসিমা বেগম বাসা নং-১/৫, বাবু বাসা নং-৮/৩, বুলবুল বাসা নং-১৫/২, আব্বাস আলী বাসা নং-১১/০১, ছকিনা বেগম বাসা নং-১১/৪, আছিউল বাসা নং-৬( টিনশেড), হাকিম বাসা নং-৭ (টিনসেড), সেকেন্দার আলী বাসা নং ১৯ (টিনশেড) ও মঞ্জু আরা বাসা নং-২৩ (টিনশেড) ভাড়া দিয়েছে।

এ ব্যাপারে স্থানীয় ভূমিহীন পরিবারগুলো সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। উল্লেখ্য, ওই ইউনিয়নে এখনও শতাধিক ভূমিহীন পরিবার বাড়ি না পেয়ে বিভিন্নজনের জমিতে ঘর তুলে বা অন্যের বড়িতে আশ্রিত হিসাবে বসবাস করছেন।

আশ্রয়ণের বাসিন্দা ছরদ্দি মামুদ বলেন, যারা আশ্রয়ণের ঘর বরাদ্দ নিয়ে বসবাস না করে তালা দিয়ে রেখেছেন অথবা ভাড়ায় দিয়েছেন বা বিক্রি করেছেন সেগুলোর বরাদ্দ বাতিল করে প্রকৃত ভূমিহীন ও অসচ্ছলদের নামে বরাদ্দ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

জানতে চাইলে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদুল হাসান বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ নিয়ে না থাকা অথবা ভাড়া দেওয়া বা বিক্রি করার কোনো সুযোগ নেই। যদি কেউ এমনটি করে থাকে তবে অবশ্যই তদন্তসাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *