ঢাকা, শুক্রবার ২৬ জুলাই ২০২৪, ০১:৫৫ অপরাহ্ন
‘পলাতক আসামিদের’ নিয়ে জন্মদিনের কেক কেটে প্রত্যাহার চকরিয়ার ওসি
সায়ীদ আলমগীর কক্সবাজার ::

হত্যাচেষ্টা মামলার পলাতক আসামিদের নিয়ে জন্মদিনের কেক কাটার ঘটনায় চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ওসমান গণিকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) কক্সবাজার পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে তাকে প্রত্যাহার করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. রফিকুল ইসলাম।

আদালত ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ছাত্রলীগের আধিপত্য বিস্তার ও পূর্বশত্রুতার জেরে ২০১৯ সালের ২৯ এপ্রিল রাতে অস্ত্রধারী একদল তরুণ চকরিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সদস্য তারেকুল ইসলামকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেন এবং তার মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেন। এ ঘটনায় তারেকুলের ছোট ভাই তানজীমুল ইসলাম বাদী হয়ে চকরিয়া থানায় উপজেলা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সাবেক সাধারণ সম্পাদক আরহান মাহমুদ রুবেলকে প্রধান আসামি করে ১০ জনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার মামলা করেন। কয়েক মাস আগে আদালতে ওই মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন।

এদিকে, পুলিশ দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে, গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত পলাতক আসামি আরহান মাহমুদ রুবেলসহ অন্যরা আত্মগোপনে। তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ পলাতক আসামিদের নিয়ে স্বয়ং ওসি থানায় কেক কেটে জন্মদিন পালন করেন। এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়।

জানা গেছে, গত ২ মার্চ বিকেলে হত্যাচেষ্টা মামলার ১ নম্বর পলাতক আসামি আরহান মাহমুদ রুবেল, ৬ নম্বর আসামি মো. আলিফসহ ছাত্রলীগের ১৪ জন তরুণ কেক নিয়ে ওসির কক্ষে প্রবেশ করেন। এরপর কেক কেটে ওসির জন্মদিন পালন করা হয়। ওসিকে কেক খাইয়ে দেন আসামিরা। ওসিও তাদের নিজ হাতে কেক খাইয়ে দেন।

ওই দিন সন্ধ্যা ৭টা ৫৯ মিনিটে আরহান মাহমুদ রুবেল নিজের ফেসবুক আইডি থেকে ওসিকে ট্যাগ দিয়ে একটি পোস্ট দেন। পোস্টে তিনি (আরহান) লেখেন, ছোট্ট আয়োজনে সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে (ওসি ওসমান)। আজকের এই শুভ জন্মদিনে চকরিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা রইলো, প্রিয় ভাই।

অন্য আসামি মো. আলিফও তার ফেসবুক আইডি থেকে ওসির জন্মদিন পালন নিয়ে পোস্ট দেন।

আরহান মাহমুদের করা ফেসবুক পোস্টের ছবিতে দেখা গেছে, ওসি ওসমান গণি মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছেন। তার বাঁয়ে কালো কোট পরা আরহান, আলিফসহ কয়েকজন ওসির মুখে জন্মদিনের কেক তুলে দিচ্ছেন। ওসিও আরহানকে কেক খাইয়ে দেন। এরপর আরহানের সঙ্গে যাওয়া তরুণদের নিয়ে ওসি ফটোসেশন করেন।

ওই হত্যাচেষ্টা মামলার বাদী তানজীমুল ইসলাম বলেন, আসামিরা গ্রেফতার হচ্ছেন না কেন প্রশ্ন করা হলে পুলিশ বলতো, তারা পলাতক। ওসির সঙ্গে তাদের (আসামিদের) কেক কাটার ছবিই বলে দেয়, তারা কেমন পলাতক ছিলেন। ওসির জন্মদিন পালন নিয়ে আমার বলার কিছু নেই, কিন্তু দেশের নিরীহ নাগরিক হিসেবে আমরা ন্যায়বিচার চাই।

বিষয়টি নিয়ে ওসি ওসমান গণির বক্তব্য জানতে বৃহস্পতিবার বিকেলে তার সরকারি মুঠোফোন নম্বরে কল করা হয়। কিন্তু ফোন ধরেন থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. জুয়েল ইসলাম। তিনি বলেন, ওসিকে (ওসমান গণিকে) প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইন্সে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

এদিকে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছাত্রলীগের একাধিক কর্মী জানান, নানা কারণে চকরিয়া ছাত্রলীগে দুটি পক্ষ মাঠে বিরাজমান। একটি পক্ষ সুযোগ পেলে অন্য পক্ষকে ঘায়েল করতে পিছপা হয় না। আসামি হওয়া ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে ওসির জন্মদিনের কেক কাটার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পেয়ে দ্রুত সমালোচনার ঝড় তোলেন অন্যপক্ষ। যদিও উপজেলার শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান হিসেবে ওসির কাণ্ডটি সমর্থন যোগ্য ছিল না।

জানতে চাইলে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ফেসবুকে অনেকে অনেক ধরনের ছবি পোস্ট করেন। কোনটা কী সেটা পরখ করার সুযোগ হয় না। কিন্তু যদি কেউ কোনো বিষয় নজরে দেন তখন তা নিয়ে মাথা ঘামানো হয়। চকরিয়ার ওসির বিষয়টিও তেমন একটি। বিষয়টি নজরে আসার পর গোয়েন্দা তথ্যে অভিযোগের সত্যতা পেয়েই পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে চকরিয়ার ওসিকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, হতাশ হওয়ার কিছু নেই। নিয়ম মতোই আসামি গ্রেফতারে মাঠে কাজ করছে চকরিয়ার পুলিশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *