ঢাকা, বুধবার ২৪ জুলাই ২০২৪, ০৩:০২ অপরাহ্ন
পর্যটন মৌসুমেও কক্সবাজারে অধিকাংশ হোটেল-মোটেল খালি
ডেস্ক রিপোর্ট ::

পর্যটন রাজধানী কক্সবাজারে পর্যটন ব্যবসায় চরম মন্দা বিরাজ করছে। পর্যটক না আসায় হোটেল-মোটেল ও পর্যটন-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে এই মন্দা বিরাজ করছে। বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে প্রতিবছর এই সময়ে লাখো পর্যটকের ভিড় দেখা যায়।

কিন্তু এবার তাদের সংখ্যা আশানুরূপ ছিল না। এই অবস্থার জন্য দুটি বিষয়কে সামনে এনেছেন পর্যটন-সংশ্লিষ্টরা। এর একটি খাবারের দাম নিয়ে অপপ্রচার ও এক নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ। জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছেন, ‘বিচ্ছিন্ন’ কিছু ঘটনায় তারা কিছুটা বিব্রত।

তবে পর্যটকবান্ধব কক্সবাজার গড়তে তারা কাজ করে যাচ্ছেন। শহরের কলাতলী, সুগন্ধা বা লাবণীতে রয়েছে ৫১৬টি হোটেল-মোটেল ও রিসোর্ট। এদেরই একটি হোটেল প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট।

প্রেসিডেন্ট রিসোর্টের মহাব্যবস্থাপক কফিল  বলেন, প্রতিবছর এই সময়ে পর্যটক ভরপুর ছিল। কিন্তু এই বছর তেমন পর্যটক নেই।  এবারও আমরা তেমন আশা করেছিলাম। কিন্তু পর্যটক সমাগমের প্রবণতায় কম দেখছি। আপনারা জানেন কক্সবাজারে কিছু বিছিন্ন ঘটনার কারণে অনেক পর্যটক ভ্রমণ সংক্ষিপ্ত করেছিল। তবে রুম বুকিং একদম কম।

কক্সবাজারের কলাতলীর হোটেল কক্স-ভিউ রিসোর্টের জেনারেল ম্যানেজার মো. শফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত সোমবার  হোটেলের ৬০টি কক্ষের মধ্যে মাত্র ২০টি কক্ষ বুকিং ছিল। আজ (বুধবার) তারা চলে যাবে। অথচ অন্যান্য বছর এই সময়ে কোনো কক্ষই ফাঁকা থাকে না।

তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি ধর্ষণের ঘটনাটি দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়েছে। যার জন্য কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এমন অবস্থা কোনো সময় হয়নি।

কলাতলীর হোটেল সি উত্তরার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. ওসমান গনি ঢাকা পোস্টকে  বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারের চিত্র ভিন্ন। পুরো কক্সবাজারের কোনো হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউসে তেমন পর্যটক নেই। করোনাকালের মন্দা কাটিয়ে আমরা মনে করছিলাম, পর্যটনে কিছুটা সুদিন আসবে।

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার ঢাকা পোস্টকে  বলেন, বাস্তবে কক্সবাজারে পর্যটকদের নিরাপত্তাজনিত কোনো সমস্যা নেই। সম্প্রতি যেটি ঘটেছে এটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আমরা এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি খাবারের দাম বেশি নেওয়া এবং ধর্ষণ এ দুটি ঘটনায় কক্সবাজারের বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে গেছে। হোটেল আমিন ইন্টারন্যাশনাল মালিক মুন্না জানান, প্রতিবছর এই সময়ে সব রুম বুকিং হয়ে যায় কিন্তু এবার তেমন বুকিং হয়নি। একেবারে ফাঁকা বললে চলে।

ঝিনুক ব্যবসায়ী ইমন বলেন, প্রতিবছর নতুন বছরের শুরুতে কক্সবাজার লাখো পর্যটকের সমাগম হয় এবার পর্যটক নেই বললে চলে। এই সময়ে আমাদের ব্যবসা চাঙা ছিল, এ বছর বেচাকেনা নেই তেমন। যে সুগন্ধা পয়েন্ট পা রাখার জায়গায়ও থাকতো না সে সুগন্ধা পয়েন্ট এখন পর্যটক নেই বললে চলে। এটার জন্য তিনি নারী পর্যটকের ধর্ষণের ঘটনাকে দায়ী করেন।

কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আনোয়ার কামাল জানান, এ বছর পর্যটক ব্যবসায় যেমনটা আশা করেছিলাম তেমনটি হয়নি। পর্যটক ব্যবসায়ীরা অনেক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

হোটেল ডিওশানিয়ার ব্যবস্থাপক আজিজ জানান, অধিকাংশ হোটেলের রুম খালি পড়ে আছে। ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত কক্সবাজার হোটেল-রিসোর্টগুলোর বাণিজ্যিক মৌসুম। অথচ পর্যটক খুব কম।

গ্রিন ভিউ রির্সোট মালিক জানান, প্রতিবছরের এ সময়টাতে আমাদের অনেক ব্যস্ততা থাকে। কিন্তু চলতি বছরের প্রায় প্রত্যেকটি মাসেই আমাদের লোকসান গুনতে হয়েছে। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে আমাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিতে হবে।

তবে পরিস্থিতি ঠিক থাকলে জানুয়ারির শেষের দিকে প্রচুর পর্যটক সমাগম হবে বলে আশাবাদী পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুখিন খান ঢাকা পোস্টকে  বলেন, এখন ব্যাবসায়ীরা কঠিন সময় পার করছেন তবে আমরা আশা করছি চলতি সপ্তাহে পর্যটক সংখ্যা বাড়বে।

পর্যটকদের নির্বিঘ্ন চলাফেরা নিশ্চিত করতে আগাম নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়েছে সৈকতে দায়িত্বরত ট্যুরিস্ট পুলিশ। কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন উদ্দিন বলেন, কক্সবাজারে পর্যটকদের নিরাপত্তায় টুরিস্ট পুলিশ সবসময় কাজ করে যাচ্ছে। আমরা সবসময় মাঠে রয়েছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *