ঢাকা, সোমবার ২২ জুলাই ২০২৪, ১১:৫৬ অপরাহ্ন
পর্যটকদের নিয়ে ‘গলা কাটা বাণিজ্যের ” সুযোগ আর দেওয়া হবে না !
নিজস্ব প্রতিবেদক ::

গত সপ্তাহের তিন দিনের ছুটিতে লাখো পর্যটকের ভিড়ের সুযোগে কক্সবাজারের অসাধু কতিপয় পর্যটন ব্যবসায়ীর ‘গলা কাটা ব্যবসার’ কারণে পর্যটক হয়রানিসহ দেশের প্রধান পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজারের ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ায় নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। এখন থেকে পর্যটন ব্যবসায় কঠোর প্রশাসনিক নজরদারির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সিদ্ধান্ত হয়েছে, আর কোনো হোটেল-মোটেলের রুম দালালদের কাছে অগ্রিম ভাড়া দেওয়া যাবে না। দালালরা হোটেল-মোটেলের রুম নিয়ে ৮/১০ হাজার টাকা ভাড়া আদায় করে কক্সবাজারের বারটা বাজানোর দিন এবার শেষ হযে গেছে। পর্যটন ব্যবসায় মধ্যস্বত্বভোগীদেরও ‘গলা কাটা’ ব্যবসার আর কোনো সুযোগ নেই। কক্সবাজার সৈকতে ভ্রমণে আসা পর্যটকদের নিয়ে কোনো ছিনিমিনি খেলাও খেলতে দেওয়া হবে না।
কক্সবাজারে আগত পর্যটকদের সুযোগ সুবিধাদি বৃদ্ধিকল্পে সোমবার জেলা প্রশাসনের আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এমনই সিদ্ধান্ত হয়েছে। জেলা প্রশাসনের শহীদ এটিএম জাফর আলম সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ।

সভায় জেলা প্রশাসক সতর্কতা উচ্চারণ করে বলেন, কক্সবাজার বাংলাদেশের প্রধান পর্যটন কেন্দ্র। এখানে অসৎ পর্যটন ব্যবসায়ীদের কোনোভাবেই স্থান দেওয়া যাবে না। পর্যটকদের সেবামূলক মনোভাব নিয়েই ব্যবসা করতে হবে। যারা দেশের প্রধান পর্যটন কেন্দ্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার মতো ব্যবসার নামে পর্যটন হয়রানির কাজে জড়িত হবেন তাদের আইনের আওতায় আনতেও প্রশাসন কোনোভাবেই পিছপা হবে না।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আমিন আল পারভেজ ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় জেলা প্রশাসক বলেন, হোটেল-মোটেলের রুম আগাম ভাড়া নিয়ে ফেলে এক শ্রেণির মৌসুমি দালাল কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির সুযোগ নিয়ে কয়েকগুণ বেশি টাকায় রুম ভাড়া দেওয়ার তথ্য রয়েছে। তাই এখন থেকে কোনো হোটেল-মোটেল দালালদের কাছে রুম ভাড়া দিতে পারবে না। রুমের ভাড়া অতিরিক্ত আদায় করা হলে তার যথারীতি হোটেল মালিককেই দায় নিতে হবে। কোনোভাবেই হোটেল মালিক দায় এড়াতে পারবেন না।
সভায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এবং কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান, কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ, পরিবহন মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ, রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ, ট্যুর অপারেটর সমিতির নেতৃবৃন্দ ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সভায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা বলেন- ‘আমি দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভার কারণে রাজধানী ঢাকায় অবস্থানকালীন সময়েই গত সপ্তাহে কক্সবাজারে ‘৪০০ টাকার ডাল-ভাত’ বিষয়ক বিতর্কিত আলোচনা-সমালোচনা নিয়ে আমিও বেশ বিব্রত ছিলাম। কেননা আমি কক্সবাজারের বাসিন্দা হওয়ার কারণে কেন্দ্রীয় দলীয় নেতৃবৃন্দ বিষয়টি নিয়ে আমার কাছেই বার বার জানতে চেয়েছিলেন।

তিনি বলেন, এ ধরনের একটি অনাকাঙ্ক্ষিত অবস্থা আমাকে পীড়া দিয়েছে এবং এজন্য আমি লজ্জিতও হয়েছি। কেননা বিষয়টি সত্য হোক বা মিথ্যা হোক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে। অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা বলেন, পর্যটন কেবলমাত্র টাকা আয়ের উৎস হতে পারে না। পর্যটন মানে পর্যটকদের সেবার বিনিময়ে আয়-রোজগার হতে পারে। আমরা যেহেতু পর্যটন এলাকার বাসিন্দা আমাদের ব্রত হওয়া দরকার আগে সেবার মাধ্যমে পর্যটকদের কক্সবাজারমুখি করা।
সভায় জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মেয়র মুজিবুর রহমান, কক্সবাজার প্রেস ক্লাবের সভাপতি মোহাম্মদ আবু তাহের, কক্সবাজার চেম্বারের সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক তোফায়েল আহমদ ও ফজলুল কাদের চৌধুরী, রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি নঈমুল হক চৌধুরী টুটুল, পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি রফিকুল হুদা চৌধুরী, হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার, টুয়াকের রেজাউল করিম, সেলিম নেওয়াজ, কলিমুল্লাহ প্রমুখ বক্তৃতা করেন।

সভায় জানানো হয়, ডাল-ভাত ৪০০ টাকা বলে যা হয়েছে তা স্রেফ অপপ্রচার মাত্র। বাস্তবে ‘ডাল-মাখনী’ নামের একটি খাবারের মেন্যু রয়েছে, যা দিয়ে তিনজন লোক অনায়াসেই খেতে পারেন। সেটিকে স্রেফ ডাল-ভাত ৪০০ টাকা করে অপপ্রচার পেয়েছে। বক্তারা সংবাদকর্মীদেরও এ বিষয়ে আরো সতর্কতার মাধ্যমে সংবাদ পরিবেশনের আহবান জানিয়েছেন।

সভায় জেলা প্রশাসক ঘোষণা করেন যে, এখন থেকে কলাতলি মোড়ে পর্যটন বিষয়ক একটি তথ্য কেন্দ্র খুলে তথ্য প্রদানের কথা জানান। তিনি জানান, হোটেল-মোটেল তথা পর্যটন ব্যবসায় মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য থামানোর ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। স্বীকৃত ট্যুর অপারেটর ছাড়া অন্য কেউ পর্যটন ব্যবসায় সুযোগ পাবে না। মোবাইল টিম এখন থেকে সক্রিয় থাকবে। গাড়ি পার্কিংয়েরও ব্যবস্থা করা হবে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়টি তদারক করতে ভিজিলেন্স টিম গঠন করা হবে। আগামী এক মাসের মধ্যে সকল আবাসিক হোটেলগুলোকে অনলাইন ভিত্তিক ব্যবসার আওতায় আনা হবে। সর্বশেষে ঢাকা-কক্সবাজার বিমান ভাড়া সীমিতকরণ করা এবং সেন্ট মার্টিনের পর্যটক জাহাজের ভাড়া নির্ধারণেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *