কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীকে জেতাতে ‘প্রয়োজনে একে-৪৭ ব্যবহার করা হবে’ বলে হুমকি দিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জামিনে থাকা হত্যা মামলায় অভিযুক্ত আসামি আব্দুল্লাহ আল মামুন।
প্রত্যক্ষদর্শী শ্রোতা ও স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীরা জানান, প্রকাশ্যে জনসভায় মাইকে বক্তব্য দিতে গিয়ে ওই নেতা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থী ব্যতীত অন্য কোনো চেয়ারম্যানের ভোট হবে না। নৌকা মার্কার ভোট হবে ওপেন টেবিলে। অন্য চেয়ারম্যান প্রার্থীদের এজেন্টদের বের করে দেব। ওই দিন আমরা শুধু আমাদের হুমাইপুরের জনগণের শক্তি নিয়ে আসব না, আমরা শুধু একে-৪৭ নয়, প্রয়োজনে যা যা দরকার, তা নিয়ে আমাদের প্রার্থীকে পাস করাতে আসব।’
আব্দুল্লাহ আল মামুনের ৭ মিনিট ৯ সেকেন্ডের ভিডিওটি ঢাকা পোস্টের কাছে সংগৃহীত আছে। মোবাইলে ধারণ করা ভিডিওটিতে তিনি এ ধরনের হুমকি প্রদান করেন।
বাজিতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন এ সময় আরও বলেন, ‘প্রশাসন আমাদের, পুলিশ আমাদের, সরকার আমাদের। আর কিছু বলার দরকার আছে?’
আওয়ামী লীগ নেতার এমন ভয়ংকর ও বিস্ফোরক বক্তব্যের পর ওই ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ও সাধারণ ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
স্থানীয় সূত্রমতে, শুক্রবার (৫ নভেম্বর) বিকেলে বাজিতপুর উপজেলার হুমাইপুর ইউনিয়নের টান গোসাইপুর গ্রামের ‘হুমাইপুর ইসলামিয়া আরাবিয়া মাদরাসা’র মাঠে আয়োজিত আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী রফিকুল ইসলাম ধনু মিয়ার সমর্থনে সভায় অন্য চেয়ারম্যান প্রার্থী ও ভোটারদের উদ্দেশে তিনি প্রকাশ্যে হুমকি প্রদান করেন। আগের দিন বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে হুমাইপুরের চৈতনপুর ও নামা গোসাইপুর গ্রাম এলাকার অজ্ঞাতপরিচয়ের দুর্বৃত্ত কর্তৃক রাস্তায় ঝোলানো দলীয় প্রতীক নৌকা পুড়িয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে এ নির্বাচনী সভা অনুষ্ঠিত হয়।
হুমাইপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. মো. আরিফুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সময় আর ছিলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী রফিকুল ইসলাম ধনু মিয়া, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কবির হোসেন, বাজিতপুর পৌর আওয়ামী লীগ নেতা শওকত আকবর, সাবেক চেয়ারম্যান শফিউল হক, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি নাজমুল হোসাইন প্রমুখ বক্তব্য দেন।
এ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল্লাহ আল মামুন হুমকিপূর্ণ বক্তব্য দিতে গিয়ে মেম্বার প্রার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা এজেন্টদের বলে দেবেন, নৌকার ভোট কাইত্যার তলে (পাটির আড়ালে) হবে না, নৌকার ভোট হবে সবার সামনে। কোনো মেম্বার প্রার্থীর এজেন্ট বিরোধিতা করলে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে তাদের বের করে দেব।’
একইভাবে বাজিতপুর উপজেলার সরারচর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের নির্বাচনী সভায় অংশ নিয়ে ভোটার ও অন্য স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীদের উদ্দেশে তিনি হুমকি প্রদান করেন। বলেন, ‘নৌকার ভোট প্রকাশ্যে দিতে হবে, গোপনে নয়। নির্বাচনের তিন দিন আগে থেকে এমন পরিস্থিতি করা হবে যে এসব চেয়ারম্যান প্রার্থী এলাকায় ভোট চাইতে বের হতে পারবে না।’
এ বক্তব্যের ব্যাপারে জানতে বাজিতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুনের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার চেষ্টা করেও মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তার বক্ত্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
পিবিআই কিশোরগঞ্জ পুলিশ সুপার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বাজিতপুর পৌর শহরের বহুল আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর ব্যবসায়ী উমর চান ওরফে সাচ্চু হত্যাকাণ্ডের তদন্ত শেষে পিবিআই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে। ওই অভিযোগপত্রে হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা আসামি হিসেবে আব্দুল্লাহ আল মামুনের নাম রয়েছে। এ মামলায় পিবিআই গত বছরের ১১ নভেম্বর মামুনকে গ্রেফতার করার পর তিনি প্রায় চার মাস হাজত খেটে জামিনে মুক্ত রয়েছেন।
উল্লেখ্য, আগামী ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে বাজিতপুর উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তিনটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন।
Leave a Reply