ঢাকা, শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১:২৯ পূর্বাহ্ন
নিজ খরচে ৬১ অসহায় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন তিনি
ডেস্ক রিপোর্ট ::

অসহায় মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামের মো. রুহুল আমিন রুবেল। কোনো নেতা হওয়ার স্বপ্নে নয়, মানবসেবার ব্রত নিয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন নিয়মিত। তিনি চন্ডিপুর গ্রামের মৃত মোয়াজ্জেম হোসেন সরকারের ছেলে। পেশায় ব্যবসায়ী। 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রুহুল আমিন রুবেল দীর্ঘ ১৪ বছরে অসহায় হতদরিদ্র পরিবারের ৬১ জন মেয়েকে নিজ খরচে বিয়ে দিয়েছেন। শুধু বিয়ে দিয়েই শেষ নয়, বিয়ের পর ওই মেয়ে ও জামাইকে সাধ্যমতো সার্বিক সহযোগিতাও করেন তিনি। গরিবের মুখে হাসি ফোটানোই যার স্বপ্ন। ছোটবেলায় অসহায় সহপাঠীদের সাহায্য করতেন রুবেল।

গত শুক্রবার (১৭ ডিসেম্বর) রাজশাহীর পবা উপজেলার শ্যামপুর নগরবাড়ি এলাকার দিনমজুর খালেকের মেয়ে নাফিজার বিয়ে সম্পন্ন করেছেন তিনি। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েদের যেমন জাঁকজমকভাবে বিয়ে দেওয়া হয় ঠিক তেমনিভাবেই নাফিজার বিয়ে দিয়েছেন রুবেল।

ওই গ্রামের কয়েকজন যুবক জানান, সমাজের অন্যান্য মানুষের চেয়ে একটু আলাদা প্রকৃতির রুহুল আমিন রুবেল। তিনি কোনো নেতা বা রাজনীতি করার জন্য মানুষের পাশে দাঁড়ান না। শুধুমাত্র মানবিক মূল্যবোধ ও পরকালের কথা চিন্তা করে তিনি সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়ান। গরিব দুঃখীদের মুখে হাসি ফোটানোই যার স্বপ্ন। শৈশবকাল থেকেই এমন স্বপ্ন বুকে লালন করেছেন তিনি। যৌবনকালে এসে তা বাস্তবায়ন করছেন। বিভিন্ন জেলায় পরিচিত মানুষদের সমন্বয়ে গরিব অসহায় পরিবারের মেয়েদের খুঁজে বের করে বিয়ে দেন রুবেল।

নাফিজা খাতুন বলেন, তার (রুহুল আমিন রুবেল) জন্য আমার বিয়ে সম্ভব হয়েছে। তার কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ। আমি চাই তার সহযোগিতার হাত আরও প্রসারিত হোক। তার আলো সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ুক।

স্থানীয় বাসিন্দা আলাউদ্দিন প্রামানিক বলেন, বিভিন্ন জেলায় গরিব অসহায় পরিবারের মেয়েদের খুঁজে বের করেন রুহুল আমিন রুবেল। এরপর তিনি নিজ খরচে বিয়ে দেন। এছাড়া নিজের সাধ্য অনুযায়ী যতটুকু সম্ভব সাহায্য করেন। এখন পর্যন্ত তিনি নিজ খরচে ৬১ জন অসহায় দরিদ্র পরিবারের মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন।

জানা গেছে, রুহুল আমিন রুবেল ১৯৭৭ সালে বড়াইগ্রাম উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামে মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। স্থানীয় ওয়ালিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর ঢাকার বাংলা কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করে বর্তমানে তিনি নিজ এলাকায় ব্যবসা করছেন। পাশাপাশি সমাজের অসহায় হতদরিদ্র মানুষদের সেবা করছেন। শুধু তাই নয় গরিব ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনায় সহযোগিতাও করেন তিনি।

রুহুল আমিন রুবেল জানান, পড়াশোনা শেষ করার পর কোনো চাকরির চেষ্টা করেননি তিনি। ব্যবসার প্রতি তার অনেক আগ্রহ ছিল। পাশাপাশি নিজের এলাকার গরিব অসহায় মানুষদের যেন সেবা করতে পারেন সেজন্য এলাকার বাহিরে যাওয়ার সুযোগ হলেও যাননি। কারণ ছোটবেলা থেকেই তার স্বপ্ন ছিল নিজের গ্রামে থেকে গ্রামের মানুষদের সেবা করা। তাই স্কুলজীবন থেকেই সহপাঠীদের অনেকভাবে সাহায্য করেছেন।

তিনি বলেন, পড়াশোনা শেষ করে আসার পর একটি হার্ডওয়্যার ও ওষুধের দোকান দেই। সেখানকার আয় দিয়ে সংসার চালাই এবং অসহায়দের সাহায্য করি। পরবর্তীতে বিএম মোবাইল হাউস, বিএম লেডিস কর্নার নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছি।

রুহুল আমিন রুবেল বলেন, আমার তেমন কোনো বড় পরিকল্পনা নেই। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত শুধু গরিব অসহায় মানুষের পাশে থাকতে চাই এবং তাদের সহযোগিতা করতে চাই।  আল্লাহ যেন সব সময় আমাকে সেই তৌফিক দান করেন।

জোয়াড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান চাঁদ মাহমুদ  বলেন, তার (রুহুল আমিন রুবেল) সম্পর্কে আমার জানা নেই। তিনি কিছু মানুষকে সহযোগিতা করতেই পারেন। এটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোসা. মারিয়াম খাতুন  বলেন, আমি এই উপজেলায় নতুন এসেছি। তার সম্পর্কে আমার জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে দেখব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *