ঢাকা, শুক্রবার ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১:৩১ অপরাহ্ন
দুই ঈদ সামনে রেখে বিক্রি কমেছে গরুর, দাম বেড়েছে মাংসের
ডেস্ক রিপোর্ট ::

আগামী ৩-৪ মাসের মধ্যে বড় দুটি ধর্মীয় উৎসব রয়েছে। এসব উৎসবে অনেক দামে গরু বিক্রি করা সম্ভব হবে। খামারিরা তাই গরু স্টক করে রেখেছেন। এছাড়া এখন মাঠ বিল ফাঁকা পড়ে আছে। সেখানে গরু চরানো সম্ভব হচ্ছে, খাবার তেমন কিনতে হচ্ছে না। এতে যেসব গৃহস্থরা বছরে ২-১টা গরু বিক্রি করেন, তারাও গরু ছাড়ছেন না। ফলে বাজারে গরুর আমদানি কমে গেছে। আর সেই কারণে এখন গরুর মাংসের দাম বেড়েছে। মাংসের দাম বেড়ে যাওয়ায় বেচাকেনাও কমে গেছে। খরচ ওঠাতে কষ্ট হচ্ছে।

এমনই তথ্য দিলেন খুলনা নগরীর সবচেয়ে বড় মাংসের বাজার হিসেবে পরিচিত ময়লাপোতা এলাকার গরুর মাংস বিক্রেতা ফারুক কোরাইশী, গোলাম রসুল ও আহাদ আলী।

তারা বলেন, গরুর মাংসের দাম সচারচার বৃদ্ধি হয় না। অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম বছরে কয়েকবার বাড়ে, কিন্তু দেখা যায় ২-৩ বছর পর পর দাম বাড়ছে গরুর মাংসের।

তবে এই মাংস বিক্রেতাদের দেয়া তথ্যানুযায়ী, ২০১৭ সালে গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৩০০ টাকা কেজি দরে। এরপর প্রায় প্রতি বছরই একটু একটু করে দাম বেড়েছে।

নগরীর কয়েকটি বাজার ঘুরে জানা গেছে, গরুর মাংস প্রতিকেজি ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহেও বিক্রি হয়েছে ৫৮০ টাকায়।

নগরীর ময়লাপোতার অপর এক মাংস বিক্রেতা জাহাঙ্গীর জানান, ভারত থেকে দেশে গরুর আমদানি অনেক কমে গেছে। অন্যদিকে দেশীয় গরুর পরিমাণ খুব কম। যা হাটে আসে তার থেকে কসাইয়ের সংখ্যা বেশি থাকে। ফলে গরুর দাম বেড়েছে।

তিনি আরও বলেন, প্রায় দুই দশক ধরে ময়লাপোতা এলাকায় মাংসের ব্যবসা করছি, এত সংকট আগে হয়নি। দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষ মাংস কিনে খেতে পারছে না। আগে প্রতি শুক্রবার ১০ মণ মাংস বিক্রি করতাম। এখন ৬-৭ মণের বেশি বিক্রি হয় না।

ব্যবসায়ী রিপন শেখ বলেন, বর্তমানে পিকনিকের একটা সিজন চলছে, সেইসঙ্গে বিয়েসাদীরও চাপ রয়েছে। ১০-১২ দিন পর শবেবরাত। সবচেয়ে বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে চার মাস পরে কোরবানি। তার আগে ঈদ উল ফিতর। এই দুই ঈদে অনেক গরু প্রয়োজন। সে কারণে হাটে গরু কমে গেছে এবং দামও বেশি। পাইকারি মাংসের দাম তাই বেশি।

ময়লাপোতা মোড়ের আশিক মিট হাউসের আশরাফুল ইসলাম বলেন, আগে প্রতি শুক্রবার দুটি গরু বিক্রি হতো, এখন একটি বেচতে কষ্ট হয়।

টুটপাড়া এলাকার কসাই সালাম, রাজা ও বেলায়েত ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর গরু পরিবহন খরচ অনেক বেড়েছে। তাছাড়া পথে ঘাটে চাঁদাবাজী, টোল এসবতো রয়েছেই। তাছাড়া গরুর খাবারের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। তাই এ দামে বিক্রি না করে আর কোনো উপায় নেই।

তারা বলেন, গত ডিসেম্বর ও চলতি বছরের জানুয়ারিতে গরুর মাংসের দাম বেড়ে ৫৫০ টাকা হয়। ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে দাম ৫৮০ টাকা ও মার্চে ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দাম আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

নগরীর সবচেয়ে কাছের দুই উপজেলা রূপসা ও ডুমুরিয়া থেকেই নগরীতে বেশি গুরু আমদানি হয়ে থাকে।

রূপসা উপজেলার সেনের বাজার এলাকার খামারি মাসুম মেম্বর জানান, তার খামারে ১০-১২টা বিক্রয়যোগ্য গরু রয়েছে। কিন্তু আর মাত্র ২-৩ মাস কোনো রকমে পার করে দিতে পারলে একটু দাম বেশি পাওয়া যাবে।

তিনি বলেন, এখন বিলে ধান নেই। তাই গুরুগুলোকে মাঠে বা বিলে চরিয়ে খাওয়ানো হচ্ছে। এতে করে কেনা খাবারের চাপ একটু কম রয়েছে।

jagonews24

ডুমুরিয়ার সাহস ইউনিয়নের খামারি আলী আজগর ও হাবিবুর রহমান বলেন, এখন খামার থেকে গরু ছেড়ে দিলে ঈদের আগে আর কেনা বা বেচা সম্ভব হবে না। তাই অনেক খামারি গরু ধরে রেখেছেন। ঈদের সময় বেশি দামে বিক্রিই তাদের উদ্দেশ্য।

খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) থেকে জানা গেছে, মহানগরীতে তালিকাভুক্ত কসাই বা গরুর মাংস ব্যবসায়ী রয়েছেন ১৭৫ জন। এর বাইরেও গরুর মাংস বিক্রেতা রয়েছেন। মহানগরীর গল্লামারী ও খালিশপুরে দুটি কসাইখানা রয়েছে।

কসাইখানার রেজিস্ট্রারে দেখা গেছে, গত ডিসেম্বরে নগরীর দুটি কসাইখানায় এক হাজার ৩৩৩টি গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে। জানুয়ারি মাসে তা কমে এক হাজার ২৯৩টিতে এবং ফেব্রুয়ারিতে এক হাজার ২৩১টিতে নেমেছে। পাইকারিতে মাংস বিক্রি হয়েছে প্রতি মণ ২২ হাজার টাকায়।

কসাইখানার টোল আদায়কারী খায়রুজ্জামান জানান, অন্যান্য সময় দিনে ১৮টি গরু জবাই হতো। এখন ১০-১২টির বেশি হচ্ছে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *