ঢাকা, সোমবার ২২ জুলাই ২০২৪, ০৬:৩১ অপরাহ্ন
কাপড় আর ফুল ব্যবসার আড়ালে ইয়াবা চালান করত পিচ্চি মনির
ডেস্ক রিপোর্ট ::

রাজধানীর হাজারীবাগ ও ধানমন্ডি এলাকায় ভ্যানে করে কাপড় আর ফুল বিক্রির আড়ালে মো. আব্দুল্লাহ মনির ওরফে পিচ্চি মনির ইয়াবা চালান করত বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

র‌্যাব জানায়, কক্সবাজার ও টেকনাফের মাদক চোরাচালানকারী চক্রের সঙ্গে তার যোগাযোগের কথা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন তিনি। একইসঙ্গে জানিয়েছেন, সম্প্রতি শরীয়তপুরে বাবা চাতক শাহ স্মরণে একটি মাজার নির্মাণ করে নিজেকে অন্য পরিচয়ে উপস্থাপনের চেষ্টাও করছিলেন।

রাজধানীর হাজারীবাগ ও ধানমন্ডি এলাকায় মাদক কারবারের অন্যতম হোতা ও হত্যা মামলার আসামি মো. আব্দুল্লাহ মনির ওরফে পিচ্চি মনির ও তার সহযোগী জুবায়ের হোসেনকে বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। তাদের কাছ থেকে একাধিক বিদেশি অস্ত্র, বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ও নগদ অর্থ জব্দ করা হয়েছে।

শুক্রবার সকালে রাজধানীর কারওয়ানে বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, পিচ্চি মনিরের পরিবার জীবিকার সন্ধানে ১৯৯৫ সালে ঢাকায় চলে আসে এবং লালবাগের শহীদনগর এলাকায় বসবাস শুরু করে। বাবার ফলের ব্যবসায় সহায়তা করত মনির। একসময় সে এলাকার বখে যাওয়া ছেলেদের সঙ্গে যোগ দিয়ে চুরি, ছিনতাই শুরু করে।

ধীরে ধীরে সে এলাকার বখাটেদের নিয়ে লালবাগ, কামরাঙ্গীরচর ও কেরানীগঞ্জ এলাকায় একটি অপরাধ চক্র গড়ে তোলে। এই চক্রটি ব্যবহার করে সে মাদক ব্যবসা শুরু করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ২০১২ সাল থেকে কামরাঙ্গীরচর এলাকায় সে ও তার জনৈক বন্ধু মাদক ব্যবসায় জড়িত হয়। প্রথমে স্থানীয় মাদক ডিলারদের কাছ থেকে অল্প করে মাদকদ্রব্য কিনে মাদকসেবীদের কাছে বিক্রি করত। ২০১৬ সালে কক্সবাজারের ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তার মাদক নেটওয়ার্ক তৈরি হয়।

এরপর টেকনাফ ও কক্সবাজার থেকে তার কাছে নিয়মিত ইয়াবা আসত। মাঝেমধ্যে সে ও তার সিন্ডিকেটের সদস্যরা ঢাকা থেকে কক্সবাজার গিয়ে মাদকের চালান নিয়ে আসত। মূলত তারা মোবাইল ব্যাংকিং মাধ্যম ব্যবহার করে অর্থ লেনদেন করত। শতকরা ২০ শতাংশ হারে অ্যাডভান্স পেমেন্টের মাধ্যমে ইয়াবা ঢাকায় আনা হত।

মাদকের ডেলিভারি ও লেনদেন মনিরের ভাড়া বাসায় বা সুবিধাজনক স্থানে সম্পন্ন হত। মনির ঢাকায় বিভিন্ন জায়গায় ভাড়াটে হিসেবে ছদ্মবেশে মাদকের কারবার করত।

মনির আরও জানায়, সে প্রতিমাসে কয়েকটি চালান টেকনাফ, কক্সবাজার থেকে ঢাকায় আনত। মিরপুর-১৩, ইসলামবাগ, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, হাজারীবাগ, কেরানীগঞ্জ, কামরাঙ্গীরচর, আজিমপুরসহ আরও কয়েকটি স্থানে খুচরা ব্যবসায়ীদের মাদক সরবরাহ করত। প্রত্যেক খুচরা বিক্রেতার জন্য ভিন্ন ভিন্ন মোবাইল ফোন ব্যবহার করত।

কৌশলগত কারণে খুচরা বিক্রেতাদের কারও সঙ্গে কারও যোগাযোগ ছিল না। কেউ কাউকে চিনত না। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর তাকে অস্ত্র ও ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করে। সে এক একটি এলাকায় এক-দুই বছরের বেশি অবস্থান করত না।  সে শরীয়তপুরে নিজের বাড়িতে কোটি টাকার স্থাপনা নির্মাণ করেছে। সে তার বাবার নামে এলাকায় একটি মাজার নির্মাণ করছে।

র‌্যাব জানায়, মনির ২০১৮ সাল থেকে অস্ত্র ব্যবসা শুরু করে। সে ২০১৮ সালে অবৈধ পিস্তলসহ আইন শৃংখলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয় এবং ৭ মাস কারাগারে থাকে। পরে ২০২০ সালে সে অস্ত্র ও মাদক মামলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়। এ সময় সে এক বছর কারাগারে ছিল। তার নামে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় অস্ত্র ও মাদক সংক্রান্ত তিনটি মামলা রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *