ঢাকা, সোমবার ২২ জুলাই ২০২৪, ০১:৩১ পূর্বাহ্ন
কড়া নাড়ছে ভোট, পুড়ছে ট্রেন ফুটছে ককটেল
উখিয়া নিউজ ডেস্ক :

কড়া নাড়ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের দিন। হাতে আর এক দিন-এক রাত। রোববার (৭ জানুয়ারি) সকাল হলেই শুরু হবে ভোটগ্রহণ। ভোট শুরুর অপেক্ষায় আছেন প্রার্থীরা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের সমমনা জোটের পাশাপাশি নির্বাচনে অংশ নিয়েছে স্বতন্ত্রপ্রার্থীরা। তবে, ভোটের মাঠে নেই বিএনপি ও তাদের সমমনারা। এমন এক নির্বাচনকে ঘিরে সারা দেশে দেখা গেছে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, মিলেছে সহিংসতার তথ্য, অনেকে সড়ে গিয়েছেন নির্বাচনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে, আবার হয়েছে হত্যাকাণ্ড। এরই মধ্যে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে হাঁটছে নির্বাচন কমিশন। যদিও কেউ কেউ অভিহিত করেছে ‘একতরফা নির্বাচন’ হিসেবে।

নির্বাচনে প্রার্থী, বেশ কিছু ভোটারদের মতামত, এই নির্বাচনের ফলাফলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এগিয়ে থাকবে। কারণ, সব দিক দিয়ে তাদের অনুকূলে আছে পরিবেশ। তবে, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কমতি নেই। দেশের বিভিন্ন স্থানে ইতোমধ্যেই নির্বাচনি সহিংসতায় কমপক্ষে পাঁচজনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। শুক্রবার রাত ৯টার সময় যখন এ প্রতিবেদন লেখা হচ্ছিল, তখনও রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেন দাউ দাউ করে জ্বলছিল। সে সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছিল, বগির মধ্যে জ্বলা আগুনে একজন পুড়ে যাচ্ছে। পরে রাত ১০টা ২২ মিনিটে জানা যায়, এই আগুনে মারা গেছে চারজন। যদিও কীভাবে আগুন লেগেছে তা নিশ্চিত নয় কেউ।

নির্বাচন ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সব ধরনের অরাজকতা থামাতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন।

এদিকে, ইসি বলছে, রোববার সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণে সার্বিক প্রস্তুতি শেষ করেছে। এখন কেবল ভোটের জন্য অপেক্ষা। তার আগে নির্বাচনকে সামনে রেখে গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টায় শেষ হয়েছে প্রার্থীদের আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা। নির্বাচন উপলক্ষে অনভিপ্রেত পরিস্থিতি এড়াতে ভোটকেন্দ্র, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এবং ভবনের নিরাপত্তা জোরদার ও নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, প্রায় আট লাখ সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারি তারা পোলিং কালেকশনের সঙ্গে সম্পর্কিত। ওরা ভোটগ্রহণ করবেন। আরও এক লাখ স্ট্যান্ড বাই থাকবেন। আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যে সংস্থাগুলো আনসার ও ভিডিপি, র‌্যাব, বিজিবি সব মিলিয়ে সাড়ে সাত লাখ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মাঠে আছেন। থাকবে ভোট শেষ হওয়া পর্যন্ত। তো এটি একটি বেশ বড় কর্মযজ্ঞ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য প্রায় তিন হাজার ম্যাজিস্ট্রেট ও জাজেস মাঠে আছে। গত ১৫ নভেম্বর জাতির উদ্দ্যেশে দেওয়া ভাষণে সিইসি ৩০০ আসনের তফশিল ঘোষণা করেন। পরে এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে নওগাঁ-২ আসনের ভোট স্থগিত করা হয়। ফলে, ভোটগ্রহণ হবে ২৯৯ আসনে।

বিএনপির কর্মসূচি

বিএনপিসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। আজ রোববার ও আগামীকাল তারা সারা দেশে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। গতকাল রাত থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে ভোটকেন্দ্রে ককটেল বিস্ফোরণ ও অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া গেছে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী দাঁড় করানোসহ নানা কৌশল নিয়েছে। এক তৃতীয়াংশ আসনে আওয়ামী লীগের এই স্বতন্ত্র প্রার্থীরাই নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বীতা গড়ে তোলার আভাস দিয়েছেন। ফলে প্রায় শতাধিক আসনে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে। অনেক স্থানে নির্বাচনি ক্যাম্প ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় প্রার্থীরা একে অপরকে দোষারোপ করছেন।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন, আবার অনেকে হয়েছেন সন্তুষ্ট। ২০১১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত হওয়ার পরে তৃতীয়বারের মতো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এর আগে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিরোধী দলের বর্জনের মধ্যেই ১৫৩ আসনে প্রার্থীরা বিনা ভোটে জয় নিশ্চিত করেন। বাকি আসনগুলোতে ব্যাপক সহিংসতার মধ্যে ভোটার উপিস্থিতির হার ছিল ৪০ ভাগের বেশি। এরপর ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপিসহ প্রায় সবগুলো দল অংশ নিলেও নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৮০ ভাগ। যদিও ভোটার উপস্থিতির হার নিয়েও রয়েছে ব্যাপক বিতর্ক।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহল থেকে বারবার অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু নির্বাচনের তাগিদ দেওয়া হলেও বিএনপিসহ ইসির নিবন্ধিত ১৬টি রাজনৈতিক দল নির্বাচনের বাইরে রয়েছে। নির্বাচন কমিশন এবং সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি থাকলে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক এবং গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করা যাবে। নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নে গতকাল ঢাকায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পদাক ওবায়দুল কাদের এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘নির্বাচনটা হতে দেন। গ্রহণযোগ্যতা পাবে কি না, সেটা বিদেশিরাই বলবেন। আমরা তো বলছি, ভোটার টার্ন আউট, অংশগ্রহণ সন্তোষজনক হবে। এ দেশে একটা ভালো নির্বাচন হবে। প্রধান বিরোধীদল যেখানে নেই, এটা আমরা রিগ্রেট (অনুশোচনা) করি। বিএনপি থাকলে নির্বাচন আরও প্রতিযোগিতাপূর্ণ হতো, সেটা আমরা স্বীকার করি। তারপরও এই নির্বাচন প্রতিযোগিতাপূর্ণ হচ্ছে।’

অন্যদিকে পৃথক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেছেন, ৭ জানুয়ারির একতরফা ও ভাগ-বাটোয়ারার নির্বাচনকে নিয়ে দেশে-বিদেশে হাস্যরস ও সমালোচনা চলছে। সরকার নিজ দায়িত্বে ও মরিয়া উদ্যোগে প্রতিদিন সেটিকে প্রহসন ও সহিংসতার নতুন মাত্রায় নিয়ে যাচ্ছে। ডামি প্রার্থী ও ডামি দল উৎপাদন করেই ক্ষান্ত হয়নি, এখন তারা নজর দিয়েছে জোরপূর্বক ডামি ভোটার সৃষ্টিতে।

নির্বাচন কমিশন থেকে জানান হয়েছে, সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রায় আট লাখ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি বেসমারিক প্রশাসনকে সহায়তার জন্য সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরাও মাঠে রয়েছেন। নির্বাহী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পৃথক মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি প্রার্থী রয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের। হাইকোর্ট থেকে তিনজন প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ায় দলটির প্রার্থীর সংখ্যা ২৬৬ জন। এ ছাড়া জাতীয় পাটি-জাপার ২৬৫ জন, তৃণমূল বিএনপির ১৩৫ জন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ১২২ জন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের ৯৬ জন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ৫৬ জনসহ নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ২৭টি রাজনৈতিক দলের মোট প্রার্থী সংখ্যা এক হাজার ৫৩৪ জন। আর স্বতন্ত্রপ্রার্থী রয়েছেন আরও ৪৩৬ জন। ফলে এক এক হাজার ৯৭০ জনের নাম থাকবে ব্যালট পেপারে। যদিও জাপাসহ বেশ কয়েকটি দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা প্রতীক বরাদ্দের পরে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। বিএনপিসহ ১৬টি দল এ নির্বাচন বয়কট করেছে। নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ একাধিক দাবিতে নির্বাচন থেকে দূরে রয়েছে দলগুলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *