ঢাকা, শুক্রবার ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৭:০৪ অপরাহ্ন
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের মরণফাঁদ ‘গুপ্তখাল আর ঘূর্ণিস্রোত’
ডেস্ক রিপোর্ট ::

বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের চার কিলোমিটার এলাকা অন্তত ৫০ হাজার পর্যটকে প্রায়ই ঠাসা থাকে।

এ চার কিলোমিটার এলাকার বালুচরে পা ফেলার যেন জো থাকে না।

সৈকতের লাবনী পয়েন্ট, সিগাল,সুগন্ধা পয়েন্ট ও দক্ষিণ দিকের কলাতলীর নিসর্গ পয়েন্টেও হাজার হাজার পর্যটকের সমাগম থাকে সবসময়।

এসব পয়েন্টে সাগরের ঢেউগুলো জোয়ারের সময় স্বাভাবিকের চেয়ে ছয়-সাত ফুট উচ্চতায় সৈকতে আছড়ে পড়ে।আর এসব পয়েন্টেই বেশিরভাগ পর্যটক কোমরসমান পানিতে নেমে গোসল করে।

কেউ কেউ টায়ারের টিউবে গা ভাসিয়ে পানিতে ভাসেন,কেউ দ্রুতগতির জেডস্কিতে ছুটেন গভীর জলরাশির দিকে।

কিন্তু জোয়ারের সময় সাগরের তলদেশে(পানির নিচে বালুচরে) যে মরণফাঁদ ‘গুপ্তখাল’ লুকিয়ে আছে,সেদিকে নজর থাকে না কারও।

কিন্তু কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বেশ কয়েকটি পয়েন্টেই রয়েছে চোরাবালি আর সৈকত সংলগ্ন সমুদ্রে মারাত্বক ঘূর্ণিস্রোত। আসলে এগুলো হলো মরণফাঁদ। এতে পড়ে প্রায় সময়ই মারা পড়ছে বহু পর্যটক। সমুদ্র সৈকতের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে ‘বিপদ সংকেত চিহ্ন’ থাকলেও তা মানে না কেউই।

তবে জোয়ারের সময় পানির উচ্চতা আর ঢেউয়ের উচ্চতায় এগুলো দেখা যায় না বলেই পর্যটক ও স্থানীয়দের দুর্ঘটনায় পড়তে হয়। যারা সাতাঁর জানে বা ভাগ্য ভাল থাকে তারা মৃত্যূর দুয়ার থেকে ফিরে আসে আর যারা সাতাঁর জানে না তারা ‘গুপ্তখালে পড়ে স্রোতের টানে হারিয়ে যায় সাগরের অতল জলে।

তবে পর্যটক রক্ষাকর্মীদের অভিযোগ, সমুদ্র নামার সাংকেতিক চিহ্ন ও নিষেধাজ্ঞা না মানার কারণেই বেশির ভাগ দুর্ঘটনা ঘটছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়,কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে সাগরের টানে ভেসে পর্যটকের মৃত্যুর হার দিন দিন বাড়ছে।

সর্বশেষ গত ৪মে বিকেলে সি প্রিন্সেস হোটেলের সামনের গুপ্তখালে আটকা পড়ে তিনজন কিশোর। এর মধ্যে দুজনকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করা হলেও সাইফুল ইসলাম (১৬) নামের এক কিশোরের মৃত্যু হয়।

সৈকতের লাইফগার্ড মোহাম্মদ জহির বলেন, জোয়ারের সময় গুপ্তখালগুলো ডুবে থাকলে পরখ করার উপায় থাকে না। কোমরসমান পানিতে নেমে গোসলের সময় বেখেয়ালে গুপ্তখালে কেউ আটকা পড়লে জীবিত উদ্ধার করা কঠিন।তিনি আরও বলেন, উত্তাল সমুদ্রে গোসলের মজা আলাদা। কিন্তু গুপ্তখাল যেকোনো মুহূর্তে বিপদ ডেকে আনতে পারে।

সৈকতের কলাতলী, সুগন্ধা, সিগাল ও লাবণী পয়েন্টে সৃষ্টি হয়েছে পাঁচ-ছয়টির বেশি গুপ্তখাল। ভাটার সময় দুয়েকটি গুপ্তখাল দৃশ্যমান হলেও অন্যগুলো চোখে দেখা যায় না।সি সেফ লাইফগার্ডের তথ্য, গত পাঁচ বছরে চার কিলোমিটারের এই সৈকত থেকে উদ্ধার হয়েছে ৬ জন পর্যটকসহ ২৫ জনের লাশ। ভেসে যাওয়ার সময় জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ৫২৩ জন পর্যটককে। এর মধ্যে ১৫ শতাংশ নারী।

সি সেফ নামের বেসরকারি লাইফগার্ড প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধায়ক সিফাত সাইফুল্লাহ বলেন, কলাতলী থেকে লাবণী পয়েন্টে পর্যন্ত চার কিলোমিটার সৈকতের কয়েকটি পয়েন্টে সৃষ্টি হয়েছে পাঁচ ছয়টি গুপ্তখাল। গুপ্তখাল এলাকা চিহ্নিত সৈকতে গোসলে নামছেন লাখো পর্যটক।আর লাখো পর্যটকের নিরাপত্তায় ২৬ জন লাইফগার্ড।

ফেডারেশন অব ট্যুরিজম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, ১২০ কিলোমিটার সৈকতে প্রায় চার কিলোমিটারে (কলাতলী, সুগন্ধা, সিগাল ও লাবণী পয়েন্ট) গোসলের ব্যবস্থা আছে। যদিও অরক্ষিত টেকনাফ, সেন্ট মার্টিন, উখিয়ার ইনানী, হিমছড়ি, দরিয়ানগরসহ কয়েকটি পয়েন্টে প্রতিদিন কয়েক হাজার পর্যটক ঝুঁকি নিয়ে গোসলে নামছেন।

তবে সচেতন মহল মনে করছেন,কক্সবাজার বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির চরম উদাসীনতাই পর্যটনের প্রাণ সমুদ্র সৈকতে এসব নির্মম মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হতে পারে। অভিযোগ আছে, প্রতি মাসে বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভা হলেও সে কমিটির সব সিদ্ধান্ত শুধু কাগজ-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *