ঢাকা, শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১:১৬ পূর্বাহ্ন
কক্সবাজারে হচ্ছে সাম্পানের আদলে ক্রিকেট, ফুটবল ও হকি স্টেডিয়াম
সুজাউদ্দিন রুবেল,কক্সবাজার ::

সমুদ্রের পাড় ঘেঁষে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে হচ্ছে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রীড়া কমপ্লেক্স। সাম্পানের আদলেই নির্মিত হবে আন্তর্জাতিকমানের ক্রিকেট, ফুটবল ও হকি স্টেডিয়াম। থাকছে নানা সুযোগ-সুবিধাসহ একটি পূর্ণাঙ্গ ক্রিকেট প্রাকটিস মাঠ।

রোববার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কক্সবাজারে ‘শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রীড়া কমপ্লেক্স’ প্রকল্পে ডিপিপি প্রণয়নের লক্ষ্যে অংশীজন পরামর্শ সভায় এসব তথ্য চিত্র উপস্থাপন হয়। এই সভায় উপস্থিত ছিলেন বিমান বাহিনী, বেবিচক, ফায়ার সার্ভিস, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, সড়ক ও জনপদ বিভাগ, পৌরসভা, হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস, আবহাওয়া অধিদপ্তর, পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা পুলিশ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, পর্যটন করপোরেশন, পরিবেশ অধিদপ্তর, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমি, হকি ফেডারেশন, প্রফেশনাল এসোসিয়েটস লিমিটেড, কক্সবাজার প্রেসক্লাবের প্রতিনিধিরা।

প্রতিনিধিরা এই সভায় তাদের নানা পরামর্শ তুলে ধরেন।
বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত; তার পাড়ে বালিয়াড়িতে সবুজ বেষ্টনী ঝাউবন। তার পাশেই শোভা পাচ্ছে দৃষ্টিনন্দন বিশাল আকৃতির ৩টি সাম্পান। দেখলে মনে হবে- নান্দনিকভাবে সাগরে ভাসছে ৩টি সাম্পান। মূলত প্রাকৃতিক স্থাপনার সঙ্গে মিল রেখেই সাম্পানের আদলে তৈরি হয়েছে এসব স্টেডিয়াম।

একটি সাম্পান হচ্ছে আন্তর্জাতিকমানের ক্রিকেট স্টেডিয়াম, অপর দুটিতে হচ্ছে ফুটবল ও হকি স্টেডিয়াম। তার সঙ্গে একটি পূর্ণাঙ্গ ক্রিকেট অনুশীলন মাঠ। একই সঙ্গে রয়েছে তারকা মানের ভবন, ওয়াচ টাওয়ার, উন্মুক্ত খাদ্য জোনসহ আন্তর্জাতিক সব সুযোগ-সুবিধা। যা রয়েছে কক্সবাজার শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রীড়া কমপ্লেক্সে।

স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান প্রফেশনাল অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনজুর কাদের হেমায়েত উদ্দিন বলেন, ঝাউবন বেষ্টিত সমুদ্রের দিগন্ত জুড়ে তৈরি হচ্ছে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রীড়া কমপ্লেক্স। ভৌগলিক অবস্থানের দিক থেকে প্রাকৃতিক স্থাপনার সাথে খাপ খাইয়ে স্টেডিয়ামের ধারণাটি ‘সাম্পান’ আদলে তৈরি করা হচ্ছে। এটি দেখলে মনে হবে- নান্দনিকভাবে সাগরে ৩টি সাম্পান ভাসছে। এই কমপ্লেক্সে ক্রিকেটে ১৫ হাজার, ফুটবলে ১৫ হাজার এবং হকিতে ৮ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতা সম্পন্ন স্টেডিয়াম হবে।

রোববার দুপুরে কক্সবাজারে ‘শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রীড়া কমপ্লেক্স’ প্রকল্পে ডিপিপি প্রনয়নের লক্ষ্যে অংশীজন পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া কমপ্লেক্সের এসব তথ্য চিত্র উপস্থাপন হয়। তবে অনেকেই তুলে ধরেন নানা
জটিলতার বিষয়।

কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম বলেন, কক্সবাজারে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রীড়া কমপ্লেক্স হচ্ছে এটা কক্সবাজারবাসির জন্য সুখবর। তবে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে পর্যটন মৌসুমে লাখো পর্যটক আসে। তখন এই শহরে যানজটে নাকাল হয় মানুষ। তাই এই যানজটকে বিবেচনা করে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া কমপ্লেক্সের আশপাশে এক হাজার যানবাহন ধারণক্ষমতার একটি স্থান রাখা প্রয়োজন। না হয় যানজটে আরও নাকাল হয়ে পড়বে পর্যটকসহ শহরবাসি।

জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন বলেন, “শুধু ক্রিকেট, ফুটবল ও হকি স্টেডিয়াম হলে হবে না। যদি অনুশীলনের মাঠ না থাকে। যেমন আন্তর্জাতিক অনেক দেশ এখানে খেলতে আসবে, তখন কিন্তু অনুশীলন মাঠ প্রয়োজন পড়বে। তাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম নির্মাণের পাশাপাশি ভালমানের অনুশীলনের মাঠও দরকার। অতীতে কক্সবাজারে অনেক আন্তর্জাতিক ফুটবল ও ক্রিকেট ম্যাচ হয়েছে, তখন কিন্তু অনুশীলন মাঠ না পাওয়ায় বেকায়দায় পড়তে হয়েছে। তাই অনুশীলন মাঠ থাকাটা অত্যন্ত জরুরী।”

এদিকে অংশীজন সভা শেষে একটি সংবাদ সম্মেলন অনুষ্টিত হয়। এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল, সচিব মেজবাহ উদ্দিন ও জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ। এসময় সাংবাদিক নানা প্রশ্নের জবাব দেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মো. জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, কক্সবাজারের মতো এতো সুন্দর এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গায় ২ক ধরণের স্থাপনা আমরা করতে যাচ্ছি। এটি পুরোটাই প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত ইচ্ছা এবং আগ্রহের কারণে সম্ভব হয়েছে। এছাড়া কক্সবাজারে আধুনিকভাবে ফুটবল স্টেডিয়াম, ইনডোর স্টেডিয়াম হচ্ছে। এ জেলার প্রতিটি উপজেলায় মিনি স্টেডিয়াম করার পরিকল্পনাও আমরা হাতে নিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর একান্ত প্রচেষ্টায় রামুতে বিকেএসপিও করা হয়েছে। সুতরাং খুব শিগগিরই শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রীড়া কমপ্লেক্সের আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু হবে।

আরেক প্রশ্নের জবাবে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সমুদ্রতীরে ক্রিকেট, ফুটবল ও হকি স্টেডিয়ামের শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রীড়া কমপ্লেক্সের দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও পরিচিতি লাভ করবে। আশা রাখছি, বিদেশের খেলাও এই ভেন্যুতে চলবে। পরিবেশের যাতে ক্ষতি না হয়, সেভাবে সবকিছু বিবেচনা করে এই আন্তর্জাতিক ক্রীড়া কমপ্লেক্সটি নির্মিত হবে।’
শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রীড়া কমপ্লেক্সটি নির্মাণে ব্যয় হবে আড়াই হাজার কোটি টাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *