ঢাকা, শনিবার ২০ জুলাই ২০২৪, ০৪:০৬ অপরাহ্ন
কক্সবাজারে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণে টিলা কর্তন
নিজস্ব প্রতিবেদক ::

কক্সবাজারের পেকুয়ায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণের জন্য টিলা কাটার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, সপ্তাখানেক আগে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উপজেলার টৈটং ইউনিয়নের জালিয়ার চাঙ এলাকার একটি টিলা কাটা শুরু হয়। পরবর্তীকালে এ নিয়ে এলাকাবাসী ব্যাপক আপত্তি জানালেও টিলা কাটার কাজ বন্ধ করেনি উপজেলা প্রশাসন।

গতকাল শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, জালিয়ার চাঙ এলাকায় মাটি কাটার যন্ত্র দিয়ে (এক্সকাভেটর) অন্তত ২০ ফুট উচ্চতার একটি টিলা কাটা হচ্ছে। মাটি কাটার আগে টিলাটিতে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির অন্তত দুই হাজার গাছ কেটে নেওয়া হয়েছে। পাঁচটি ট্রাক দিয়ে টিলার মাটি নিয়ে বিভিন্ন জনের বসত বাড়িতে নিয়ে ফেলা হয়েছে। টিলাটির আশপাশে আরও অসংখ্য টিলা ও পাহাড় রয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ আনছার বলেন, ‘পাহাড়ি এ জনপদের সবচেয়ে বড় কবরস্থানটি ওই টিলাতে রয়েছে। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের বাঁধা তোয়াক্কা না করেই সেটি কেটে ফেলা হচ্ছে। এতে একশত বছরের পুরোনো এ কবরস্থানটি অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে।

নাম না প্রকাশের শর্তে এক ব্যক্তি জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নির্দেশে টৈটং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম পাহাড় কাটার নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

স্থানীয় স্কুলশিক্ষক মোহাম্মদ রহমান বলেন, ‘জালিয়ার চাঙ, গর্জনিয়া পাড়া, পোড়াদিয়াসহ অন্তত পাঁচটি গ্রামের দশ হাজার মানুষের একমাত্র কবরস্থান ওই টিলাতে রয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কবরস্থানটির ব্যবহার বাড়ছে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার কথা চিন্তা করে যেখানে এটির আয়তন বাড়ানো দরকার, সেখানে কবরস্থান বেদখল হয়ে যাচ্ছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউএনওর সঙ্গে কথা বলেছি, কিন্তু তাঁরা আমাদের কথায় কর্ণপাত করেননি।’

এ বিষয়ে টৈটং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘টিলাটি খাস খতিয়ানের অন্তর্ভুক্ত। গৃহহীনদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় এ টিলার জমিতে ২৮টি ঘর নির্মাণ করা হবে। টিলার ওপরে তো আর ঘর নির্মাণ করা যাবে না, তাই ইউএনওর নির্দেশে টিলাটি কেটে সমতল করা হচ্ছে।
পেকুয়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আসিফ আল জিনাত বলেন, ‘খাস জায়গাটি জঙ্গল শ্রেণিভুক্ত, টিলা বা পাহাড় নয়। ঘর নির্মাণের জন্য উপযুক্ত করতে এটিকে সমতল করা হচ্ছে।’

পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পূর্বিতা চাকমা বলেন, ‘জায়গাটিতে কোনো কবরস্থান নেই, তবে এর পাশেই একটি কবরস্থান রয়েছে। কবরস্থানের বিষয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে, বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়েছে।’

এদিকে বারবাকিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা হাবিবুল হক বলেন, ‘জায়গাটি আমিও পরিদর্শন করেছি। এটি ২০ ফুট উচ্চতার একটি টিলা। তবে টিলাটি বন বিভাগের মালিকানাধীন নয়।’
পরিবেশ অধিদপ্তর, কক্সবাজারের পরিচালক ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘টিলা কাটার বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখব। ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *