ঢাকা, শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৫:০৩ অপরাহ্ন
ঈদের আগে বাজার থেকে ‘উধাও’ সয়াবিন তেল
ডেস্ক রিপোর্ট ::

রাজধানীর লালবাগের পলাশীর মোড় কাঁচাবাজারে সয়াবিন তেল কিনতে এসেছেন ঢাকা কলেজের সিনিয়র নার্স বিউটি রানী। তবে কয়েক দোকান ঘুরেও তেল পাননি বলে জানান তিনি। শুধু বিউটি রানী নয়, তার মতো আরও অনেক ক্রেতা তেল কিনতে এসে ফিরে যাচ্ছেন। ঈদের আগের দিন বাজারে ভোজ্যতেলের এমন সংকটে চরম বিপাকে পড়েছেন ক্রেতারা।

রোববার (১ মে) রাজধানীর পলাশী কাঁচাবাজার, মিরপুর-১০, শেওড়াপাড়া, বিএনপি কাঁচাবাজার ও ৬০ ফিট বারেক মোল্লা বাজারসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

খুচরা বিক্রেতারা বলছেন- কোম্পানিগুলো তেল সরবরাহ করছে না। যা দিচ্ছে, তাতেও শর্তজুড়ে দেওয়া হচ্ছে। চা পাতা নিতে হবে, না হলে তেল দেবেন না তারা।

jagonews24

বিজ্ঞাপন

তবে তেল সরবরাহকারী কোম্পানি ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের দাবি, তেল সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। খুচরা বিক্রেতারা তেল মজুত করায় বাজারে সংকট সৃষ্টি হচ্ছে।

পলাশী কাঁচাবাজারের মীম জেনারেল স্টোরের মালিক ফারুক হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘কোম্পানিগুলো প্রথম কয়েকদিন তেল দিয়েছে। এখন আর দিচ্ছে না। কোম্পানিগুলো তেল দিলেও শর্তজুড়ে দেয়। এক কার্টুন সয়াবিন তেল নিলে আট প্যাকেট চা পাতা নিতে হবে। অনেক কোম্পানি বলে সয়াবিন তেল নিলে সঙ্গে সরিষার তেলও নিতে হবে। তেল নিতে হরেক রকম শর্ত।’

তিনি বলেন, ‘পাঁচ লিটারের বোতলের মোড়কে দাম লেখা ৭৬০ টাকা। অথচ এ তেল ৮৫০ টাকায় বিক্রি করতে চাইছে কোম্পানিগুলো। মোড়কের দাম ৭৬০ টাকা, এটা যদি আমরা ৮৫০ টাকায় বিক্রি করি তখন তো মামলা হবে।’

খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগ, কোম্পানিগুলো দুই লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলে দুই টাকা বাড়িয়ে ৩১৪ টাকা দরে বিক্রি করছে। এছাড়া তেল কিনলে চা পাতা, সরিষার তেল, ফিরনি মিক্স, হালিম মিক্স, বেঙ্গল চা পাতা, হলুদ, মরিচ, আটা-ময়দা, সুজি ও লবণ কেনা বাধ্যতামূলক করেছে।

jagonews24

বিএনপি কাঁচাবাজারের আখি জেনারেল স্টোরের স্বত্বাধিকারী শফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঈদের আগে বাজারে সয়াবিন তেল নেই। সয়াবিন তেলের সঙ্গে কোম্পানিগুলো চা পাতা ধরিয়ে দেয়। তবুও সয়াবিন তেল পাচ্ছি না।’

৬০ ফিট ছাপড়া মসজিদের দোকানি হৃদয় হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, সয়াবিন তেল নেই। বাজার ঈদের আগে ভয়াবহ সংকট। দুই কার্টুনে ১৮ বোতল সয়াবিন তেল কিনলে ২৭০ টাকার চা পাতা কিনতে হচ্ছে। তারপরও সয়াবিন তেল নেই। ফলে অনেক পরিচিত ক্রেতা হারাতে হচ্ছে।

বিএনপি কাঁচাবাজারের সিকদার এন্টারপ্রাইজের মালিক হাবিবুর রহমান রিয়াদ বলেন, সয়াবিনের চাহিদা ২০ কার্টুন দিলে সরবরাহ করে পাঁচ কার্টুন। এরপর সঙ্গে হালিম মিক্স, ফিরনি মিক্স নিতে হবে। অপ্রচলিত পণ্য নিতে হবে। এসব শর্ত মানতে রাজি। তবুও সয়াবিন তেল পাচ্ছি না।’

তেলের সরবরাহ না থাকায় খুচরা বাজারে প্রভাব পড়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. গোলাম মাওলা। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমদানিকারকদের কাছ থেকে তেল এনে সরবরাহ করতে হয়। আমরা যদি তেল আনতে না পারি, তাহলে কীভাবে বাজারে দেবো? বিশ্ব বাজারে তেল নিয়ে যে সংকট তৈরি হয়েছে, এজন্য মজুতের প্রয়োজন আছে। তেল মজুত করতে না পারলে তেলের দাম আরও বাড়বে।’

jagonews24

গোলাম মাওলা বলেন, ‘আমরা তো মজুতও করতে পারছি না। গুদামে ১০ ড্রাম তেল পেলেও জরিমানা করা হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসায়ীদের ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে। তেল যারা আমদানি করেন, উৎপাদন করেন, তারা যদি না দেন আমরা কীভাবে পাবো। আমরা তো তাদের কাছ থেকে তেল কিনে বিক্রি করি। কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে রেট বাড়ানোর জন্য এটা করলো কি না, তা তো আমরা জানি না। সংকট কবে শেষ হবে, তার কোনো তথ্যও নেই। কথা ছিল ঈদের আগে তেলে দাম বাড়বে না, তবুও বেড়েছে।’

তবে তেল সরবরাহ করা কোম্পানিগুলোর দাবি- ঈদের পরে সয়াবিন তেলের দাম বাড়তে পারে, এ আশায় খুচরা বিক্রেতারা কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *