হতাশা প্রকাশ করে লেদা রোহিঙ্গা শিবিরের মাঝি আবু হোসেন বলেন, ‘১০ থেকে ১২ ফুট ঘরে ৫০০ টাকা ভাড়া দিতে হচ্ছে। আমার ব্লকে ২০০ ঘর ভাড়া দিতে বাধ্য হচ্ছে রোহিঙ্গারা। আমরা যে ত্রাণ খাবারের জন্য পাচ্ছি, তা নিয়ে আমাদের চলা খুব কষ্টকর। কিন্তু এর মধ্যও ত্রাণ বিক্রির টাকায় ঘর ভাড়া পরিশোধ করতে হয় প্রতি মাসে। শিবিরগুলোতে বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এমনিতেই অনেক কষ্ট। তার ওপরে ঘর ভাড়া নিয়ে সবাই খুব চিন্তিত। রেশন কমে যাওয়ায় ত্রাণ বিক্রি করে প্রতি মাসে ৫০০ টাকা জোগাড় করা সহজ কথা নয়। আবার অনেকে ঘরভাড়া জোগাড় করতে বাইরে মজুরি খাটছে। যার ঝুপড়িঘর যত বড় ভাড়াও তত বেশি। কারণ, এখানে মাটি মেপে ঘরভাড়া দিতে হচ্ছে আমাদের।’
টেকনাফের জাদিমুড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা মো. জাফর আলম বলেন, ‘আমরা ২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের চারটি ক্যাম্প রয়েছে সীমান্তের টেকনাফে। এখানে ২০ হাজার পরিবারের প্রায় এক লাখের বেশি রোহিঙ্গার বসবাস। কিন্তু দুঃখের বিষয়, ক্যাম্পে আমাদের প্রায় ৮০ হাজারের বেশি মানুষের প্রতি মাসে ঘরভাড়া দিতে হচ্ছে। এতে রোহিঙ্গারা খুব চিন্তিত। কেননা, রেশন কমিয়ে দেওয়ায় আমরা হিমশিম খাচ্ছি। মানবিক বিবেচনায় যাতে ক্যাম্পে এসব রোহিঙ্গাদের ঘরভাড়া দিতে না হয় সেজন্য সরকারের হস্তক্ষেপ খুব দরকার।’
নুরালী এলাকায় গড়ে উঠেছে একটি অস্থায়ী রোহিঙ্গা শিবির। সেখানে চার হাজার রোহিঙ্গার জন্য ১১৫টি ঝুপড়িঘর রয়েছে। তাদেরও প্রতিটি ঘরের মাসিক ৫০০-১০০০ টাকা ভাড়া দিতে হয়।
বনবিভাগের জমিতে গড়ে উঠেছে সবগুলো রোহিঙ্গা ক্যাম্প
এদিকে আশ্রয় শিবিরগুলো সরেজমিন ঘুরে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আশ্রয় শিবিরের এসব জমি মূলত বন বিভাগের। রোহিঙ্গারা আসার পর এসব জমিতেই আশ্রয় শিবির গড়ে ওঠে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লেদার এক রোহিঙ্গা নেতা বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে আমরা তাদের বনের জমিতে বসবাস করে আসছি বলে আসলেও ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে এখানে ঘরভাড়া দিতে হচ্ছে। দুই দফা রেশন কমিয়ে দেওয়ায় এই দুর্দিনের মাঝে ৫০০-১০০০ হাজার ঘরভাড়া দিতে বাধ্য রোহিঙ্গারা। অন্যথায় তাদের ঘর থেকে উচ্ছেদ করা হয়। কিন্তু উখিয়ায় কোনও রোহিঙ্গাকে ঘরভাড়া দিতে হয় না। যার কারণে অনেকে টেকনাফ থেকে উখিয়া ক্যাম্পে চলে গেছে।’
টেকনাফের আলীখালী ক্যাম্পের বসবাসকারী রহিমা খাতুন পরিবার নিয়ে উখিয়া বালুখালী ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘টেকনাফের ক্যাম্পে ঘরভাড়া দিতে হয়। ফলে আমাদের খুব কষ্ট হতো। আর ভাড়া দিতে না পারলে লোকজন এসে ঘর থেকে বের করে দিতেন। আমাদের সঙ্গে কয়েক দফায় এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। তাই একেবারেই উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্পে চলে এসেছি। এখানে ক্যাম্পের ঘরগুলোর ভাড়া দিতে হয় না।’
জানতে চাইলে কক্সবাজারের টেকনাফের বন বিভাগের কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ‘মানবিক চিন্তা থেকে সরকার টেকনাফে বনের ৬ হাজার একর জমিতে চারটি শরণার্থী ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। এখানে কোনও ব্যক্তিগত মালিকানার জমি নেই। যার ফলে কারও মাটি বা ঘরভাড়া নেওয়ার সুযোগ নেই। যদি কেউ এদের কাছ থেকে ঘরভাড়া নিয়ে থাকে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) সামছু দৌজা বলেন, ‘আসলে জমির বিষয়টি বন বিভাগের দায়িত্ব। তবু আমরা এই ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখবো।’
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের (বিএইচআরএফ) মহাসচিব জিয়া হাবীব আহসান বলেন, ‘মূলত রোহিঙ্গারা রেশন নিয়ে চলে। তার মধ্য ঘরের ভাড়া দেওয়া তাদের জন্য খুব কঠিন। যেহেতু রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো সরকারি জমিতে গড়ে উঠেছে, ফলে যারা আইন অমান্য করে ভাড়া আদায় করছে, সেটি তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার সরকারের।
সূত্র -বাংলা ট্রিবিউন
Leave a Reply