ঢাকা, রবিবার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৮ অপরাহ্ন
প্রদীপ দম্পতির সর্বোচ্চ শাস্তি চায় দুদক
উখিয়া নিউজ ডেস্ক :

সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি প্রদীপ কুমার দাশ এবং তার স্ত্রী চুমকি কারনের বিরুদ্ধে দায়ের করা দুর্নীতি মামলার রায় বুধবার (২৭ জুলাই) ঘোষণা করা হবে।

দুদকের মামলার আইনজীবী চট্টগ্রাম আদালতের পিপি মাহমুদুল হক ঢাকা পোস্টকে জানান, আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন তারা। আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হবে বলে আশা করছেন তিনি।

অপরদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সমীর দাশগুপ্ত ঢাকা পোস্টকে বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ। আশা করি প্রদীপ ও তার স্ত্রী চুমকি খালাস পাবেন।

বুধবার (২৭ জুলাই) সকালে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্পেশাল জজ মুন্সী আব্দুল মজিদের আদালতে এ মামলার রায় ঘোষণা করার কথা রয়েছে।

দুদকের আইনজীবী মাহমুদুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ওসি প্রদীপ ও তার স্ত্রী চুমকির বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় আদালতে সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রসহ সাক্ষ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। আসামি প্রদীপ ও তার স্ত্রী চুমকির বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহিভূর্ত সম্পদ অর্জন, সম্পদের তথ্য গোপন, মানি লন্ডারিংসহ সব অভিযোগ সার্বিকভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা আশাবাদী এ মামলায় আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেবেন আদালত।

আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলছেন আপনারা (দুদক) অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেননি- এ বিষয়ে কী বলবেন? জবাবে মাহমুদুল হক বলেন, আসামিপক্ষ বাঁচার জন্য, দায় থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য যতকিছু প্রয়োজন সবকিছুই বলবে। আমরা আমাদের আনীত অভিযোগ আদালতে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আসামি কখনো বলবে না যে সে অপরাধ করেছে। আমি আশা করছি আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে।

প্রদীপ দম্পতির আইনজীবী অ্যাডভোকেট সমীর দাশগুপ্ত ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ ২৯ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৪ জন সাক্ষীকে আদালতে উপস্থাপন করতে পেরেছে। দুজন ছাড়া ২২ জন হচ্ছেন ফর্মালিটিজ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও বোয়ালখালীর মৎস্য কর্মকর্তাকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে গণ্য করে তাদের জেরা করার চেষ্টা করেছি। অবশিষ্ট ২২ জনকে মামলা সম্পর্কে জানে কি না জিজ্ঞাসা করেছি, সবাই একবাক্যে বলেছেন ওনারা মামলা সম্পর্কে কোনো কিছু জানেন না।

তিনি বলেন, যিনি ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ করেছিলেন, তাকে মামলার সাক্ষী করা হয়েছিল। কিন্তু তাকে আদালতে সাক্ষী হিসেবে উপস্থাপন করতে রাষ্ট্রপক্ষ ব্যর্থ হয়েছে। যেহেতু তিনি আসেননি তার বেনিফিট অব ডাউট আসামিপক্ষে যাবে।

আসামিপক্ষের এ আইনজীবী বলেন, আমরা বলতে চাই রাষ্ট্রপক্ষের যে মামলা সেই মামলা রাষ্ট্রপক্ষ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা যে মৎস্য চাষের কথা বলেছি তার চুক্তিনামা থেকে শুরু করে যাবতীয় কাগজপত্র আদালতে দাখিল করেছি। এছাড়া আমাদের পক্ষে দুজন সাফাই সাক্ষী দিয়েছেন। তাদের রাষ্ট্রপক্ষ জেরা করেছেন। জেরাতে কোনো রকম অসারতা বের করতে পারেননি তারা।

আইনজীবী অ্যাডভোকেট সমীর দাশগুপ্ত বলেন, এ মামলায় ঘুষ, দুর্নীতি ও মানিলন্ডারিংয়ের যে কথাগুলো রাষ্ট্রপক্ষ বলতে চেয়েছে সেগুলোর কোনো কিছুই প্রমাণ করতে পারেনি। আসামিরা সম্পূর্ণরূপে নির্দোষ। আমার বিশ্বাস আদালত যদি নিরপেক্ষভাবে বিচার বিশ্লেষণ করে রায় দেন তাহলে চুমকি ও প্রদীপ বেকুসর খালাস পাবেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ২৩ আগস্ট প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকির বিরুদ্ধে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ বাদী হয়ে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলাটি দায়ের করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দীন।

দুদক আইন ২০০৪-এর ২৬ (২) ও ২৭ (১), মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪ (২) ধারা, ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারা এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় তাদের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল।

এরপর গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক মুন্সী আব্দুল মজিদ দুর্নীতি মামলার চার্জ গঠনের মাধ্যমে প্রদীপ এবং তার স্ত্রী চুমকির বিরুদ্ধে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছিলেন।

এর আগে গত বছরের ২৬ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদক চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন। প্রদীপ গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকলেও চলতি বছরের ২৩ মে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন প্রদীপের স্ত্রী চুমকি। পরে আদালত শুনানি শেষে তাকে কারাগারে পাঠান। বর্তমানে তারা কারাগারে আছেন।

জানা গেছে, চুমকির ৪ কোটি ৮০ লাখ ৬৪ হাজার ৬৫১ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের বিপরীতে বৈধ ও গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায় ২ কোটি ৪৪ লাখ ৬৬ হাজার ২৩৪ টাকা। বাকি সম্পদ অর্থাৎ ২ কোটি ৩৫ লাখ ৯৮ হাজার ৪১৭ টাকার সম্পদ অবৈধভাবে অর্জনের প্রমাণ পেয়েছে দুদক।

চট্টগ্রামের পাথরঘাটায় ছয়তলা বাড়ি, ষোলশহরে একটি বাড়ি, ৪৫ ভরি স্বর্ণ, একটি কার ও মাইক্রোবাস, কক্সবাজারের একটি ফ্ল্যাটের মালিক প্রদীপের স্ত্রী চুমকি। প্রদীপের ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থে স্ত্রী চুমকি এসব সম্পদ অর্জন করেন বলে দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তে উঠে এসেছে। এছাড়া চুমকি নিজেকে মাছ ব্যবসায়ী দাবি করলেও তার কোনো প্রমাণ পায়নি দুদক।

২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর মেরিনড্রাইভ চেক পোস্টে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে গুলি করে হত‌্যা করা হয়। এ ঘটনায় একই বছরের ৬ আগস্ট থেকে কারাগারে রয়েছেন ওসি প্রদীপ। সিনহা হত্যা মামলায় প্রদীপকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *