ঢাকা, রবিবার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৯ অপরাহ্ন
জনজীবনে অস্বস্তির পর এবার মামলাজটের কারণও রোহিঙ্গারা !
সায়ীদ আলমগীর কক্সবাজার ::

মিয়ানমার সরকারের নিপীড়নের শিকার হওয়া রোহিঙ্গাদের মানবিক আশ্রয় দিতে গিয়ে এখন অস্বস্তি নেমে এসেছে কক্সবাজারের স্থানীয়দের জনজীবনে। নিত্য অপরাধ, মাদক কারবারসহ নানা কারণে বিষফোঁড়া হয়ে উঠেছে আশ্রিত রোহিঙ্গারা। জনজীবনে অস্বস্তির পাশাপাশি সম্প্রতি আদালতে মামলাজটের কারণও হয়ে উঠছে তারা। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জেলা বিচারিক প্রশাসন। এটি প্রশমনে জেলা আইনজীবী সমিতি ও আইনজীবীদের সহযোগিতা চেয়েছেন জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল।

সূত্র মতে, রোহিঙ্গাদের কারণে পুরো কক্সবাজার জেলায় দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে নানা অপরাধ। রোহিঙ্গাদের নিয়ে চরম অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে জেলাবাসী। রোহিঙ্গারা ক্যাম্প ছেড়ে জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। তাদের কারণে জেলাবাসী আজ চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

তথ্য মতে, রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে মাদক ও অস্ত্রের ঝনঝনানি এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। প্রতিদিন কোনো না কোনো ঘটনা ঘটাচ্ছে তারা। ক্যাম্পগুলোতে সশস্ত্র তৎপরতা, মানবপাচার, চাঁদাবাজি, অপহরণের মতো ঘটনা ঘটছে প্রতিদিন। কারণে-অকারণেই রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করছে। ক্যাম্পে বসেই ইয়াবার ব্যবহার বাড়াচ্ছে তারা। তাদের কারণে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে পর্যটননগরী কক্সবাজারে।

এসব বিষয় নিয়ে জেলা বিচারিক প্রশাসন পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। সেই পর্যবেক্ষণ নিয়ে সিনিয়র জেলা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ক্যাম্পে রোহিঙ্গারা মাদক কারবার, হত্যা, গুম, ধর্ষণ, মানবপাচার, ডাকাতি, অপহরণসহ নানা অপরাধমূলক কাজে লিপ্ত হচ্ছে। এতে ওই এলাকার পাশে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতিসহ জনজীবনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে শৃঙ্খলা রক্ষায় ও অপরাধ দমনে হিমশিম খাচ্ছে। দিনদিন তাদের অপরাধ কর্ম বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাদের বিরুদ্ধে মাদক, হত্যা, গুম, ডাকাতি, অপহরণসহ বিভিন্ন অপরাধে মাত্রাতিরিক্ত মামলা হচ্ছে।

এতে আরও জানানো হয়, রোহিঙ্গাদের নামীয় হত্যা, অপহরণ, মাদক, ডাকাতি মামলাসহ অন্যান্য মামলায় তদন্তের নির্ধারিত সময়ের আগে জামিনের বিষয়ে তদবির না করে তদন্ত কার্যে সহযোগিতা করা সংশ্লিষ্ট সবার নৈতিক দায়িত্ব। উল্লিখিত মামলাগুলোয় আসামির পক্ষে ফৌজদারি মিস মামলা মূলে জামিন বিষয়ে কোনো আদেশ প্রচারিত হলে তার পরবর্তীকালে একই আসামির জামিনের জন্য চার মাসের মধ্যে ভিন্ন কোনো ফৌজদারি মিস দরখাস্ত দাখিল করা থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। যদি করা হয় তাতে বিচারকের শুনানি কাজে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়ে স্বাভাবিক মামলা নিষ্পত্তিতে বিঘ্ন ঘটছে।

এ বিষয়ে সবার জ্ঞাতার্থে ও কার্যার্থে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ, প্রথম ও দ্বিতীয় আদালত, কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অনুলিপি দেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিটি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত এবং জেলা বারের নোটিশ বোর্ডেও টানানো হয়েছে।

জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী বাপ্পী শর্মা বলেন, বিচারিক প্রশাসনের নোটিসের আগেই বিষয়টি নিয়ে আমাদের সচেতন হওয়া উচিত ছিল। লোভের কারণে রোহিঙ্গাদের জামিনে আমরা প্রতিযোগিতামূলক ভাবে দৌড়াই। এ অবজারভেশন সেটাই স্পষ্ট করে দিয়েছে। এখন হলেও আমাদের দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেওয়া বাঞ্ছনীয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *