পাহাড় রক্ষায় যেখানে সারা দেশের সচেতন মহল সক্রিয় রয়েছে, সেখানে খোদ কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এক্সকাভেটর দিয়ে একটি বিশাল পাহাড় কেটে ফেলছে। কক্সবাজার শহরের কলাতলী বাইপাস সড়কের পাশে আবাসিক ফ্ল্যাট উন্নয়ন প্রকল্প এলাকায় দুই দিন ধরে চলছে এই নিধনযজ্ঞ। প্রকল্পটিতে শুরু থেকে পরিবেশ আইন উপেক্ষা করা হচ্ছে। পরিবেশ কর্মকর্তারা একাধিকবার পরিদর্শন করলেও কোনো ব্যবস্থা নেননি। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে পরিবেশবিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো। আর সরকারের পরিবেশ কর্মকর্তা বলছেন, পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হলে সেই সূত্র ধরে তারা পদক্ষেপ নেবেন।
শনি ও রবিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের এই প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা দেখা গেছে, প্রকল্প-১ এলাকায় নির্মাণাধীন বহুতল ভবনের পূর্ব পাশে বিশাল আকৃতির একটি পাহাড় কাটা হচ্ছে। বিভিন্ন গাছপালা ও ঘন জঙ্গলে ভরা পাহাড়টি কাটা হচ্ছে দুটি এক্সকাভেটর দিয়ে। পাহাড় কেটে ট্রাকে তুলে নেওয়া হচ্ছে। মাটি যাচ্ছে প্রধান সড়কের পাশে নিচু জমিতে। কাজ তদারক করছেন বিভিন্ন পর্যায়ের ১০-১২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। তারা পাহাড় কাটার বিষয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে রাজি হননি।
তবে নাম না জানিয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, ‘পাহাড়টির একাংশের মালিক কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। কাজ বাকি থাকায় মালিকদের ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে দ্রুত কাজ শেষ করার তাগিদ রয়েছে। পাহাড়ের একাংশ কেটে সেখানে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হবে।’ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনায় পাহাড় কাটার কাজ চলছে বলে তিনি দাবি করেন।
প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ রিশাদ উন নবী এ বিষয়ে বলছেন, ‘এটা পাহাড় না। আসলে আমাদের জমির মধ্যে ভবনের পেছনে একটা টিলা পড়ে গেছে। সেখানে আমাদের ফ্ল্যাট প্রকল্পের সাবস্টেশনসহ আনুষঙ্গিক অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ করা হবে। যার কারণে দ্রুত কাজ চলছে।’
প্রকল্প শুরুর সময় পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে বিভিন্ন শর্তে ছাড়পত্র পেয়েছে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সে সময় পরিবেশ ছাড়পত্রের শর্ত লঙ্ঘন করে পাহাড়ের কিছু অংশ এক্সকাভেটর দিয়ে কেটে নেওয়া হয়। তখন পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে একাধিকবার পরিদর্শন করা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আর ওই কেটে নেওয়া অংশে দুটি ভবনের একাংশ গড়ে তোলা হয়েছে। বর্তমানে ভবন দুটির পূর্ব পাশে পাহাড়টি কেটে ফেলা হচ্ছে।
কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তর চুপচাপ দর্শকের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। কক্সবাজার পরিবেশ দপ্তরের উপপরিচালক মো. নুরুল আমিন বলেন, ‘উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কোথায় ফ্ল্যাট নির্মাণ করছে তা আমার জানা নেই। তথ্য দিলে সেখানে ছাড়পত্রের শর্ত লঙ্ঘন করা হচ্ছে কি না, খতিয়ে দেখা হবে। নিউজ করেন। নিউজের সূত্র ধরে আমরা পদক্ষেপ নেব।’
মো. নুরুল আমিন জানেন না দাবি করলেও পরিবেশ কর্মকর্তারা প্রকল্পটি একাধিকবার পরিদর্শন করেছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে খবর রয়েছে।
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মতো একটি দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান পাহাড় কাটার ঘটনায় এবং পরিবেশ কর্মকর্তা বিষয়টি না জানায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিবেশবাদীরা। স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এনভায়রনমেন্ট পিপলের প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ বলেন, ‘কক্সবাজারে এমনিতেই ব্যক্তিপর্যায়ে উদ্বেগজনক হারে পাহাড় কাটার ঘটনা ঘটছে। এ অবস্থায় প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে এভাবে পাহাড় কাটা শুরু হলে কক্সবাজারে পাহাড় বলতে কিছু থাকবে না।’ দ্রুত পাহাড় কাটা বন্ধ করে কেটে ফেলা পাহাড় পুনরায় ফিরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি কক্সবাজারের প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় এগিয়ে আসার জন্য কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
সূত্র -প্রতিদিনের বাংলাদেশ
Leave a Reply