ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৬ পূর্বাহ্ন
যেভাবে চট্টগ্রামে ভূয়া ব্রিগেডিয়ার জেনারেল চক্র ধরা
উখিয়া নিউজ ডেস্ক :

চট্টগ্রাম বন্দন থানা পুলিশের অভিযানে এক ভুয়া ব্রিগেডিয়ারসহ প্রতারক চক্রের চারজনকে আটক করা হয়েছে। চক্রটি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পরিচয় দিয়ে বন্দর থানা এলাকায় অপকর্ম করে আসছিলেন।

রোববার রাতে নগরীর বন্দর থানার কলসিদীঘির ধুমপাড়া সাগরপাড় এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার চারজন হলেন হারিফ মিয়া (২৩), ইয়ার হোসেন (৪২), মিলন খান (৩০) ও ইউসুফ মিয়া (৪০)।

এছাড়া নামে-বেনামে ১৭টি সিম কার্ড জব্দ এবং সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলাবাহিনীতে নিয়োগ দেওয়ার নামে মানুষজনের সঙ্গে প্রতারণা করার প্রমাণ পায় পুলিশ।

এই চক্রের হাতে প্রতারিত এক ভুক্তভোগী পুলিশকে জানান, চক্রের সদস্যরা ৬০-৭০ জন থেকে চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

বন্দর জোনের সহকারী উপ পুলিশ কমিশনার আরিফ হোসেন জানান, সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল বা কখনও তার আপন ভাই পরিচয় দিয়ে একটি চক্র সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা ও পুলিশ সদস্যদের বিভ্রান্তি করে আসছিল। তাদের প্রাথমিক টার্গেট হলো সেনাবাহিনীর নাম পরিচয় ব্যবহার করে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষ থেকে টাকা আত্মসাৎ করা।

তিনি আরও জানান, এই কাজে তারা বিভিন্ন কোম্পানির সিম কার্ড ব্যবহার করত। তাদের কাছ থেকে ১৭টি সিম কার্ড জব্দ করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এদের মধ্যে হারিফ মিয়াই মূলহোতা বলে আমরা জানতে পেরেছি।

আরিফ হোসেন জানান, হারিফ থানার উপ-পরিদর্শক পদের এক পুলিশ সদস্যদের কল দিয়ে সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শফকুল আলমের পরিচয় দিয়ে বিব্রত করে অনৈতিক কাজ করার তদবির করত। সে ব্রিগেডিয়ার জেনারেলের একটি ভিজিটিং কার্ড ব্যবহার করে এসব কাজ করতো। আমাদের সন্দেহ হলে আমরা অভিযান চালিয়ে এই চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করি।

যেভাবে ধরা হয় কথিত ব্রিগেডিয়ারকে

ভুয়া ব্রিগেডিয়ার আটকের বিষয়ে বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সঞ্জয় কুমার সিনহা বলেন, ‘বন্দর থানা এলাকায় পুলিশের একটি পেট্রোল টিমের এক এসআই তার পেট্রোল রেডি করছিল। কলসীদীঘি এলাকার সাগরপাড়ে একজন বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়ার মধ্যে ভাড়া নিয়ে একটু ঝামেলা হয়েছিল। আশপাশের লোকজন যখন ৯৯৯ এ যখন কল দেয় তখন তারা রেসপন্স করে।’

তিনি বলেন, ‘পেট্রোল টিম গেলে সে বাড়ির ইনচার্জ মিলন খান আমাদের পুলিশ অফিসারকে এসে মোবাইল দিয়ে বলে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল স্যার এসে কথা বলবে। আপনি একটু কথা বলেন। তখন পুলিশের ওই সদস্য সম্মানের সঙ্গে মোবাইলের অন্য পাশে থাকা ব্যক্তির পরিচয় জানতে চাইলে ওপাশ থেকে বলেন, যে মোবাইল ধরিয়ে দিয়েছে সে আপনাকে বলেনি আমি কে? আপনি আবার আমার নাম জিজ্ঞেস করছেন? আপনি ওখানে কি জন্য গিয়েছেন? পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণকে বলবো? আপনার বাড়ি কোথায়? তখন ওই এসআই তার বাড়ি ফেনী বললে মোবাইলের ওপাশে থাকা ব্যক্তি বলেন, ফেনীর এসপিকে আপনার বাড়িতে পাঠাবো?’

এরপর পুলিশের ওই সদস্য বিব্রত হয়ে কল কেটে আমাকে কল দিয়ে বিষয়টি জানায়। তখন আমি তাকে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলি।

তিনি আরও বলেন, ‘সেনাবাহিনীর একজন প্রধান ব্যক্তি পুলিশের এক এসআইকে কল দিয়ে এভাবে তদবীর করবে বা হুমকি দেবে, সেটা আমাদের কোনোমতেই বোধগম্য হচ্ছিল না। পরে আমি ওই নম্বর সংগ্রহ করে আমাদের একটি গ্রুপে দিয়ে অন্যান্য অফিসারদের সতর্ক থাকতে বলি। তখন অনেকে আমাকে জানায় অনেকদিন ধরে তাদের ‘ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শফিকুল আলম’ পরিচয়ে কোনো কাজে গেলে কল দিয়ে বিভ্রান্ত করে। এরপর আমার পরিচিত এক সেনাবাহিনীর মেজরের সঙ্গে আমি কথা বললাম এবং তাকে ওই ভিজিটিং কার্ড পাঠিয়ে সেটা যাচাই করতে অনুরোধ করলাম। পরে তিনি বললেন, কার্ডটি ভুয়া। এরপর আমরা এই চক্রের চার সদস্যকে একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করি।’

বন্দর থানার ওসি বলেন, ‘এ ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে তাদের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করেছে। তাদের সঙ্গে এই কাজে আর কেউ জড়িত আছে কি-না, আমরা খতিয়ে দেখছি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *