ঢাকা, শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৭ পূর্বাহ্ন
কক্সবাজারে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত, দুর্ভোগে হাজারও পরিবার
উখিয়া নিউজ ডেস্ক :

কক্সবাজারে চকরিয়ায় বন্যা পরিস্থিতির অপরিবর্তিত রয়েছে। টানা বৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল ও জোয়ারের পানিতে নতুন করে আরও বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এতে উপজেলার ১টি পৌরসভাসহ ১৮টি ইউনিয়নের তিন লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান।

বুধবার (৯ জুলাই) সকালে এ কথা জানান তিনি।

ইউএনও জেপি দেওয়ান বলেন, সরকারিভাবে জরুরি বরাদ্ধ এখনো পৌঁছায়নি। তবে তাদের নিয়মিত বরাদ্ধ চাল বিতরণ করা হচ্ছে।

এদিকে চকরিয়া পেকুয়ায় বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন সংসদ সদস্য জাফর আলম, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তারা।

ক্সবাজার জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, জেলায় সবেচেয়ে বেশি প্লাবিত এলাকা চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলায়। দুই উপজেলার একটি পৌরসভাসহ ২৫টি ইউনিয়ন প্লাবিত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। যেখানে তিন লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বেসরকারি হিসেবে এর সংখ্যা আরও বেশি। কী পরিমাণ ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে এখনো জানা যায়নি।

তবে পানি নেমে যাওয়ার পর ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে বলে জানান চকরিয়া প্রকল্প কর্মকর্তারা।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, পাহাড়ি ঢলের প্রবেশমুখ সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন ও কাকারা ইউনিয়ন ৪ থেকে ৫ ফুট পানির নিচে তলিয়ে আছে। জিদ্দাবাজার-কাকারা-মানিকপুর সড়কের কয়েকটি অংশের ওপর দিয়ে মাতামুহুরী নদী থেকে উপচে আসা ঢলের পানি প্রবাহিত হওয়ায় বসতঘরগুলো পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। শুকনো খাবার ছাড়া রান্নার কোনো ব্যবস্থা নেই।

কক্সবাজারের পানি বোর্ডের কর্মকর্তা মোরশেদুল আলম ও মোহাম্মদ সালমান জানান, চকরিয়ার লক্ষ্যারচর, কৈয়ারবিল, বরইতলী, হারবাং, সাহারবিল, চিরিঙ্গা, পূর্ব বড় ভেওলা, বিএমচর, পশ্চিম বড় ভেওলা, ঢেমুশিয়া, কোনাখালী, ফাঁসিয়াখালী, বদরখালী, ডুলাহাজারা, খুটাখালী বদরখালীসহ ও চকরিযা তিনটি বেড়িবাঁধটি ভেঙে উজান থেকে নেমে আসা বন্যার পানি লোকলয়ে প্রবেশ করতে শুরু করেছে। এসব ইউনিয়নের নিচু গ্রামগুলোতেই পানি উঠেছে।

চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরী বলেন, অতিবৃষ্টির কারণে পৌরসভার অধিকাংশ ওয়ার্ড পানির নিচে তলিয়ে গেছে। স্ব-স্ব ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা পানি যাতে দ্রুত নিচের দিকে নেমে যায়, সেজন্য কাজ করছে। এ ছাড়াও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ১ নম্বর বেড়িবাঁধটি রক্ষার জন্য বালির বস্তা ফেলা হচ্ছে।

এদিকে চকোরিয়ার বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের বন্যার পানির আঘাতে ১০০ ফুটের মতো বাউন্ডারি দেওয়ালের পার্শ্ববর্তী স্থান হতে মাটি সরে যাওয়াতে দেয়াল ধসে পড়েছে বলে জানান সাফারি পার্কের রেঞ্জ কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেছেন, বন্যাকবলিত প্রায় এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। প্রশাসনের হিসেব অনুযায়ী প্রায় দুই লাখ লোক পানিবন্দি রয়েছে। সরকারি হিসাবে এর সংখ্যা আরও বেশি। এ ছাড়া বন্যাকবলিত মানুষদের নিকটস্থ আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। যেসব মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন তাদের বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবার দেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, যারা ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে চাচ্ছেন না সেসব পরিবারগুলোকে প্রাথমিকভাবে শুকনো খাবার দিতে সব চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চকরিয়ার বন্যার ব্যাপারে জেলা প্রশাসককে অবহিত করে ত্রাণ বরাদ্দ চেয়েছি।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, গত কয়েক দিন ধরে প্রবল বর্ষণে চকরিয়ায় পেকুয়া প্রতিটি উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা মাঠে রয়েছে। তারা বোট নিয়ে পানিবন্দি মানুষের ঘরে ঘরে যাচ্ছে এবং তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *