ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:০০ পূর্বাহ্ন
কেন্দ্রে ভোটার নেই, নেতাকর্মীদের ওপর ক্ষুব্ধ আ.লীগ প্রার্থী
উখিয়া নিউজ ডেস্ক :

তখন বেলা ১১টা। এ সময় চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়তলী থানার ইসলামিক ফাউন্ডেশন বিভাগীয় কার্যালয় ভোট কেন্দ্রে যান চট্টগ্রাম-১০ (হালিশহর-ডবলমুরিং) আসনের উপনির্বাচনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো. মহিউদ্দিন। তার সঙ্গে হুড়মুড় করে কেন্দ্রে ঢুকে পড়েন বিপুল কর্মী-সমর্থক। তবে তাদের নিবৃত্ত করে কয়েকজনকে নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করেন তিনি। ভবনের নীচ তলায় একটি বুথে ইভিএম মেশিনে তখন পড়েছে মাত্র ৯টি। ভোটের এমন চিত্র দেখে দারুণভাবে ক্ষুব্ধ ও হতাশ হন তিনি। ভোটের সংখ্যা এত কম কেন- সঙ্গে থাকা স্থানীয় নেতাকর্মীদের কাছে বিষয়টি জানতে চান তিনি। কিন্তু সদুত্তর না পেয়ে এক পর্যায়ে কয়েকজন নেতাকর্মীকে বকাবকি করেন এবং তারা কী করছেন জানতে চান।

এ নিয়ে তার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে ভোট হচ্ছে। ভোটাররা আসছেন এবং তাদের পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিচ্ছেন।’

এ সময় কেন্দ্রটির পাশাপাশি যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও ইমাম প্রশিক্ষণ ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। এই দু’টিতে গিয়েও হতাশ হন তিনি।

সংশ্লিষ্ট প্রিসাইডিং অফিসাররা জানিয়েছেন, ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ৩ হাজার ১৬৯ জন ভোটার থাকলেও ১১টা পর্যন্ত ভোট পড়ে ১১৪টি। আর যুব উন্নয়ন কেন্দ্রে ২ হাজার ২৮৫ জন ভোটার থাকলেও ভোট পড়ে ৭০টি।

নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে ভোটের সঙ্গে যুক্ত একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, মহিউদ্দিন বাচ্চুর জয় নিশ্চিত। তবে তিনি ভোট বাড়াতে পারবেন- এমনটি আশা করছিল দল। ফলে ভোটের সংখ্যা নিয়ে চাপের মুখে আছেন তিনি।

আজ সকাল ৮টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। তবে তেমন একটা ভোটার নেই ভোট কেন্দ্রগুলোতে। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ছাড়া অন্যকোনো প্রার্থীর এজেন্ট নেই ভোট কেন্দ্রে।

সকাল ৯টায় পাঁচলাইশ থানার আরকান হাউজিং সোসাইটিস্থ নতুনকুঁড়ি আইডিয়াল স্কুল কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, এই কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি খুব কম। এই কেন্দ্রে ২ হাজার ৫৬৬ জন ভোটার থাকলেও কেন্দ্রের ছয়টি বুথে এক ঘণ্টায় ভোট পড়েছে মাত্র ৩৪টি। আর এই ছয়টি বুথের কোনোটিতে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্যকোনো প্রার্থীর এজেন্টও দেখা যায়নি।

এই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মনিষ দেবনাথ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ছাড়া অন্যকোনো প্রার্থীর এজেন্ট দেওয়া হয়নি। আর ভোটার আসছেন। তবে কম। বেলা বাড়লে ভোটারও বাড়বে।’

ভোটার খুব একটা না থাকায় নিজেদের মধ্যে আড্ডায় সময় পার করতে দেখা যায় সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী কর্মকর্তা- এজেন্টদের। ভোট কেন্দ্রের বাইরে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর কয়েকজন সমর্থককে তৎপর দেখা যায়। কেন্দ্রের নিরাপত্তায় পুলিশ সদস্য থাকলেও ঝামেলা না থাকায় আয়েশে সময় পার করছেন তারাও।

রোববার বিকেল ৪টা পর্যন্ত ১৫৬টি কেন্দ্রের ১২৫১টি বুথে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হবে।

উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের মো. মহিউদ্দিন বাচ্চু (নৌকা), জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. সামসুল আলম (লাঙ্গল), তৃণমূল বিএনপির দীপক কুমার পালিত (সোনালী আঁশ), বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তি জোটের রশীদ মিয়া (ছড়ি), স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আরমান আলী (বেলুন) ও মনজুরুল ইসলাম ভূঁইয়া (রকেট)।

রিটার্নিং অফিস সূত্রে জানা যায়, উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণের জন্য ৪ হাজার ১০৬ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা এবং ২ হাজার ১১০টি ইভিএম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নির্বাচনী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের সঙ্গে দায়িত্ব পালনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আইনানুগ নির্দেশনা প্রদানের জন্য ২৯ জুলাই থেকে ১ আগস্ট পর্যন্ত দায়িত্ব পালনের জন্য ৮ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং ২ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন।

গত ২ জুন ডা. আফছারুল আমীনের মৃত্যুতে আসনটি শূন্য হওয়া এ নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা হচ্ছে ৪ লাখ ৮৮ হাজার ৬৩৩ জন। এদের মধ্যে ২ লাখ ৪৮ হাজার ৯২৯ জন পুরুষ এবং ২ লাখ ৩৯ হাজার ৬৮০ জন নারী ভোটার।

চট্টগ্রাম জেলার সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম-১০ আসনের উপনির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ১৬৪ জন প্রিসাইডিং অফিসার, ১৩১৪ জন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার এবং ২৬২৮জন পোলিং অফিসার ভোটগ্রহণের দায়িত্ব পালন করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *