কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশে সফররত যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিনিধিদল। তারা আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এ সময় রোহিঙ্গারা জানান, বাংলাদেশের প্রতি তারা কৃতজ্ঞ। ক্যাম্পে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা রয়েছে। তবে যথেষ্ট শিক্ষাব্যবস্থা নেই। এই জীবন তাদের কাছে বন্দি মনে হয়। যত দ্রুত সম্ভব তারা স্বদেশে ফিরে যেতে চান। প্রত্যাবাসনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র যেন মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা একটি এয়ারলাইনসের ফ্লাইটে বুধবার (১২ জুলাই) সকাল ৯ টায় কক্সবাজার পৌঁছান। তাদের নেতৃত্বে আছেন দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের নাগরিক নিরাপত্তা, মানবাধিকার ও গণতন্ত্রবিষয়ক আন্ডার-সেক্রেটারি উজরা জেয়া। এ ছাড়াও আছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু, ঢাকায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ও দক্ষিণ এশিয়ার শরণার্থীবিষয়ক সমন্বয়কারী ম্যাককেঞ্জি রোয়েসহ ১০ সদস্য।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সকালে কক্সবাজার পৌঁছে সড়কপথে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যান প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। সকাল ১০ টা ৫০ মিনিটে উখিয়ার বালুখালী ৯ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৌঁছান তারা। সেখানে তারা জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনের (ইউএনএইচসিআর) রোহিঙ্গা তথ্য হালনাগাদ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। এরপর তারা হেঁটে একে-একে পুষ্টি কেন্দ্র, বিশ্বখাদ্য কর্মসূচি-ডব্লিউএফপির খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রের কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।
তারপর ১১ নম্বর ক্যাম্পের কমিউনিটি সেন্টারে যান উজরার নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিরা। সেখানে একদল রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন তারা। বৈঠকে ১০ জন রোহিঙ্গা নারী ও ১০ জন পুরুষ উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র বলছে, ক্যাম্পে কার্যক্রম শেষ করে কক্সবাজার শহরে ফিরে গেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা। কক্সবাজারে কর্মরত আন্তর্জাতিক সংস্থা, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বুধবার বিকালে তাদের বৈঠক করার কথা। এরপর ঢাকা ফিরবেন তারা।
ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে যে বৈঠক হয়েছে, তাতে উপস্থিত ছিলেন ১১ নম্বর ক্যাম্পে আশ্রিত মোহাম্মদ ইসমাইল। তিনি জানান, প্রতিনিধিদলটি ক্যাম্পের শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চেয়েছে। তাদের জানানো হয়, শিক্ষার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। উচ্চশিক্ষার সুযোগ নেই। তবে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা রয়েছে বলে তাদের জানানো হয়।
মো. ইউসুফ নামের আরেক রোহিঙ্গা জানান, প্রতিনিধিরা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে রোহিঙ্গাদের মতামত জানতে চেয়েছেন। ক্যাম্পে আশ্রিত জীবনকে বন্দি জীবন হিসেবে দেখছেন রোহিঙ্গারা। দ্রুত সময়ের মধ্যে তারা মিয়ানমারে ফিরে যেতে চান। এজন্য মিয়ানমারের ওপর যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক মহল যেন চাপ প্রয়োগ করে; এ নিয়ে প্রতিনিধিদের কাছে অনুরোধ করা হয়।
ক্যাম্পে খাদ্য সহায়তা কমিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে প্রতিনিধিদলের কাছে আপত্তি জানানো হয়েছে বলে জানান মোহাম্মদ ইদ্রিস। তাদের দাবি ছিল, খাদ্য সহায়তা যেন আগের মতো আবার দেওয়া হয়।
রোহিঙ্গাদের সব দাবি শুনেছেন প্রতিনিধিরা। এর সমাধানের আশ্বাস রোহিঙ্গাদের দেওয়া হয়েছে বলে জানান ছৈয়দ নুর।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বৈঠক ছাড়াও প্রতিনিধিদলের সঙ্গে কথা বলতে তৎপরতা চালায় আরেক দল রোহিঙ্গা। তাদের নেতৃত্ব দেন রোহিঙ্গাদের সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জোবায়ের। দীর্ঘ সময় পর প্রতিনিধিদলের সঙ্গে তারা কথা বলার সুযোগ পান। এ সময় উজরা জেয়াকে তারা একটি চিঠি দেন।
মোহাম্মদ জোবায়ের জানান, চিঠিতে বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতার বিষয়টি জানানো হয়েছে। এ ছাড়া দ্রুত সময়ের মধ্যে স্বদেশে প্রত্যাবাসনসহ রোহিঙ্গাদের নানা দাবি তুলে ধরা হয়।
Leave a Reply