টাইগারদের পাড়ার ছোটভাই বানিয়ে ছাড়ল প্রোটিয়ারা। প্রথমে তাসকিন-সাকিবদের তুলোধোনা করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ২০৬ রানের পাহাড় গড়ল দক্ষিণ আফ্রিকা।
পরে আফ্রিকান পেসারদের দাপুটে বোলিংয়ে মুড়িমুরখির মতো উইকেট হারাল টাইগার ব্যাটাররা। ১১ টাইগার মিলে রাইলি রুশোর ১০৯ রানই করতে পারল না।
২০৬ রানের তাড়ায় এক সময় মনে হচ্ছিল পুরো ২০ ওভার খেলতে পারবে না বাংলাদেশ। দলীয় সংগ্রহ একশো ছাড়াতে পারবে না।
কুড়ি ওভার পর্যন্ত না টিকলেও একশ পাড় করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ।
১৬.৩ ওভারে ১০১ রানেই গুটিয়ে গেছে বাংলাদেশের ইনিংস। ফলে ১০৪ রানের বিশাল ব্যবধানে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচ হেরে গেছে টাইগারা।
টি-টোয়েন্টিতে যা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় হার। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় হার ৭৫ রানে, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১৬ সালের আসরে।
টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে বড় হার ছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে, ২০০৮ সালে হেরেছিল ১০২ রানে।
সিডনিতে আজকের ম্যাচে ন্যূনতম প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি বাংলাদেশ দল। বোলিং, ফিল্ডিং ও শেষে ব্যাটিং – কোনো ডিপার্টমেন্টেই আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে পারেনি টাইগাররা।
বড় লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটা ভালো হয় অবশ্য বাংলাদেশের। কাগিসো রাবাদার করা প্রথম ওভারে সৌম্য-শান্ত জুটি তুলেন ১৭ রান।
কিন্তু এরপর বাংলাদেশ দলে মড়ক লাগে। একের পর এক ব্যাটার উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেন।
৬৬ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ। এরপর বাকি ২৩ রান করতে আরও ৪ উইকেট হাওয়া।
৮৯ রানে ৯ উইকেট হারিয়ে যখন বিশাল ব্যবধানে পরাজয়ের অপেক্ষায় ধুঁকছিল বাংলাদেশ তখন ১৬তম ওভারে তাবরাইজ শামসিকে ছক্কা হাঁকিয়ে দলীয় সংগ্রহ একশ পার করেন মোস্তাফিজ।
১৭তম ওভারে নরকিয়ার তৃতীয় বলে লেগ স্টাম্প উড়ে যায় অপর ব্যাটার তাসকিনের। ২১ বল বাকি থাকতেই লজ্জার পরাজয় বরণ করে নিলেন সাকিব আল হাসান।
আজ বাংলাদেশ শিবিরে তাণ্ডব চালিয়েছে নরকিয়া। ৩.৩ ওভারে মাত্র ১০ রান দিয়ে ৪ উইকেট শিকার করেছেন তিনি।
তৃতীয় ওভারে ওপেনার সৌম্যকে দিয়ে নরকিয়ার উইকেট উদযাপন শুরু হয়। ফুল লেংথ করা ডেলিভারিটি ক্রস ব্যাটে খেলেন সৌম্য। টাইমিং হয়নি। ব্যাটের কানা ছুঁয়ে বল কিপারের গ্লাভসে জমা পড়ে।
সৌম্য ফেরেন ৬ বলে ১৫ রান করে। এর দুই বলই সাজঘরের পথ ধরেন শান্ত। নরকিয়ার ১৪৮ কিমি গতির বল শান্তর স্টাম্প উড়িয়ে দেয়। ১ চারে ৯ বলে ৯ রান করেন শান্ত।
৩ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান দাঁড়ায় ২ উইকেটে ২৭। লিটন দাসকে নিয়ে উইকেটে আসেন সাকিব। জোড়া ধাক্কার পর টিকলেন না তিনিও।নরকিয়ার তৃতীয় শিকারে পরিণত হন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
নরকিয়ার স্টাম্প সোজা বলটি শাফল করে লেগ সাইডে খেলতে যান সাকিব। বল আঘাত হানে প্যাডে। এলবিডব্লিউর আবেদন করে দক্ষিণ আফ্রিকা। তাতে সাড়া দিয়ে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার।
৪ বলে ১ রান করে দলকে আরও বিপদে ফেলে বিদায় নিলেন অধিনায়ক।
৫ ওভার শেষে ৩ উইকেট হারিয়ে ৪৩ রান করে টাইগাররা। লিটন দাসের সঙ্গী হন অলরাউন্ডার আফিফ হোসেন। কিন্তু অধিনায়কের পথ ধরলেন আফিফও।
কাগিসো রাবাদার গতিতে পরাস্ত হয়ে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন তিনি।
ওভারের পঞ্চম বলে বাড়তি বাউন্স ও গতির কারণে পুল করে টাইমিং করতে পারেননি আফিফ। মিড-অফে সহজ ক্যাচ নেন ওয়েইন পার্নেল। ৫ বলে ১ রান করে ফেরেন আফিফ।
এরপর তেড়েফুঁড়ে মারতে গিয়ে বিদায় নেন মিরাজ। দশম ওভারে তাবরাইজ শামসিকে উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এসে মারতে গিয়ে বল উঠে যায় উপরে। লং-অফে ক্যাচ নেন এইডেন মারক্রাম। ১৩ বলে ১১ রান করে ফিরলেন মিরাজ।
১০ ওভার শেষ হওয়ার আগেই ৬৬ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে টাইগাররা।
২১ রান খেলতে থাকা লিটনের সঙ্গী হন মোসাদ্দেক হোসেন। তিনিও মিরাজের নকল করতে গিয়ে শূন্য রানেই ফেরেন।
কেশভ মহারাজকে উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এসে খেলতে এসে ব্যাটেই বল লাগাতে পারেননি তিনি। বল গ্লাভসে জমিয়ে স্টাম্প ভেঙে দেন কুইন্টন ডি কক। ৩ বলে শূন্য রান করে ফিরলেন এই মিডল অর্ডার ব্যাটার।
এরপর কিপার-ব্যাটার সোহানের পালা। তিনি ফেরেন ৬ বল খেলে মাত্র ২ রানে।
তাবরাইজ শামসির শেষ বলটি স্লগ করেন সোহান। ফাইন লেগে সহজ ক্যাচ নেন নরকিয়া। বাকি সবার আসা-যাওয়া দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে পড়েন লিটনও।
সোহানের মতো তাবরাইজকে স্লগ করতে গিয়ে লিটন ধরা পড়েন ডিপ স্কয়ার লেগে ত্রিস্টান স্টাবসের হাতে। একটি করে ছক্কা-চারে ৩১ বলে ৩৪ রান করে সাজঘরে ফিরলেন লিটন।
১৪ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান ৮ উইকেটে দাঁড়ায় ৮৫। এরপর ২ বলে শূন্য রানে রানআউট হয়ে ফেরেন টেলএন্ডার হাসান।
১৫ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান গিয়ে দাঁড়ায় ৯ উইকেটে ৯১। ১৭তম ওভারে নরকিয়ার চতুর্থ শিকারে পরিণত হন তাসকিন। ১০ রান করতে পারেন এ টেলএন্ডার।
মূলত নরকিয়া ও তাবরাইজ শামসিতে ধসে গেছে বাংলাদেশের ইনিংস। মাত্র ১০ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন নরকিয়া। আর ৪ ওভারে ২০ রান দিয়ে ৩ উইকেট শিকার করেছেন তাবরাইজ। একটি করে উইকেট পেয়েছেন রাবাদা ও কেশভ মহারাজ।
Leave a Reply