ঢাকা, শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:০১ পূর্বাহ্ন
চেয়ারম্যানকে ‘ভোট না দেওয়ায়’ রেশন কার্ড বাতিল !
উখিয়া নিউজ ডেস্ক :

ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে ভোট না দেওয়ায় উদ্দেশ্যমূলকভাবে এক গ্রামের ৬৩ সুবিধাভোগীর রেশন কার্ড (১০ টাকার চাল) বাতিলের অভিযোগ উঠেছে উপজেলার চতুল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

স্থানীয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, উপজেলার চতুল ইউনিয়নের (১ নম্বর ওয়ার্ড) হাসামদিয়া গ্রামের সাহিদ বিশ্বাস, সঞ্জয় শীল, কুদ্দুস মোল্লা, ফাতেমা বেগম, আয়েশা খাতুনসহ মোট ৬৩টি পরিবার দীর্ঘদিন ধরেই প্রধানমন্ত্রীর মানবিক সহায়তা (রেশন কার্ড) ভোগ করে আসছিলেন। উচ্চমূল্যের এই বাজারে ১০ টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি চাল কিনতে পেরে জীবনযাত্রায় অনেকটাই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে আসছিল নিম্ন আয়ের এ পরিবারগুলো। কিন্তু চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম নির্বাচিত হওয়ার পর সম্প্রতি নতুন তালিকা প্রস্তুতের সময় তাদের কার্ডগুলো বাতিল করে দেন। মাত্র একটি গ্রাম থেকে একই সময়ে একসঙ্গে এতগুলো কার্ড বাতিল হয়ে যাওয়ায় এ নিয়ে ব্যাপক হইচই শুরু হয়। একপর্যায়ে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ দেন। এর আলোকে মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) সকাল ১০টার দিকে চতুল ইউনিয়ন পরিষদে সরেজমিনে তদন্ত করেন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের একটি টিম। তারা সরাসরি ভুক্তভোগীদের বক্তব্য শোনেন এবং সংশ্লিষ্ট তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন।

মো. মাসুদ শেখ, সঞ্জয় শীলসহ একাধিক ভুক্তভোগী জাগো নিউজকে বলেন, আমরা গরিব ও অসহায় মানুষ। সাবেক চেয়ারম্যান সবকিছু যাচাই-বাছাই করে আমাদের কার্ড করে দিয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমান চেয়ারম্যানকে আমরা ভোট দিইনি এমন সন্দেহে তিনি আমাদের কার্ড বাতিল করে দিয়েছেন। এমনকি কার্ড নবায়নের কথা বলে ট্যাক্সের নামে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে আড়াইশো থেকে শুরু করে ৫০০/৭০০ টাকা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমাদের কার্ড বাতিল করা হয়েছে, যা খুবই অমানবিক। কার্ড বাতিল হওয়ায় আমরা এখন চরম দুর্দিনের মধ্যে দিনাতিপাত করছি।

এ বিষয়ে চতুল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শরীফ সেলিমুজ্জামান লিটু বলেন, বিষয়টি জানতে পেরেছি। কার্ড হারিয়ে অনেকেই এখন দিশেহারা। ভুক্তভোগীরা বিষয়টি জানিয়ে সহায়তা চেয়েছেন। কান্নাকাটি করছেন। কিন্তু কী করবো আমি তো দায়িত্বে নেই। রেশন কার্ড দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য প্রধানমন্ত্রীর একটি মানবিক সহায়তা। এ নিয়ে কোনো চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করা বা অপরাজনীতি মোটেও কাম্য নয়।

জানতে চাইলে চতুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, আর্থিক সচ্ছলতা, আইডি কার্ডের সমস্যা, একাধিক সুবিধা ভোগসহ নানা কারণে কার্ড বাতিল হতে পারে। এর পেছনে আমার কোনো অসৎ উদ্দেশ্য বা নোংরা রাজনীতির সুযোগ নেই। কে আমাকে ভোট দিয়েছেন বা দেননি সে হিসাব আমি করি না। আমার কাছে সবাই সমান। আমি আমার ইউনিয়নের সব জনসাধারণের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি। আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।

এ বিষয়ে উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক ও তদন্ত কর্মকর্তা ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ভুক্তভোগীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে তাদের অভিযোগের কথা শোনা হয়েছে। এর প্রয়োজনীয় নথিপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার ইউনিয়ন পরিষদে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উপস্থিত থেকে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ শুনবেন। এ ঘটনায় তদন্ত চলমান। যাচাই-বাছাই শেষে বিস্তারিত বলা যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *