ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:১৪ অপরাহ্ন
সোয়া লাখ টাকা দিলেই মেলে রোহিঙ্গাদের এনআইডি
উখিয়া নিউজ ডেস্ক :

একদল রোহিঙ্গাকে সংগ্রহ করে নিয়ে আসা হয় চট্টগ্রাম শহরে। এ নগরীর ঠিকানা ব্যবহার করে সিটি করপোরেশন থেকে তাঁদের জন্মসনদের ব্যবস্থা করা হয়। পরে তা দিয়ে করা হয় জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি)। বিনিময়ে দালালচক্র জনপ্রতি পায় সোয়া লাখ টাকারও বেশি।

এই চক্রে জড়িত নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) কর্মী ও কক্সবাজারের কয়েকজন দালাল। নির্বাচন কমিশনের চলমান ভোটার তালিকা হালনাগাদ কর্মসূচির সুযোগে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্র করিয়ে দেওয়ার এই চক্রের সন্ধান পেয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।

তাদের অভিযানে ইসির পাঁচজন ডাটা এন্ট্রি অপারেটর, দুইজন রোহিঙ্গাসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বুধবার সংবাদ সম্মেলনে এ সম্পর্কে বিশদ জানানো হয়।

গ্রেপ্তার পাঁচজন ডাটা এন্ট্রি অপারেটর হলেন- ইয়াছিন আরাফাত, নূরনবী, মিজানুর রহমান, ফরহাদুল ইসলাম ও ইমন দাশ। অন্য পাঁচজন হলেন- নুরুল আবছার, শামসুর রহমান, মো. কামাল এবং আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা কামাল হোসেন ও পারভীন আক্তার।

এর মধ্যে শামসুর রহমান কক্সবাজারের পোকখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক। এনআইডি জালিয়াতির ঘটনায় কক্সবাজার ও দুদকে তিনটি মামলা রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এ কারণে তিনি চাকরিচ্যুত হন। জালিয়াতির মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের এনআইডি বানিয়ে দেন শামসুর রহমান ও নুরুল আবছার। কামাল হোসেন থাকেন কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। বাংলাদেশি একজনকে বিয়ে করে কক্সবাজারের ঈদগাহ এলাকায় থাকেন পারভীন। তাঁদের বিরুদ্ধে হালিশহর থানায় পৃথক দুটি মামলা করা হয়েছে।

গোয়েন্দা পুলিশ সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার নগরের হালিশহর আবাসিক এলাকার বি-ব্লকে হালিশহর হাউজিং এস্টেট উচ্চ বিদ্যালয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির তথ্য সংগ্রহের কার্যক্রম চলছিল। কক্সবাজার থেকে দুইজন মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক ভোটার হতে আসার খবর গোপন সূত্রে পায় গোয়েন্দা পুলিশ। পরে অভিযান চালিয়ে রোহিঙ্গা নাগরিক কামাল ও পারভীনকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা জানান, শামসুর রহমান ও নুরুল আবছার তাঁদের ভোটার করার জন্য হালিশহর নিয়ে আসেন। পরে নগরের বহদ্দারহাট এলাকা থেকে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ ও মোবাইলে থাকা তথ্য যাচাই-বাছাই করে পাঁচজন ডাটা এন্ট্রি অপারেটরকে আটক করা হয়। কামাল নামে এক সিএনজি অটোরিকশা চালক তাঁদের হালিশহরে নিয়ে যান। তাঁকেও আটক করা হয়।

নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (ডিবি-বন্দর) মুহাম্মদ আলী হোসেন জানান, শামসুর ও আবছার রোহিঙ্গাদের কাছে দালাল হিসেবে বিশ্বস্ত। তাঁরা ক্যাম্পে গিয়ে রোহিঙ্গাদের সংগ্রহ করেন। এনআইডি তৈরিতে কক্সবাজারে যাচাই-বাছাই বেশি হওয়ায় তাঁদের চট্টগ্রামে নিয়ে আসেন তাঁরা। প্রতিজনের কাছ থেকে নেন ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। নাম-ঠিকানা ডিএনসিসির একজন কর্মকর্তার মোবাইলে পাঠিয়ে দেন। সেখান থেকে আধা ঘণ্টার মধ্যে মোবাইলে জন্মনিবন্ধন সনদ চলে আসে। ঠিকানা ব্যবহার করা হয় চট্টগ্রামের। ডাটা এন্ট্রি অপারেটরদের মাধ্যমে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কর্মসূচির বিভিন্ন কেন্দ্রে লাইনে দাঁড়িয়ে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় এনআইডি পেয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। এর বিনিময়ে অপারেটররা পান ৯ হাজার টাকা করে। আবছারের মোবাইলে অন্তত ৫০০ রোহিঙ্গার জন্মনিবন্ধন সনদের ছবি পাওয়া গেছে।

নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (বন্দর) শামীম কবীর বলেন, এনআইডি জালিয়াতির কাজে ইসির চলমান প্রকল্পে যুক্ত আউটসোর্সিং করা কর্মচারীদের জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছেন। পাশাপাশি তাঁদের সঙ্গে সার্ভারে তথ্য ইনপুট দেওয়া ঢাকায় নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে কর্মরত কয়েকজনের নামও পেয়েছেন। ডিএনসিসির একজন ও নির্বাচন কমিশনের একজন কর্মকর্তার নামও পাওয়া গেছে। এসব বিষয় তাঁরা যাচাই-বাছাই করছেন। রোহিঙ্গাদের কাছে নির্বাচন কমিশনের একটি নিবন্ধন ফরম পাওয়া গেছে। সাধারণত এই ফরম নির্বাচন কর্মকর্তা ছাড়া আর কারও কাছে পাওয়ার কথা নয়।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্তদের সঙ্গে তাঁদের কার্যালয়ের কেউ জড়িত কিনা, তা তাঁরাও যাচাই-বাছাই করছেন। তদন্তে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রোহিঙ্গাদের কাছে নির্বাচন কমিশনের পাওয়া নিবন্ধন ফরম চট্টগ্রামের সিরিয়ালের নয় বলে দাবি তাঁর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *