ঢাকা, রবিবার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৫৪ পূর্বাহ্ন
সেন্টমার্টিনবাসীর ঈদ কাটছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়
উখিয়া নিউজ ডেস্ক :

বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। এবার দ্বীপের বাসিন্দাদের ঈদ কাটছে চরম উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘাতে সৃষ্ট অস্থিতিশীলতার প্রভাব পড়েছে এই সীমান্ত দ্বীপে। সেখান থেকে ভেসে আসা বিস্ফোরণ, গুলি ও মর্টার শেলের শব্দে আতঙ্ক বিরাজ করছে সেন্টমার্টিনে।

সোমবার (১৭ জুন) ঈদুল আজহার নামাজ শেষে মুঠোফোনে দ্বীপের কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। এ সময় তারা জানান, এবারের ঈদে আনন্দের চেয়ে তাদের কাছে আতঙ্কের বলে মনে হচ্ছে। চলমান পরিস্থিতি আনন্দ-উপযোগী নয় বলে তারা জানান।

দ্বীপের বাসিন্দারা জানান, একদিকে আতঙ্ক, অন্যদিকে যাতায়াতে সমস্যা। শিক্ষার্থী, চাকরিজীবীদের অনেকে বাড়ি ফিরতে পারেননি। বেশিরভাগ পরিবারের মানুষ ঈদ করছেন প্রিয়জন ছাড়া। যোগাযোগ বন্ধ থাকায় কোরবানির পশু দ্বীপে নিতে পারেননি অনেকে। ফলে উৎসবের আনন্দ স্পর্শ করছে না তাদের।

সেন্টমার্টিনের কোণারপাড়ার বাসিন্দা জালাল আহমদের ছেলে অহিদুল ইসলাম চাকরি করেন কক্সবাজারের মহেশখালীতে। এবারের ঈদ পরিবারের সঙ্গে কাটানোর ইচ্ছে ছিল তার। কিন্তু যোগাযোগ বন্ধ থাকায় সেন্টমার্টিনে তিনি যেতে পারেননি।

অহিদুল ইসলামের পরিবারের সদস্যরা বলেন, অনেক আশা ছিল অহিদুলের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করার। কিন্তু মিয়ানমারের গোলাগুলি আমাদের আনন্দ মাটি করে দিয়েছে। মিয়ানমার থেকে নাফ নদীতে গুলি ছোঁড়ার কারণে অহিদুল ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি আসেনি।

অহিদুল ছাড়াও দ্বীপের সরকারি-বেসরকারি অনেক চাকরিজীবী পরিবারের সঙ্গে ঈদ আনন্দ উদযাপনে সেন্টমার্টিন যেতে পারেননি। কারণ গত ১১ দিন ধরে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সেন্টমার্টিনে নৌ চলাচল বন্ধ রয়েছে।

কক্সবাজার জজ আদালতের আইনজীবী কেফায়েত উল্লাহ খান বলেন, জীবনে প্রথম মা-বাবাকে ছাড়া ঈদ করতে হলো। মিয়ানমারের গোলাগুলি ইস্যুতে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুট বন্ধ থাকায় কর্মস্থলে আটকা পড়ে আছি।

সেন্টমার্টিনের পশ্চিমপাড়ার নুরুল হাকিম বলেন, প্রতিবছর ঈদুল আজহায় গরু কোরবানি দেই। এবার টেকনাফ থেকে গরু আনতে না পারায় আর কোরবানি দিতে পারলাম না। গত ৪ জুন টেকনাফ গিয়ে গরু পছন্দ করে এসেছিলাম। কিন্তু তারপর যোগাযোগ বন্ধ হওয়ায় সেই গরু আর আনা হলো না।

দ্বীপের বাসিন্দা যারা বাইর থেকে গরু কিনে কোরবানি দেয় তাদের বেশিরভাগের এই সমস্যা হয়েছে। গত বছর দ্বীপে ৪০০ পশু কোরবানি দেওয়া হয়েছিল, এবার সেই সংখ্যা ৩০ এর উপরে যাবে না বলেও জানান নুরুল হাকিম।

বাইরে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের ঈদ ম্লান

উচ্চশিক্ষার জন্য সেন্টমার্টিনের বাইরে পড়ালেখা করতে যাওয়া বেশিরভাগ শিক্ষার্থী দ্বীপে ফিরতে পারেননি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে দীর্ঘ ছুটি পেলেও সেন্টমার্টিন রুটে যোগাযোগ বন্ধ থাকায় তারা শহরেই ঈদ করছেন বলে জানা গেছে।

বান্দরবান কলেজের শিক্ষার্থী সালমা হোসাইন বলেন, আমার এবার পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে সেন্টমার্টিন যাওয়া হলো না।

একই অবস্থা সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য মোহাম্মদ ইসমাইলের মেয়ে নাসিমা আক্তারের। তিনি ঢাকায় লেখাপড়া করেন। কিন্তু নৌযান চলাচল বন্ধ থাকায় তিনিও সেন্টমার্টিনে বাড়িতে যেতে পারেননি।

হাসপাতালে চিকিৎসক নেই

প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের লোকজনের স্বাস্থ্যসেবার জন্য ১০ শয্যার একটি সরকারি হাসপাতাল থাকলেও সেখানে নেই কোনো চিকিৎসক। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘাতে দ্বীপে গুলির শব্দ ভেসে আসার পর থেকে হাসপাতালটিতে কোনো চিকিৎসক নেই বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। ফলে জনমানব শূন্যে পড়ে আছে সেন্টমার্টিন পশ্চিমপাড়ায় দুই একর জমিতে নির্মিত হাসপাতাল ভবনটি।

স্থানীয় জসীম উদ্দিন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে কোনো চিকিৎসক নেই। রোগীরা ছোটখাটো সমস্যার জন্য ফার্মেসী থেকে পরামর্শ নিয়ে ওষুধ নেন। কিন্তু জরুরি অবস্থায় রোগীদের চিকিৎসার জন্য কোনো ব্যবস্থা নেই এখানে।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, সেন্টমার্টিনে কখনো ঈদের আনন্দ ম্লান হয়নি। কিন্তু এবার ঈদের আমেজ নেই। কখন কী ঘটে যায় সেই দুশ্চিন্তায় রয়েছেন বাসিন্দারা। টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ থাকায় নানা শ্রেণিপেশার লোকজন পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে পারেননি। দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হওয়া উচিত।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, সেন্টমার্টিনের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। কোরবানি উপলক্ষে সেখানকার দরিদ্র পরিবারগুলোর জন্য পাঁচটি গরুসহ ভিজিডি, ভিজিএফ ও জেলে পরিবারের জন্য চালসহ খাদ্য সামগ্রী পাঠানো হয়েছে।

এদিকে, সম্প্রতি সেন্টমার্টিনসহ দেশের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্ত পরিস্থিতি পরিদর্শন করেছেন বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী। সে সময় তিনি দেশের সার্বভৌমত্ব ও সীমান্ত সুরক্ষার জন্য অপারেশনাল, প্রশিক্ষণ ও প্রশাসনিক বিষয়ে বিজিবির সদস্যদের প্রতি নির্দেশনার পাশাপাশি সীমান্তে যে কোনো ধরণের পরিস্থিতি মোকাবিলায় সদা প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিজিবির সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম।

এ ছাড়া সেন্টমার্টিন ঘিরে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের টহল জোরদার করা হয়েছে বলে আন্তঃবাহিনী সংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে জানানো হয়েছে।

আইএসপিআর জানায়, সেন্টমার্টিন দ্বীপের সন্নিকটে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের একাধিক জাহাজ মিয়ানমারের জাহাজের গতিবিধি পর্যবেক্ষণসহ বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় থেকে নিয়মিত টহল পরিচালনা করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *