মাল্টিপল মায়লোমা। এটি একটি রোগের নাম। জীবনে প্রথম শুনেছি। হাড়ে ইনফেকশনের ফলে ক্যান্সার হলে মাল্টিপল মায়লোমা হয়।
আমি এখন ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের বেঙ্গালুরের বানারঘাটা এ্যাপোলো ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের প্রফেসর ডা. অনুপ পে’র অধীনে চিকিৎসাধীন আছি। গত ২৭ ডিসেম্বর থেকে তাঁর কাছে চিকিৎসা নিচ্ছি। আমার রোগ শনাক্ত হয়েছে। রোগের নাম মাল্টিপল মায়লোমা।
মহান আল্লাহর কাছে শোকরিয়া যে, এখনও রোগটি প্রাথমিক অবস্থায় আছে এবং শনাক্ত হয়েছে।
আমি গতবছরের আগস্ট মাস থেকে অসুস্থ। বাংলাদেশের অনেক চিকিৎসক আমাকে চিকিৎসা দিয়েছেন, সহযোগিতা করেছেন। আমি তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ।
আমি অসুস্থ হওয়ার পর মানুষের যে পরিমাণ ভালোবাসা পেয়েছি, তা আমার জীবনের সেরা পাওয়া। মানুষ আমাকে এতো ভালোবাসে, ভাবতেই চোখে জল এসে যায়। আমি আল্লাহর অনুগ্রহে আপনাদের ভালোবাসায় বাঁচতে চাই। আপনাদের কাছে ফিরে যেতে চাই। মা, মাটি, মানুষ আমাকে অনেক দিয়েছে। জানি না মানুষকে, দেশকে আমি কতটুকু দিতে পেরেছি। আমি আরও দিতে চাই। আপনাদের স্নেহ, মায়া, মমতা ও ভালোবাসার বন্ধনে শত বছর কাটাতে চাই। আমার এলাকার মানুষ, দেশের মানুষ আমার অসুস্থায় অনবরত চোখের জল ফেলেছেন। আমার স্বচক্ষে দেখা শত শত নারী-পুরুষ শিশুদের মতো কান্না করেছেন। আমার জীবনে এর চেয়ে আর পাওয়ার কিছু নেই।
আল্লাহ আমি ও আমার পরিবারকে কঠিন পরীক্ষায় রেখেছেন। আমার বাবা গত তিন মাস ধরে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। কঠিন অবস্থা পার করছেন বাবা। তাঁর এই কষ্টের মুহুর্তে আমি তাঁর পাশে নেই। আমি বাবার এক অযোগ্য সন্তান। তারপরও মাতৃভূমি থেকে হাজারো মাইল দূরে বসে বাবার জন্য প্রার্থনা করি। আমার হায়াত আল্লাহ তুমি বাবাকে দাও। আমার বাবা খুব কষ্ট পাচ্ছে। তাঁর ৭০% লিভার ডেমেজড হয়ে গেছে। পেটে পানি চলে এসেছে। শ্বাস কষ্ট হচ্ছে। পিত্ততলীতে ক্যান্সার সন্দেহ করছেন চিকিৎসকেরা। জানি না মাবুদ আমি আমার বাবার চাঁদমুখ খানা দেখবো কিনা। আমার বাবাকে তুমি সুস্থ করে দাও মাবুদ।
আমার মা, আমার ভাই-বোন, আমার স্ত্রী-সন্তানদের মনের অবস্থা কেমন আছে তা সহজে অনুমেয়। তাঁদের এই পরিস্থিতি মোকাবিলার শক্তি দাও খোদা। হাজারো মাইল দূরে বসে আমিও অনবরত কান্না করছি। আমার দেহ বেঙ্গালুরে; আমার মন বাবার কাছে, পরিবারের কাছে। আমার দেড় বছরের একটা ফুটফুটে বাচ্চা আছে। আমার বাচ্চার দিকে তাকাতে পারি না, আমার বুক ফেটে যায়। মাবুদ জানি না এ অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ কি। তোমার ছায়া তোমার অনুগ্রহ ছাড়া আমার আর কিছু নেই মাবুদ। আমাকে, আমার বাবাকে শেফা দাও আল্লাহ।
আমার এ কঠিন সময়ে আমার কর্তৃপক্ষ এবং আমার শুভাকাঙ্খীরা পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। এখানে নাম বলে তাঁদের ছোট করতে চাই না। আমি আপনাদের কাছে ঋণী।
আগামী ৭ জানুয়ারি থেকে এ্যাপোলো হসপিটালে আমার চিকিৎসা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে। প্রতি সপ্তাহে কেমো (ইনজেকশন) দিতে হবে। এভাবে চার মাস চলমান থাকবে। ভারতের কয়েকটি ব্যয়বহুল শহরের মধ্যে বেঙ্গালুর একটি। এই শহরে আমাকে থাকতে হবে গোটা চারমাস। জানি না বৈতরণী কিভাবে পার হবো। তবে দৃঢ় বিশ্বাস আছে আমি পারবো। আমি রোগ জয় করে দেশে ফিরতে পারবো। ধৈর্য্য, শক্তি , সাহস সবই আমার আছে। আপনাদের কাছে চাওয়া, দু হাত তুলে মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে আমি ও আমার বাবার জন্য দোয়া করুন।
আল্লাহ গোটা দুনিয়ার সকল বিপদে পড়া মানুষ ও অসুস্থদের রক্ষা করুন।
এস এম হানিফ
৫ জানুয়ারি ২০২২ ইংরেজি
কুমারাস্বামী লেআউট, বেঙ্গালুর, ভারত
(লিখাটি সাংবাদিক এস এম হানিফের ফেসবুক আইডি থেকে নেওয়া )
Leave a Reply