ঢাকা, শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৫ অপরাহ্ন
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ফ্যাক্টর হয়ে উঠছে আরাকান আর্মি
উখিয়া নিউজ ডেস্ক :

ক্রমে জটিল হচ্ছে মিয়ানমার পরিস্থিতি। এটি সরাসরি প্রভাব ফেলছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে। ২০২১ সালে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের আগের সরকারকে প্রত্যাবাসনে রাজি করিয়েছিল বাংলাদেশ। পরে জান্তা ক্ষমতা দখলের পর দীর্ঘদিন যোগাযোগই বন্ধ ছিল। তবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কিছু দৃশ্যমান পদক্ষেপের পর আরাকানে গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি নতুন করে জটিল রূপ নেয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে সেখানে যে পরিস্থিতি চলছে, তাতে সামনের দিনে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গেও যোগাযোগ রাখতে হবে বাংলাদেশকে।

দ্রুতই বদলে যাচ্ছে মিয়ানমারের পরিস্থিতি। সেখানে একের পর এক এলাকা দখল করে নিচ্ছে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো। বিভিন্ন জায়গায় নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে জান্তা। এতে রোহিঙ্গা সংকটে আরও একটি নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে।

আরাকান আর্মি সম্প্রতি দখল করে নিয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তের কাছাকাছি গুরুত্বপূর্ণ একটি এলাকা।
তবে ঢাকা ও নেপিদোর কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, আরাকান আর্মি কী করল বা কতটুকু জায়গা দখল করল, তা নিয়ে মোটেই বিচলিত নয় জান্তা। কারণ, পুরো রাখাইন দখলে গেলেও যতক্ষণ না জান্তা সেখানে হেরে যাওয়া বা অঞ্চলটি হাতছাড়া হওয়ার স্বীকৃতি দিচ্ছে, ততক্ষণ সেই এলাকা আবারও হারানোর ভয় থাকবে আরাকান আর্মির। আর জান্তা চাইলে নিমেষেই নৌ, বিমান ও সেনাবাহিনীর মাধ্যমে হারানো এলাকাগুলো পুনরুদ্ধার করতে পারবে।

তবে প্রশ্ন উঠছে, কেন জান্তা এসব এলাকা হারাচ্ছে। নাম না প্রকাশের শর্তে এক কূটনীতিক সমকালকে বলেন, যে এলাকাগুলো আরাকান আর্মি দখল করেছে, এর প্রায় সবই জঙ্গল ও দুর্গম। এ এলাকাগুলোতে বেশি সম্পদ ও সৈন্য ব্যয় করতে রাজি নয় মিয়ানমার। এমনিতেই দীর্ঘদিন যুদ্ধে থাকায় সেনাবাহিনীর অনেকে চাকরি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।

এ পরিস্থিতিতে আরাকান আর্মির সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ বাড়াতে পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও রাষ্ট্রদূত মো. তৌহিদ হোসেন. তিনি বলেন, রাখাইনে যে গৃহযুদ্ধ চলছে, তার সমাধান দুটি পথে হতে পারে– সংঘাতের মাধ্যমে অথবা আলোচনার টেবিলে। ফলে যেভাবেই এর সমাধান হোক না কেন, ওই অঞ্চলে আরাকান আর্মির আধিপত্য থাকবে। তাই বাংলাদেশের উচিত তাদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ রাখা। কারণ, ভবিষ্যতে শুধু কেন্দ্রীয় সরকারের ইচ্ছার ওপর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নির্ভর করবে না।

তবে অঞ্চলটির স্বাধীন হওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না সাবেক এ শীর্ষ কূটনীতিক। তৌহিদ হোসেন বলেন, মিয়ানমারের নির্বাসিত বিরোধী দলের নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (এনইউজি) কখনোই চাইবে না দেশটির কোনো অংশ আলাদা হয়ে যাক। এখনকার সংকট সমাধানের পর আরাকানে কিছুটা হলেও স্বায়ত্তশাসন আসবে। সে দিকটি নজরে রেখে বাংলাদেশকে কৌশল সাজাতে হবে।
পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে যোগাযোগ করলে মিয়ানমারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মো. মনোয়ার হোসেন সমকালকে বলেন, এখানে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল। মিয়ানমার সরকার থেকে কোনো তথ্যই সরবরাহ করা হচ্ছে না। ফলে যতটুকু তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তা আসছে সরকারবিরোধীদের কাছ থেকে। এখনই নিশ্চিত হয়ে কোনো কিছু বলা যাচ্ছে না।

ঢাকা ও নেপিদোর সূত্রগুলো জানায়, আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। সম্প্রতি মংডুর বুথিডাংয়ে জান্তা বাহিনী অভিযান চালালে রোহিঙ্গাদের যুদ্ধের সামনে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। এতে জান্তাবিরোধী গণমাধ্যমে ১২  রোহিঙ্গার হতাহতের খবর পাওয়া গেছে।

নাম না প্রকাশের শর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা  বলেন, মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে নিরাপত্তাসংক্রান্ত তথ্য বাদে বাকি সব ধরনের তথ্য আদান-প্রদান করা হচ্ছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ পর্যায়ক্রমে নেওয়া হচ্ছে। তবে সেখানে শুরুতে সহায়ক পরিবেশ দরকার। এ জন্য দরকার স্থিতিশীলতা। ঢাকা সেখানকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রেখেছে।

রাখাইনে সম্প্রতি বিদ্রোহীরা জান্তা সরকারের বেশ কয়েকটি সামরিক চৌকি, সীমান্ত ক্রসিং এবং রাস্তা দখল করে নিয়েছে। আর বিদ্রোহীরা জান্তার বিরুদ্ধে মিয়ানমারের অন্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো থেকে সমর্থন পাচ্ছে।

 

সুত্র-সমকাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *