ঢাকা, সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:২৬ পূর্বাহ্ন
মিয়ানমারের ঘটনার সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো সম্পর্ক নেই: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
উখিয়া নিউজ ডেস্ক :

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী  আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, মিয়ানমারে যে ঘটনাগুলো ঘটছে সেটা তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। মিয়ানমার তাদের দেশের মধ্যেই বিভিন্ন সময় সংকটের মধ্যে পড়েছে। আরাকান আর্মিসহ সেখানে বিভিন্ন বিছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে যুদ্ধ করছে। আমরা শুনেছি, আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমার যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। এ ঘটনায় আমাদের দেশের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা মনে করি, মিয়ানমার তাদের এলাকায় যুদ্ধ করবে, আমাদের দেশে তারা অনুপ্রবেশ ঘটাবে না, কিংবা অনুপ্রবেশ করবে না।

বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বায়তুল ইজ্জতে অবস্থিত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) বীরউত্তম মজিবুর রহমান প্যারেড গ্রাউন্ডে প্রশিক্ষণ কুচকাওয়াজ শেষে তিনি এসব কথা বলেন।

বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজের ৯৮তম ব্যাচের সমাপনী কুচকাওয়াজ ও শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তিনি। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন এবং বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এখন পর্যন্ত আমাদের বিজিবি অত্যন্ত যোগ্যতার সঙ্গে বর্ডার অঞ্চল রক্ষা করে চলেছে। সেই জায়গায় আমরা আরও জনবল (সৈনিক) বৃদ্ধি করেছি; যাতে সারাক্ষণ সীমান্তে বিজিবির চৌকিগুলোতে তারা পর্যবেক্ষণ করেন।

তিনি বলেন, কোনোক্রমেই আরাকান আর্মি, মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি) কিংবা অন্য কোনো বাহিনীর সদস্য যেন আমাদের সীমানায় না ঢুকতে পারে। সেই লক্ষ্যে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে বিজিবি রাত-দিন কাজ করছে। আমরা মনে করছি তারা সঠিক কাজই করছে।

নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা নতুন করে কাউকে আহবান করছি না। তাদের সীমানায় তারা যুদ্ধ করুক, কিন্তু আমাদের সীমানায় তাদের ঢুকতে দেব না, এটা আমাদের ক্লিয়ার মেসেজ।

এর আগে কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে নবীন সৈনিকদের উদ্দেশ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, শৃঙ্খলা হচ্ছে সৈনিকের মূল পরিচিতি। আদেশ ও কর্তব্য পালনে যে কখনো পিছপা হয় না সে-ই প্রকৃত সৈনিক। সততা, বুদ্ধিমত্তা, নির্ভরযোগ্যতা, আনুগত্য, তেজ ও উদ্দীপনা একটি বাহিনীর শৃঙ্খলা ও পেশাগত দক্ষতার মাপকাঠি। নবীন সৈনিকরা এসব গুণাবলির প্রতিফলন ঘটিয়ে বাহিনীর ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

তিনি বিজিবির চারটি মূলনীতি-‘মনোবল, ভ্রাতৃত্ববোধ, শৃঙ্খলা ও দক্ষতা’-এ উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত হয়ে বিজিবির ওপর অর্পিত যেকোনো দায়িত্ব সুশৃঙ্খল ও সুচারুরূপে পালন করে দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষার সুমহান দায়িত্ব পালনের আহবান জানান।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ১৯৭৪ সালের ৫ ডিসেম্বর তৎকালীন বিডিআরের ৩য় ব্যাচের সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক প্রদত্ত চোরাচালান বিরোধী ও প্রেষণামূলক বক্তব্যের কথা স্মরণ করে চোরাচালান রোধে নবীন সৈনিকদের পেশাগত দক্ষতা অর্জনসহ ব্যক্তিগতভাবে সুদৃঢ়, সুশৃঙ্খল, নির্ভীক ও নির্লোভ চরিত্রের অধিকারী হয়ে নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে সবর্দা সচেষ্ট থাকার আহবান জানান। তিনি বিজিবির নবীন সৈনিকদের প্রদর্শিত তেজোদীপ্ত কুচকাওয়াজের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন এবং নবীন সৈনিকদের নতুন জীবনে পদার্পণের শুভলগ্নে তাদের স্বাগত জানান।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এই বাহিনী তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী দিক-নির্দেশনায় আজ একটি সুসংগঠিত, চৌকস, সুশৃঙ্খল ও পেশাদার বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিজিবিকে একটি অত্যাধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিজিবির সাংগঠনিক কাঠামোতে ব্যাপক পরিবর্তন এনে বিজিবিকে একটি ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে উন্নীত করা হয়েছে। বিজিবি এখন জল, স্থল ও আকাশপথে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালনে সক্ষম। স্মার্ট বর্ডার ম্যানেজমেন্টের অংশ হিসেবে অত্যাধুনিক সার্ভেইলেন্স ইকুইপমেন্ট স্থাপন, অত্যাধুনিক যুগোপযোগী ও কার্যকর এন্টি ট্যাংক গাইডেড উইপন্স, এটিভি, এপিসি, রায়ট কন্ট্রোল ভেহিক্যাল ও দ্রুতগামী জলযান সংযোজন করা হয়েছে।

এবার বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজ ও চুয়াডাঙ্গা ব্যাটালিয়ন থেকে (বিজিবি) ৯৮তম রিক্রুট ব্যাচের ৮৪৯ জন সৈনিক শপথ গ্রহণ করেন। দীর্ঘ ২৪ সপ্তাহের অত্যন্ত কঠোর ও কষ্টসাধ্য প্রশিক্ষণ সমাপ্তের মধ্য দিয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশে সৈনিক জীবন শুরু হলো তাদের। আজ থেকে দেশমাতৃকার সেবা আর দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সীমান্তের প্রহরা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে শপথ নেওয়া ৮৪৯ সৈনিকের মধ্যে ৮০৩ জন পুরুষ ও ৪৬ জন নারী রয়েছেন।

অনুষ্ঠানে বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, স্থানীয় বেসামরিক প্রশাসনিক ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *