বিশ্বকাপ ফুটবলের উন্মাদনায় ভাসছে বাংলাদেশ। তবে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেট মাঠে ফিরতেই দর্শকরা আবার দলবেঁধে হাজির মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল নিয়ে মাতামাতির মধ্যে হঠাৎ পাদপ্রদীপের আলোয় মেহেদী হাসান মিরাজ। রোববার ভারতের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে সাকিবের দারুণ বোলিংয়ের পর মিরাজের ব্যাটিং-বীরত্বে বাংলাদেশের এক উইকেটের রুদ্ধশ্বাস জয়ের পর সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি মুর্তজা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, ‘ওডিআই তারপর আবার মিরপুর, প্রতিপক্ষ কে তার দেখার সময় কোথায়।’ মিরাজও দেখেননি কোন জায়গায় আছে দল। কে প্রতিপক্ষ? নিজের ওপর আস্থা থেকেই অবিশ্বাস্য জয় এনে দিলেন বাংলাদেশকে। জয়ের পর জানালেন, ‘আমি সত্যিই আত্মহারা।’
ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের হৃদয়ভাঙা হারের গল্প লিখতে গেলে তো কাব্যই হয়ে যাবে। একই ধরনের পরিস্থিতিতে কাল দুই বন্ধু মিরাজ ও মোস্তাফিজ লিখলেন নতুন গল্প। ম্যাচ শেষে মিরাজ বলেন, ‘মোস্তফিজ আমাকে শুরু থেকেই সাহস জুগিয়ে গেছে। সে উইকেটে নেমেই আমাকে বলেছে আমি আউট হব না। শরীর দিয়ে ঠেকালেও টিকে থাকব। তুমি তোমার মতো করে খেলে যাও। এটা আমাকে দারুণ অনুপ্রাণিত করেছে।’
ভারতের বিপক্ষে বাঁ-হাতি স্পিনারদের মধ্যে সেরা বোলিং করেছেন সাকিব। নিয়েছেন ক্যারিয়ারে চতুর্থবারের মতো পাঁচ উইকেট। এরপর ব্যাটিংয়ে করলেন ২৯ রান। সাকিবকে অনেকে ম্যাচসেরা হিসাবে ধরে নিয়েছিলেন। তবে মিরাজের ৩৮* রানের ইনিংসটি হয়ে রইল নায়ক হওয়া স্কোর। মিরাজ যে রূপকথার জন্ম দিয়েছেন সেটা তিনি প্রথমেই বিশ্বাস করেছিলেন। এই অলরাউন্ডার বলেন, ‘সত্যি বলতে উত্তরটা আমার বিশ্বাস ছিল। অনেকে বললে বলবে পাগল। আমি বিশ্বাস করছিলাম। আমার কাছে মনে হয়নি যে ম্যাচটি আমরা হারব। নিজের সঙ্গে কথা বলছিলাম আমি পারব, আমি পারব।’ তিনি বলেন, ‘আমি হাসান মাহমুদকেও বলছিলাম চার-পাঁচটা বল যদি তুমি খেলতে পার তাহলে আমার জন্য সহজ হয়ে যাবে। আমি চিন্তা করেছিলাম হয়তো ইবাদতকে নিয়ে ১৫ রান করব, হাসান মাহমুদকে নিয়ে ২০টা রান করব। মোস্তাফিজকে নিয়ে শেষে ১৫-২০ রান করব। এভাবে আমার চিন্তাভাবনা ছিল। তারপর ইবাদত ও হাসান পরপর আউট হয়ে গেলে হয় বাঁচো না হয় মরো অবস্থা হয়ে যায়। তবে মোস্তাফিজের কথাগুলো আমার ভেতরে বাজছিল।’
শেষ উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ৫১ রানের জুটি গড়েছেন মিরাজ ও মোস্তাফিজ। তবে শেষের দিকে কিছুটা চাপ অনুভব করছিলেন মিরাজ। তিনি বলেন, ‘যখন ১৪ রান বা ১০ রান ছিল তখন একটু উত্তেজনায় ছিলাম। ভাবছিলাম এত কাছে এসে যদি হেরে যাই। এরকম হয়েছে তো আগেও। কিন্তু মোস্তাফিজ আমাকে সাহস দিয়েছে। মোস্তাফিজ বলছিল, এখন তাড়াহুড়োর কিছু নেই। এখন ছয় মারার দরকার নেই।’
Leave a Reply