ঢাকা, শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৬ পূর্বাহ্ন
পিতৃত্বের স্বীকৃতি দাবি : তিন বছর ধরে আদালতে লড়ছেন ‘বদিপুত্র’ ইসহাক
জসিম আজাদ ::

কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের সাবেক এমপি আব্দুর রহমান বদিকে নিজের পিতা দাবি করে মোহাম্মদ ইসহাক নামের এক যুবক। সন্তানের স্বীকৃতি পেতে দীর্ঘ তিন বছর ধরে আদালতের বারান্দায় ঘুরছেন। নিজের বাবাকে বাবা বলে ডাকতে এই আইনি লড়াই চালাচ্ছেন তিনি।
২০২০ সালে ১৩ ডিসেম্বর কক্সবাজারের টেকনাফ সহকারী জজ আদালতে মোহাম্মদ ইসহাক একটি মামলা করেন, যার নম্বর ১৪৯। আলোচিত সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদিকে নিজের পিতা জেনেও তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ভয়ে বাবা ডাকা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন ইসহাক।
পিতৃত্বের দাবিতে মামলা চললেও মূল বিবাদী আব্দুর রহমান বদি কখনোই আদালতে হাজিরা দেননি। গত সোমবার সেই মামলায় আদালতে হাজিরা দিয়েছেন আরেক বিবাদী আব্দুুর রহমান বদির চাচা ও টেকনাফ পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ ইসলাম। এদিন মোহাম্মদ ইসহাক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দুজনের ছবি দিয়ে একটি লেখা পোস্ট করেন।
ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন- আলহামদুলিল্লাহ্। প্রায় দীর্ঘ তিন বছর পর আমার মামলার বিবাদী হাজী মোহাম্মদ ইসলাম সাহেব (মেয়র টেকনাফ পৌরসভা) হাজিরা দিতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু আমার বাবার দেখা নাই। নিশ্চয় তিনিও আসবেন। আমি চাই সঠিক বিচার। মনে রাখবেন আইন ছাড় দেয় কিন্তু ছেড়ে দেয় না। আমি অপরাধী হলে আমি শাস্তি পাব, আর আমার বাবা অপরাধী হলে তিনি আমার অধিকার ফিরিয়ে দেবেন। এখন অতি সহজভাবে পরীক্ষার মাধ্যমে জন্মপরিচয় শনাক্ত করা যায়। তিন বছর আমি প্রতিনিয়ত সঠিক বিচারের আশায় আদালতে হাজিরা দিয়েছি। মামলা চলমান রেখেছি। আমার অতি কষ্টের হালাল অনেক উপার্জন আমার বাবার জন্য ব্যয় করেছি। আমি বলেছিলাম মামলা করার সময় আমার মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত আমি মামলা চলমান রাখব। এটা আইন প্রণয়নকারীদের পক্ষে আইন ভঙ্গের অভিযোগ। আমি চাই ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে আমার মামলাটি সমাপ্ত হোক। আমার বাবার কৃত্রিম শক্তি নিশ্চয় পরাজিত হবে। আমার বাবাকে রাজনৈতিকভাবে

হয়রানি করা আমার উদ্দেশ্য নয়, তা হলে আমি তিন বছর আগে মামলা করতাম না। যদি আমার বাবা আমার অধিকার না দেয় নিশ্চয় আমি রাজনৈতিক মাঠে এর মোকাবিলা করব। আপনারা আমাকে অনেকে এই পরামর্শ দিয়েছেন। আপনারা আমার জন্য একটু দোয়া করবেন।

মায়ের অনুমতি পাচ্ছি না, মায়ের অনুমতি লাগবে। মোহাম্মদ ইসহাক আবেদনে উল্লেখ করেছেন, ১৯৯২ সালের ৫ এপ্রিল কলেমা পড়ে তার মা সুফিয়া খাতুনকে বিয়ে করেন আব্দুর রহমান বদি। বিয়ে পড়ান বদির পারিবারিক আবাসিক হোটেল নিরিবিলিতে তৎসময়ে কর্মরত মৌলভী আবদুস সালাম। বিয়ের স্বাক্ষী ছিলেন হোটেলের দারোয়ান এখলাছ মিয়া। বুদ্ধি হওয়ার পর মায়ের কাছে জানতে পারেন তার পিতা আব্দুর রহমান বদি। পরবর্তীতে মায়ের হাত ধরে অসংখ্যবার পিতার কাছে যান। পিতা আব্দুর রহমান বদি আড়ালে তাকে নিজের সন্তানের মতো বুকে জড়িয়ে আদর করেন। মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। এভাবে অনেকবারই পিতার কাছে গিয়ে সান্নিধ্য পেয়েছেন। কিন্তু প্রকাশ্যে সন্তান হিসেবে মোহাম্মদ ইসহাককে মেনে নেননি বদি। রাজনৈতিক ক্যারিয়ার, সামাজিক অবস্থানসহ নানা সমীকরণ দেখিয়ে তার মায়ের কাছে বারবার সময় নেন। মা সুফিয়া খাতুনও স্বামীর কথার অবাধ্য হননি। তাই এতদিন চুপ ছিলেন।
ইসহাক তার মামলায় আরো দাবি করেন, ৩০ বছর আগে টেকনাফ পৌরসভার ইসলামাবাদ ধুমপাড়ার বাসিন্দা আবুল বশরের মেয়ে সুফিয়া খাতুনকে সাবেক সংসদ সদস্য বদি গোপনে বিয়ে করেন। বাদী তার মায়ের পেটে আসার খবর জানতে পেরে তাকে পেটে থাকতে হত্যার চেষ্টা চালান বদি। তাতে সফল না হয়ে সুফিয়াকে স্থানীয় এক রাজমিস্ত্রীর সঙ্গে বিয়ে দেয়া হয়। এ সময় সুফিয়ার পেটে বাচ্চা থাকার কথা গোপন রাখা হয়। পরে জানতে পেরে সেই স্বামী সব মেনে নিয়ে সংসার করেন। এরপরও বাচ্চাসহ সুফিয়াকে হত্যার চেষ্টা করত বদির পরিবার। এজন্য তারা প্রায় সময় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পালিয়ে জীবন ধারণ করেন। এসব বিষয় উল্লেখ করে সুফিয়া সাংবাদিকদের সাক্ষাৎকারও দিয়েছেন। তাদের দাবি ইসহাক বদির সন্তান, তাকে যেন মেনে নিয়ে সন্তানের মর্যাদা দেয়া হয়। বাদী ও তার মায়ের দাবি অনুসারে আব্দুর রহমান বদির প্রথম সন্তান ইসহাক। তার অবয়ব, আচরণ সবকিছু বদির অবিকল কপি বলে উল্লেখ করেছেন ওয়াকিবহাল মহল।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে সাবেক এমপি আব্দুর রহমান বদির মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সংযোগ না পাওয়ায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

 

সূত্র -ভোরের কাগজ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *