নারী দিবসের আলোচনা সভায় স্কাস চেয়ারপারসন জেসমিন প্রেমা বলেছেন , আমার কাছে প্রতিদিনই নারী দিবস! কারণ আমি প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত নারীদের জন্য কাজ করি, বাহির থেকে যতই সহজ হোক বাস্তবে এই কাজ অনেক কঠিন, অনেক ত্যাগ করছি এই যুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য। নারীর যোগ্যতা অনুসারে মূল্যায়ন চাই , সমতা ও সমধিকার চাই। আমরা মেয়েরা কাজ করেও স্বীকৃতি পাইনা, আমরা স্বীকৃতি চাই, বৈষম্যহীন সমাজ চাই।
দেশব্যাপী আন্তর্জাতিক নারী দিবস -২০২৪ উদযাপনের অংশ হিসেবে ৭ মার্চ আন্তর্জাতিক সংস্থা(আই এল ও) এর অর্থায়নে এবং একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) এর সহযোগীতায়,সমাজ কল্যাণ ও উন্নয়ন সংস্থা (স্কাস) আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০২৪ উদযাপন করেছে। ”নারীর সমধিকার, সমসুযোগ এগিয়ে নিতে হোক বিনিয়োগ” প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বিভিন্ন আয়োজনের মধ্যদিয়ে এই দিবসটি উদযাপন করেছে স্কাস।
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কিশোর কিশোরীদের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধির জন্য সমাজ কল্যাণ ও উন্নয়ন সংস্থা (স্কাস) কর্তৃক পরিচালিত দক্ষতা উন্নয়নমূলক মার্কেট ড্রাইভেন কেয়ার গিভিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বিকাল ২ ঘটিকায় স্কাসের চেয়ারপার্সন জেসমিন প্রেমার নেতৃত্বে নারীর ক্ষমতায়ন ও সচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রমের বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন, প্লে-কার্ডসহ একটি বর্ণাঢ্য র্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
র্যালি শেষে ”নারীর সমধিকার, সমসুযোগ এগিয়ে নিতে হোক বিনিয়োগ” প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উখিয়া প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি সরওয়ার আলম শাহিন,বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উখিয়া উপজেলার রাজাপালং আবুল কাশেম নুর জাহান চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের সম্মানিত
সভাপতি শাহীন আক্তার,আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন স্কাসের চেয়ারপার্সন জেসমিন প্রেমা।
উদ্ভোধনী বক্তব্যে সমাজ কল্যাণ ও উন্নয়ন সংস্থার চেয়ারপার্সন জেসমিন প্রেমা শুরুতে স্বাধীনতার মহান মুক্তিযুদ্ধের সকল শহিদ ও নির্যাতিত মা বোনদের প্রতি গভীর সম্মান নিবেদন করেন। তিনি বলেন, নারী প্রধান এনজিও হিসেবে স্কাস শত প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে হাজার হাজার নারীদের উন্নয়নে, ক্ষমতায়নে ১৯৯৫ সাল থেকে কাজ করে যাচ্ছে। কারণ আমরা বিশ্বাস করি নারীদেরও কাজ করার সক্ষমতা রয়েছে, সেই সক্ষমতাকে কাজে লাগাতে পারলে দেশে দক্ষ জনশক্তির পরিমান দ্বিগুন হবে। ফলে আমাদের ৩০ লক্ষ শহীদের বিনিময়ে অর্জিত এই সোনার বাংলাদেশ উন্নয়নশীল থেকে উন্নত দেশে রূপান্তর হবে। তখন আমরা বিশ্বের দরবারে বাঙ্গালী জাতী বলে মাথা উচু করে দাঁড়াতে পারবো, বিশ্ববাসী জানবে বাঙ্গালী জাতি স্বনির্ভরজাতী ।
তিনি আরো বলেন, সারাদেশে নারীদের কাজের নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি, নারীর ক্ষমতায়ন ও দক্ষতা অর্জনের লক্ষ্যে স্কাসের কাজের যে দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতা রয়েছে সেটিকে কাজে লাগিয়ে স্কাস আরো বড় পরিসরে কাজ করতে চাই। এমতাবস্থায় সরকার ও দাতা সংস্থার সহযোগিতা কামনা করছি। তিনি সভার প্রধান অতিথিসহ উপস্থিত সকলকে স্কাসের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
শাহিন আক্তার তার বক্তব্যে বলেন, প্রথমে সমাজ ও পরিবার থেকে আমাদের বৈষম্য রোধ করতে হবে। তাহলেই জাতীয় পর্যায়ে ও নারীরা সমান অধিকার পাবে। আমাদের থেকেই এই উদ্যোগ শুরু করতে হবে। যেহেতু আমাদের দেশসহ সমগ্র বিশ্বের পরিবেশটা নারীদের জন্য শতভাগ নিরাপদ নয় তাই আমাদের উচিত নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সচেষ্ট হওয়া। নারীর সমঅধিকার ও সমসুযোগ দেওয়া ও পুরুষের সহযোগিতার মধ্য দিয়েই নারীরা এগিয়ে যাবে, তাই নারী-পুরুষ আমাদেরকে একই কাতারে আসতে হবে।
তিনি আরো বলেন, স্কাস চেয়ারপার্সন আমাদের জন্য একজন সঠিক অনুপ্রেরণা যার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে উখিয়ায় একমাত্র নারী প্রধান এনজিও হিসেবে নারীদের অগ্রাধিকার ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে । মার্কেট ড্রাইভেন কেয়ার গিভিং প্রশিক্ষণ সহ বিভিন্ন দক্ষতা উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে নারীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে ফলে দেশে- বিদেশে বিভিন্ন স্তরে দক্ষতার ভিত্তিতে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
উখিয়া প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি সরওয়ার আলম শাহিন তার বক্তব্যে বলেন, আমাদের স্কাসের চেয়ার্পারসন জেসমিন প্রেমা থেকে অনুপ্রেরণা নেওয়া উচিত, যিনি নারী হয়ে সমাজ ও দেশের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, ছেলে হোক বা মেয়ে হোক সকলের নিজস্ব পরিচয় দরকার। স্কাস উখিয়া উপজেলার স্থানীয় লোকজনের জন্য বিভিন্ন ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন নারী দিবস একদিনের জন্য কিন্তু আমাদের উচিত নারীদের জন্য সম্মান যেন সব সময় থাকে। নারীদেরকে শিক্ষার দিকে মনোযোগী এবং মেধাবী হওয়ার দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। তিনি আরো বলেন বর্তমানে উখিয়া থানায় নারী নির্যাতন এবং বাল্যবিবাহের সংখ্যা অনেক আংশে কমে গিয়েছে যাহা সম্ভব হয়েছে সচেতনতার মাধ্যমে।
সভায় অন্যান্য বক্তারা বলেন, নারীদের ক্ষমতায়ন ও উন্নয়নে স্কাস গুরুত্বপুর্ণ অবদান রাখছেন। তাদের নানা উদ্যোগের মাধ্যমে হাজার হাজার নারী নিজেদেরকে স্বাবলম্বী, যোগ্য, আত্মনির্ভরশীল করে তৈরী করার সুযোগ পাচ্ছে। যা দেশের উন্নয়নে বড় ধরনের ভুমিকা রাখছে ।
সভায় বিভিন্ন সমাজ সচেতন সাংবাদিক প্রতিনিধি, বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের অংশীজনসহ স্কাসের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply