মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের টাকার বিনিময়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশি জন্ম সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও পাসপোর্ট বানিয়ে দেওয়া চক্রের ২৩ সদস্যকে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
সোমবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবি প্রধান হারুন-অর-রশীদ এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, দুই আনসার সদস্যসহ ২৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের কাছে থেকে ১৭টি পাসপোর্ট, ১৩টি এনআইডি, পাঁচটি কম্পিউটার, তিনটি প্রিন্টার, ২৪টি মোবাইল ফোন ও পাসপোর্ট তৈরির সংশ্লিষ্ট শত শত দলিলপত্র জব্দ করা হয়েছে।
ডিবি প্রধান জানান, শনিবার ঢাকার আগারগাঁও, মোহাম্মদপুর, যাত্রাবাড়ী, বাড্ডায় এলাকায় ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে পাসপোর্ট সংক্রান্ত ডকুমেন্টস, পাসপোর্ট ও কম্পিউটারসহ তিন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও ১০ বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্য ও জব্দ করা ডকুমেন্টস বিশ্লেষণ করে রবিবার দিনে ও রাতে কক্সবাজার, টাঙ্গাইল ও ঢাকায় অভিযান চালিয়ে দুই আনসার সদস্য এবং রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি দালাল চক্রের আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার আসামিরা পাঁচ দিনের পুলিশ রিমান্ডে আছে বলেও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
যেভাবে রোহিঙ্গাদের ঢাকায় আনা হয়
সংবাদ সম্মেলনে জানান হয়, গ্রেপ্তার চক্রের একটি দল কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি থেকে রোহিঙ্গাদের ঢাকায় নিয়ে আসে। আরেকটি দল এদের জন্য জন্ম সনদ, এনআইডি বানিয়ে দেয়। সবশেষে আরেকটি দল ঢাকাসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে আনসার সদস্যদের মাধ্যমে ব্যাংকে এক্সপ্রেস, সুপার এক্সপ্রেস ধরনের টাকা জমা দেওয়া, বায়োমেট্রিক্স করা ও ছবি তোলার ব্যবস্থা করে দেয়।
ডিবি প্রধান জানান, ছয় ঘণ্টার মধ্যে জন্ম সনদের জন্য চক্রটি ৫ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা নেয়। তিন দিনের মধ্যে এনআইডি করে দেওয়ার জন্য ২৫ হাজার টাকা এবং পাসপোর্ট তৈরি করার জন্য ১ লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়ে থাকে বলে গ্রেপ্তারকৃতরা প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে।
জব্দ করা আলামতের বরাত দিয়ে তিনি জানান, গ্রেপ্তার দালালদের মোবাইলে শত শত পাসপোর্ট করে দেওয়ার প্রাসঙ্গিক সফট ডকুমেন্টস, ডেলিভারি স্লিপ পাওয়া গেছে, যার মধ্যে গত তিন মাসে রোহিঙ্গাদের জন্য করা ১৪৩টি পাসপোর্টের সন্ধান পাওয়া গেছে। ২০১৯ সাল থেকে চক্রটি রোহিঙ্গাদের, বাংলাদেশি দাগি অপরাধীদের ভিন্ন নাম ও ঠিকানায় পাসপোর্ট করে দিচ্ছে বলে স্বীকার করেছে।
যেসব জেলার ঠিকানা ব্যবহার করা হয়
সংবাদ সম্মেলেন জানানো হয়, ডিবিকে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, রংপুর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ ও বরিশাল জেলার ঠিকানা ব্যবহার করে জন্ম সনদ ও এনআইডি বানিয়ে তার ভিত্তিতে পাসপোর্ট বানিয়ে থাকে চক্রটি।
ডিবির সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ডাটা, ডিজিটাল জন্ম সনদ ডাটা, স্মার্ট এনআইডি ডাটা ব্যাংক আছে, যেখানে বিভিন্ন বায়োমেট্রিক্স, ছবিসহ নানা তথ্য সংরক্ষিত। পাসপোর্ট তৈরির জন্য তাৎক্ষণিকভাবে রোহিঙ্গা ডাটা, ডিজিটাল জন্ম সনদ ডাটা ও স্মার্ট এনআইডি ডাটা ভেরিফাই করলেই রোহিঙ্গাসহ নন-বাংলাদেশিদের শনাক্ত করা সম্ভব।
Leave a Reply