ঢাকা, শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:০৪ পূর্বাহ্ন
কক্সবাজারে ডেঙ্গু আক্রান্তদের ৮৩ শতাংশই রোহিঙ্গা
উখিয়া নিউজ ডেস্ক :

কক্সবাজারে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। গত জুলাইয়ের ৩১ দিনে জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিল ৩ হাজার ২৫২ জন। অথচ আগস্ট মাসের ২৭ দিনেই আক্রান্ত দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৫২০ জন। কক্সবাজার সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে দেওয়া এক তথ্যবিবরণী বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত এক সপ্তাহে কক্সবাজারে নতুন করে ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৫৬৮ জন। যার মধ্যে ১ হাজার ২৯৭ জন রোহিঙ্গা এবং ২৭১ জন স্থানীয় বাসিন্দা। অর্থাৎ শুধু রোহিঙ্গাদের আক্রান্তের হার ৮২ দশমিক ৭১ শতাংশ।

তথ্যবিবরণী অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২৭ আগস্ট পর্যন্ত কক্সবাজারে মোট ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগী ১০ হাজার ২২৬ জন। যার মধ্যে ৮ হাজার ৫৩৮ জন রোহিঙ্গা ও ১ হাজার ৬৮৮ জন স্থানীয় রয়েছেন। কিন্তু ২১ আগস্ট দেওয়া তথ্যবিবরণীতে দেখা যায়, জেলায় মোট ৮ হাজার ৬৫৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত ছিলেন। যেখানে রোহিঙ্গা ছিলেন ৭ হাজার ২৪১ জন ও স্থানীয় ছিলেন ১ হাজার ৪১৭ জন।

কক্সবাজার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ডা. শাহ ফাহিম আহমদ ফয়সাল জানিয়েছেন, জানুয়ারি থেকে ২৭ আগস্ট পর্যন্ত কক্সবাজার জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৮ জন রোহিঙ্গা ও ২ জন স্থানীয়। সোমবার পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৩৩ জন।

তিনি জানান, ডেঙ্গু আক্রান্ত বিবেচনায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও তার আশপাশের এলাকা ক্রমাগত অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২৭ আগস্ট পর্যন্ত উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পকেন্দ্রিক ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৯ হাজার ৪৭৪ জন। যেখানে রোহিঙ্গা ৮ হাজার ৩৪২ জন এবং স্থানীয় ১ হাজার ১৩২ জন। গত ২১ আগস্ট পর্যন্ত উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পকেন্দ্রিক ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৮ হাজার ১৩ জন। যেখানে রোহিঙ্গা ৭ হাজার ৭২ জন ও ৯৪১ জন স্থানীয় বাংলাদেশি।

এ পরিসংখ্যান মতে, গত ৭ দিনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পকেন্দ্রিক নতুন করে ১ হাজার ৪৬১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। যেখানে ১ হাজার ২৭০ জন রোহিঙ্গা এবং ১৯১ জন স্থানীয় বাংলাদেশি আক্রান্ত হয়েছেন।

এর বাইরে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২৭ আগস্ট পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৭৫২ জন। যেখানে ৫৫৬ জন স্থানীয় বাংলাদেশি এবং ১৯৬ জন রোহিঙ্গা। গত ১ আগস্টের প্রতিবেদনে মোট আক্রান্ত ছিল ৬৪৫ জন। যেখানে ৪৭৬ জন স্থানীয় বাংলাদেশি এবং ১৬৯ জন রোহিঙ্গা ছিল। জেলা সদর হাসপাতালে গত ৭ দিনে নতুন করে ১০৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন। যেখানে ৮০ জন স্থানীয় বাংলাদেশি ও ২৭ জন রোহিঙ্গা ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন।

ডা. শাহ ফাহিম আহমদ ফয়সাল জানিয়েছেন, আক্রান্তের বিবেচনায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ১, ১ (পশ্চিম), ১ (পূর্ব) ৪, ৯, ১৭ নম্বর ক্যাম্প সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এ ছাড়া কক্সবাজার পৌরসভা, চকরিয়ায় অধিকসংখ্যক রোগী পাওয়া যাচ্ছে। বন্যা-পরবর্তী গত ৩ সপ্তাহে এমন বিষয়টি দেখা যাচ্ছে।

কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোমিনুর রহমান জানিয়েছেন, সোমবার (২৮ আগস্ট) জেলা সদর হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত ৫৫ জন ভর্তি রয়েছে। আগস্ট মাসের শুরু থেকে জেলায় বৃষ্টি বেড়েছে। এর কারণে বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা, নালায় আবর্জনা হয়ে পানি জমে থাকার কারণে এডিস মশার প্রজনন বেড়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবে গত মাসের তুলনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে।

কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ের স্বাস্থ্য সমন্বয়ক ডা. আবু তোহা মো. আর. হক ভূঁইঞা জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ঘনবসতি, পরিচ্ছন্ন নালা, যেখানে সেখানে পানি জমে থাকার কারণে স্বাভাবিকভাবে মশার প্রজনন থাকে। যেখানে আগে থেকেই ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি। এ মাসে তা আরও একটু বেড়েছে।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালে কক্সবাজারে মোট ১৯ হাজার ২৩১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিল। যার মধ্যে ১৫ হাজার ৬৩৬ জন রোহিঙ্গা ও ৩ হাজার ৫৮৫ জন স্থানীয়। এই এক বছরে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল। যার মধ্যে রোহিঙ্গা ২৬ জন ও স্থানীয় ১৩ জন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *