ঢাকা, শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:৫৬ অপরাহ্ন
এত ওয়াইড-নো, মিস ফিল্ডিং করলে একটা দল জিতবে কিভাবে?
স্পোটস ডেস্ক ::

একটি দলকে জিততে হলে কিছু শর্ত অবশ্যই পূরণ করতে হয়। ব্যাটিং-বোলিং ভালো করার পাশাপাশি ফিল্ডিংটাও মানসম্মত হওয়া প্রয়োজন। এগুলো বিধিবদ্ধ কথা-বার্তা। এর অন্যথা হলে জয় কোনোভাবেই সম্ভব নয়। সে সঙ্গে কমিটমেন্ট। দলের প্রতি, খেলার প্রতি খেলোয়াড়দের কমিটমেন্ট, জয়ের ক্ষেত্রে দারুণ ভূমিকা রাখে।

বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়রা এর আগেও দাবি করেছেন, তাদের কমিটমেন্টের অভাব নেই। এখনও দাবি করবেন নিশ্চয়ই। আমরাও তাদের কমিটমেন্ট নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারবো না কোনোভাবেই। জাতীয় দলের লাল-সবুজ জার্সিটা যারই গায়ে উঠুক, তার মধ্যে এমনিতেই কমিটমেন্ট তৈরি হয়ে যায়। জান-প্রাণ দিয়ে তখন তারা চেষ্টা করেন, দলকে জেতাতে, ভালো খেলতে।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু এই কমিটমেন্টের মাত্রাটাই হলো আসল। এখন হঠাৎ, মাত্রার কথা শুনলে যে কেউ বলে বসতে পারেন- এটা আবার কী? আফগানিস্তানের কাছে প্রথম ম্যাচে পরাজয়ের পর  সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তানের মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরেছিলেন দেশের দুই ক্রিকেট ব্যক্তিত্ব গাজী আশরাফ হোসেন লিপু এবং নাজমুল আবেদিন ফাহিম। প্রথমজন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম অধিনায়ক এবং অন্যজন দেশের নামি ক্রিকেট কোচ, সাকিব-তামিম-মুশফিকদের সরাসরি শিক্ষক।

এই দুই ক্রিকেট ব্যক্তিত্ব বুঝিয়ে দিয়েছেন, আফগানদের রশিদ খান, মোহাম্মদ নবি কিংবা মুজিবুর রহমানরা নিজের চেষ্টাতে দেশের ক্রিকেটকে টিকিয়ে রেখেছেন, দলে সুযোগ তৈরি করা নয়, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কিভাবে পারফর্ম করতে হয় সে চেষ্টা করছেন। আর বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা চেষ্টা করেন ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো খেলে কিভাবে জাতীয় দলে জায়গাটা নিশ্চিত করা যায়। পারফর্ম করার চিন্তা তাদের মাথায় থাকে না।

 

দলের আভ্যন্তরীন সংস্কৃতির কথা না হয় এখানে নাই বা আলোচনা করলাম। এই আভ্যন্তরীন সংস্কৃতি নিয়ে কিছুদিন আগে টি-টোয়েন্টি থেকে সদ্য বিদায়ী কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো একটি পত্রিকার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বলে দিয়ে গেছেন।।

কমিটমেন্টের মাত্রাটা কী রশিদ খান, মুজিবুর রহমানদের মতো নাকি উপরোল্লিখিত দুই ক্রিকেট ব্যক্তিত্বের বর্ণনামত, তা বিচারের ভার পাঠকদের কাছেই তোলা রইলো।

প্রথম ম্যাচে আফগানদের কাছে না হয় কম স্কোরের কারণে বাংলাদেশ হেরেছিল। ম্যাচ, শেষে সাকিব ১০-১৫ রান বেশি না করতে না পারার আক্ষেপ জানিয়েছিলেন; কিন্তু শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এই ম্যাচের আক্ষেপ কী? ১৮৩ রান করার পরও কী সাকিব সেই রেকর্ড বাজাবেন, ‘১০-১৫ রান কম হয়ে গেছে?’

১৮৪ রানের লক্ষ্য। অবশ্যই শ্রীলঙ্কা চাপে। বাংলাদেশের বোলারদের এই রান ডিফেন্ড করতে না পারাটাই তো বড় লজ্জার। তাও যদি শ্রীলঙ্কা যদি তাদের ব্যাটারদের কৃতিত্বে ম্যাচটা জিততে পারতো, মনকে বুঝ দেয়া যেতো। কিন্তু ২০ ওভারের ম্যাচ বাংলাদেশ খেললো ২২ ওভার। অর্থ্যাৎ, বাংলাদেশ বোলিং করেছে ২২ ওভার। ২ ওভার তথা ১২টি বল বেশি, কল্পনা করা যায়?

৮টা ওয়াইড বল, ৪টা নো বল। আই ১২টি ওয়াইড এবং নো বল থেকে তো এমনিতেই ১২ রান চলে আসে। কিন্তু ১২ রানে থেমে থাকলে তো ভালোই ছিল। কোনো কোনো নো বলে এসেছে ৫ রান, ৩ রান- এমন। সব মিলিয়ে অতিরিক্ত ১৭ রান।

অথচ, ১৮৩ রান দিয়েছিল শ্রীলঙ্কান বোলাররা। কিন্তু তাদের একজন বোলারও একটিও ওয়াইড-নো দেয়নি। অতিরিক্ত ১০ রান হইছে, বাই এবং লেগ বাই থেকে। এগুলো তো ছিল বৈধ বল। অর্থ্যাৎ, ২০ ওভার কাটায় কাটায় শেষ করেছে লঙ্কান বোলাররা।

বাংলাদেশ দলের অভিষিক্ত পেসার এবাদত হোসেনের প্রশংসা করবেন নাকি সমালোচনা করবেন- পাঠকরাই ঠিক করে নিন। ৪ ওভার তিনি শেষ করেছেন ৩২টি বল করে।

প্রথম ওভারেই ২টি উইকেট নিয়ে তিনি হলেন নন্দিত। কিন্তু শেষ বলটি করার আগেই দিলেন একটি ওয়াইড। ওই বল থেকে মোট হয়েছে ২ রান। পরের ওভারেই শেখ মাহদি (মাহদি হাসান) দিলেন একটি নো বল। অর্থ্যাৎ, ফ্রি হিট। যদিও বড় কোনো শট খেলতে পারেননি কুশল মেন্ডিস।

পরের ওভারে আবার এলেন এবাদত। এবার ওভার শেষ করতে তিনি লাগিয়েছেন ৮ বল। দিয়েছেন দুটি ওয়াইড। একটি উইকেট নেয়ায় তার এই দুটি ওয়াইড খুব একটা চোখে পড়েনি।

১৩তম ওভারে আবারও এবাদতকে ফিরিয়ে আনা হলো। প্রথম বলটিই করলেন ওয়াইড। তার আগে সাকিব, তাসকিনরা চার ওভার করে একটিও ওয়াইড-নো দেননি। এবাদত এসেই দুটি ওয়াইড এবং একটি নো বল। ওভার শেষ করেন ৯ বলে। অতিরিক্ত রান দিয়েছেন মোট চারটি।

ebadot

১৯তম ওভার। খুবই কঠিন একটি মুহূর্ত। ১২ বলে ২৫ রান প্রয়োজন। এবাদতকে আবার আনা হলো। প্রথম দুই বল ভালোয় ভালোয় শেষ করলেন। তৃতীয় বলটি দিলেন নো এবং বল চলে যায় মাঠের বাইরে। এক নো বল থেকে এলো ৫ রান। যদিও ৪ রান যোগ হলো ব্যাটারের নামে।

এরপর একটি উইকেট নিয়ে আশা জাগালেও আরো একটি ওয়াইড দিয়ে হতাশাটা ফুটিয়ে তোলেন এবাদত। মোট কথা, তিনি যেমন আশা জাগালেন, তেমনি ডোবালেনও একের পর এক ওয়াইড এবং নো বল দিয়ে। ১৯তম ওভারে ১ উইকেট নিলেও দিলেন ১৭ রান।

ফলে শেষ ওভারে প্রয়োজন হলো ৮ রান। বোলার শেখ মাহতি। এবাদতের ভূত যেন তার ওপরই চেপেছে। প্রথম বল লেগবাই। দ্বিতীয় বলে বাউন্ডারি হজম করলেন। শেষ চার বলে প্রয়োজন ৩ রান। তৃতীয় বলটিই করলেন নো বল। ব্যাটাররা দৌড়ে রান নিল দুটি। এসে গেলো তিন রান। বৈধ চারটি বলই বাকি রয়ে গেলো। এভাবেই ওয়াইড-নো দিয়ে ১৮৩ রান করেও শ্রীলঙ্কাকে জিতিয়ে দিলেন বাংলাদেশের বোলাররা।

এবার আসা যাক মিস ফিল্ডিং আর ক্যাচ ড্রপের কথা। যে কুশল মেন্ডিসের ৩৭ বলে ৬০ রানের ওপর ভর করে জিতেছে শ্রীলঙ্কা, হেরেছে বাংলাদেশ সেই কুশল মেন্ডিসকে আজ অকাতরে জীবন দান করেছেন বাংলাদেশের বোলাররা-ফিল্ডার।

মেন্ডিস যখন ২ রান নিয়ে ব্যাট করছিলেন, তখন কী অসাধারণভাবেই না তার ক্যাচটা ছেড়ে দিয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম। তাসকিনের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচটা দিয়েছিলেন মেন্ডিস। খুব বেশি কঠিন ক্যাচ ছিল না। মুশফিক ক্যাচটি গ্লাভসেই জমাতে পারেননি। ছেড়ে দিলেন। বেঁচে যান মেন্ডিস। এই ক্যাচটা ড্রপ করেই ম্যাটা ড্রপ করেছেন সিনিয়র এবং অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম।

৭ম ওভারের শেষ বলে আবারও মেন্ডিস। ২৯ রান নিয়ে ব্যাট করছিলেন তিনি। শেখ মাহদির লো বলটি ব্যাটের নিচের কানায় লাগিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন তিনি। উইকেট পাওয়ার উল্লাসে মেতে ওঠেন বাংলাদেশ দলের ফিল্ডাররা। কিন্তু বল চেক করতে গিয়ে দেখা গেলো, শেখ মাহদি তো ওভার স্টেপড হয়ে গেছেন। একজন স্পিনার ওভার স্টেপড হয়ে যান, বিরল ঘটনা। আর সেটাই ঘটলো মাহদির উইকেট নেয়ার বলে। সুতরাং, আম্পায়ার নো বল ডাকলেন, ফিরে এসে ব্যাট করতে থাকলেন মেন্ডিস।

অষ্টম ওভারের পঞ্চম বলটিতে তৃতীয়বারের মতো জীবন পান কুশল। এবার তিনি এবাদতকে ‍পুল করলে লেগ দিয়ে বল চলে গিয়েছিল উইকেটরক্ষক মুশফিকের হাতে। আবেদনও হয়েছিল।

কিন্তু আম্পায়ার সে আবেদন নাকচ করে দেন। বাংলাদেশি ফিল্ডাররাও বুঝতে পারেননি বল ব্যাটে স্পর্শ লেগেছে কিনা। পরে স্নিকোমিটারে দেখা যায়, বল ব্যাটে লেগেই গেছে মুশফিকের হাতে। এখানে, মেন্ডিস কৃতিত্বটা বাংলাদেশের ফিল্ডারদের দিতেই পারেন। রিভিউ হাতে রেখে দেশে এনে টাইগার ফিল্ডাররা মোয়া-মুড়কি খাবে।

১১তম ওভারের তৃতীয় বলে চতুর্থবারের মত সুযোগ পান মেন্ডিস। নিশ্চিত রান আউট থেকে বেঁচে যান তিনি। বাংলাদেশের ফিল্ডারদের থ্রোইং ও যেন নিজেদের সাথে প্রতারণা শুরু করে দিয়েছিল। না হয়, মেন্ডিস কেন এতবার সুযোগ পাবেন! শেষ পর্যন্ত ৩৭ বলে ৬০ রান করে জয়ের মূল কাজটা তো তিনিই করে দিয়ে গেছেন।

এখানে অবশ্যই শ্রীলঙ্কার জয়ে মূল কৃতিত্বটা বাংলাদেশের বোলার-ফিল্ডারদের বলাই যায়। ঠিক কি না বলেন….।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *