ঢাকা, শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:৫৫ অপরাহ্ন
উখিয়ায় ‘আরসার’ সেকেন্ড ইন কমান্ডসহ গ্রেপ্তার ৩
উখিয়া নিউজ ডেস্ক :

কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে আরকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সেকেন্ড ইন কমান্ড এবং আরসা প্রধানের দেহরক্ষীসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। এসময় তাদের কাছ থেকে দুটি বিদেশি অস্ত্র, একটি দেশি অস্ত্র ও ৪ রাউন্ড গুলি জব্দ হয়। গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাতে উখিয়ার ২০ নম্বর এক্সটেনশন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একটি ঘর থেকে তারা গ্রেপ্তার হন। বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে কক্সবাজারস্থ র‌্যাব-১৫ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন এতথ্য জানান।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- উখিয়ার ৪ নম্বর ক্যাম্পের মো. নুরের ছেলে আবুল হাসিম (৩১), ১২ নম্বর ক্যাম্পের মৃত আলী আহমেদের ছেলে হোসেন জোহার প্রকাশ আলী জোহার (৩২) এবং ৬ নম্বর ক্যাম্পের নুর আলমের ছেলে মো. আলম প্রকাশ শায়ের মুছা (৩৫)।

র‌্যাব জানায়, গ্রেপ্তার আবুল হাসিম আরসার সেকেন্ড ইন কমান্ড, মো. আলম আরসা প্রধান আতাউল্লাহ জুনুনির দেহরক্ষী এবং আলী জোহার আরসার পরিবহন শাখার কমান্ডার। এদের সবার বিরুদ্ধে হত্যাসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাজ্জাদ হোসেন জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আরসা সদস্যরা ২০ নম্বর এক্সটেনশন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একটি ঘরে অবস্থান করছে বলে জানতে পারে র‌্যাব। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে র‌্যাবের একটি দল সেখানে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। র‌্যাবের উপস্থিতি বুঝতে পেরে পালানোর সময় তিন আরসা সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব সদস্যরা। এসময় তাদের কাছ থেকে অস্ত্র ও গুলি জব্দ হয়।

তিনি আরও বলেন, আবুল হাসিম ২০১৭ সালে বাংলাদেশে এসে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নেন। ২০১৮ সালে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী সংগঠন আরসায় যোগ দেন তিনি। প্রথম দিকে তিনি নেট গ্রুপের সদস্য হিসেবে কাজ করতেন। ২০২০-২২ পর্যন্ত জিম্মাদারের দায়িত্বে ছিলেন। তার নেতৃত্বে ৪ নম্বর ক্যাম্প ও বর্ধিত অংশে আরসার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য নতুন করে ঘাঁটি তৈরি করে। পরে আবুল হাসিম সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি আরসার নির্দেশনা মোতাবেক আরসার আধিপত্য বিস্তার জন্য ক্যাম্পে সহিংসতা সৃষ্টি, মারামারি, প্রতিপক্ষ গ্রুপকে ক্যাম্প এলাকা থেকে বিতাড়িত করার জন্য দফায় দফায় সশস্ত্র হামলা, আরসার টার্গেটকৃত মাঝি, সাধারণ রোহিঙ্গা ও বিত্তশালী রোহিঙ্গাদের হত্যা ও অপহরণসহ নানাবিধ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে সন্ত্রাসী কার্যক্রম শেষে তিনি আত্মগোপনে চলে যেতেন। আবুল হাসিমের বিরুদ্ধে ৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এরশাদ, ইমাম হোসেন ও সাব মাঝি সৈয়দ আলম হত্যা, ৩ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আব্দুল হামিদ, মো. কাসিম ও ইউনুস হত্যা এবং ১৭ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাছিম হত্যাসহ ৭টি মামলা রয়েছে।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাজ্জাদ হোসেন বলেন, হোসেন জোহার প্রকাশ আলী জোহার মিয়ানমারে থাকাকালীন আরসার সদস্য হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। ২০১৭ সালে বাংলাদেশে প্রবেশ করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান করতে শুরু করেন তিনি। ২০২০ সালের প্রথম থেকে তিনি মৌলভী লাল মোহাম্মদ এবং মুফতি আতিক এর সহযোগী হিসেবে আরসার কাচারী বা আদালতে বিচার কাজ করতেন। তখন আরসার কাচারীতে বিভিন্ন নির্যাতন ও জরিমানা আদায়ের মূল কাজটা করতেন। ২০২২ সালে কোনারপাড়া ডিজিএফআই কর্মকর্তা হত্যাকাণ্ডের পর আরসার কমান্ডাররা মিায়ানমারের অভ্যন্তরে চলে গেলে তিনি আরসার পরিবহন শাখার কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ পান। তার বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় ২টি মামলা রয়েছে।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, মো. আলম প্রকাশ শায়ের মুছা ২০১৬ সালে মিয়ানমার থাকতেই আরসায় যোগ দেন। তিনি মিয়ানমারে প্রথমে আরসার পাহারাদার হিসেবে কাজ করতেন। পরে তিনি আতাউল্লাহ জুনুনির দেহরক্ষী হিসেবে কাজ করেন। তার বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় ৫টি মামলা রয়েছে।

গ্রেপ্তার ৩ জনের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করে উখিয়া থানায় সোপর্দ করা হয়েছে বলে জানিয়ে র‌্যাব অধিনায়ক বলেন, এক বছরে র‌্যাব-১৫ আরসার ১০১ জন শীর্ষ সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেছে। উদ্ধার করেছে ৭টি বিদেশি পিস্তল, ৫২টি দেশি তৈরী অস্ত্র, ১৪০ রাউন্ড গুলি/কার্তুজ, ৬৭ রাউন্ড খালি খোসা, ৫০ কেজি ২১ গ্রাম বিস্ফোরক, ২৮ পিস ককটেল, ৪ পিস আইইডি, ১ কেজি ৫ গ্রাম মার্কারী (পারদ)।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *