ঢাকা, শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:২৫ অপরাহ্ন
অনিয়মের অভিযোগ তোলায় ইউপি সদস্যদের পেটালেন চেয়ারম্যান!
ডেস্ক রিপোর্ট ::

পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার মালিখালী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান রুহুল আমীন বাবুলের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে ১১ জন ইউপি সদস্য অনাস্থাপত্র দিয়েছেন। তাদের মধ্যে ৩ জন নারী ও ৮ জন পুরুষ সদস্য।

এই অনিয়মের বিষয়টি তুলে ধরায় ইউপি সদস্যদের পিটিয়ে জখম করার অভিযোগ উঠেছে চেয়ারম্যান রুহুল আমীন বাবুলের বিরুদ্ধে। তবে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

 শনিবার দুপুরে পিরোজপুর প্রেসক্লাবে নাজিরপুর উপজেলার ২ নম্বর মালিখালী ইউপির ১১ জন সদস্য সংবাদ সম্মেলন করেন। তারা চেয়ারম্যানকে অপসারণের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মনোজ কান্তি মণ্ডল বলেন, গত ১৬ মার্চ ইউপির ১১ জন সদস্য জেলা প্রশাসক ও নাজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে চেয়ারম্যান রুহুল আমীন বাবুলের নামে অনাস্থাপত্র দিয়েছেন। গত ৭ এপ্রিল নাজিরপুরের ইউএনও শেখ আব্দুল্লাহ সাদিদ ওই ১১ জন ইউপি সদস্যকে তার কার্যালয়ে ডেকে পাঠান। ইউএনওর নির্দেশে ৭ এপ্রিল তার কার্যালয়ে যাওয়ার পথে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নাজিরপুর হাসপাতালের সামনে চেয়ারম্যান বাবুলের নেতৃত্বে ২৫ থেকে ৩০ জন দুর্বৃত্ত তাদের ওপর সন্ত্রাসী কায়দায় হামলা করে। এ সময় আটজন আহত হন। তাদের মধ্যে ইউপি সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা কদম আলী শেখ, মনোজ কান্তি মণ্ডল, নারী সদস্য নাসরিন আক্তার গুরুতর আহত হন।

আহতরা নাজিরপুর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে সেখানেও তাদের ওপর হামলা চালিয়ে হাসাপাতাল থেকে বের করে দেওয়া হয়। পরে পিরোজপুর জেলা জেনারেল হাসপাতালে তারা চিকিৎসা নেন। এখনো কদম আলী শেখ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

লিখিত বক্তব্যে দাবি করা হয়, চেয়ারম্যান বাবুলের নেতৃত্বে নজরুল ইসলাম বাবুল, নাজিরপুর উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আল-আমিন শেখ, উপজেলা ছাত্রলীগের সদস্য শান্ত ইসলাম শোভন, পল্লব রায়, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আশিকুল ইসলামসহ ২৫-৩০ তাদের মারধর করেন। পিরোজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য, মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের বড় ভাই নজরুল ইসলাম বাবুল।

তবে নজরুল ইসলাম বাবুল বলেন, তিনি ঘটনার তিন পিরোজপুরে ছিলেন না। মারধরের ঘটনায় তার নাম নিয়ে আসার ঘটনাটি সাজানো।

অনাস্থাপত্রে চেয়ারম্যানের নানা অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে। বলা হয়েছে, চেয়ারম্যান বাবুল নারীদের মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদানের নামে প্রতিজনের কাছ থেকে ২ হাজার টাকা করে উৎকোচ গ্রহণ, খাদ্যবান্ধব তালিকায় নতুন ৩৬ নামের তালিকাভুক্তিতে প্রত্যেকের কাছ থেকে ১ হাজার টাকা, আরও নতুন নাম দেওয়ার প্রলভোন দেখিয়ে সহস্রাধিক লোকের কাছ থেকে ৫০০ টাকা করে আদায়, নতুন  জন্মনিবন্ধন ও তা সংশোধন বা ডিজিটাল করার জন্য প্রত্যেকের কাছ থেকে ৩০০ থেকে  ৫০০ টাকা করে আদায়, হতদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির (ইজিপিপি) শ্রমিক নিয়োগে ৮৬ জনের কাছ থেকে জনপ্রতি ১ হাজার ২০০ টাকা করে লক্ষাধিক টাকা, গভীর নলকূপ প্রদানের জন্য জনপ্রতি ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা উৎকোচ গ্রহণ করেছেন। এ ছাড়া নির্বাচনকালে স্থানীয় হাট-বাজারের খাজনা মওকুফের ঘোষণা দিয়েও নির্বাচনে জয়লাভের পর চেয়ারম্যান নিজেই খাজনা নিচ্ছেন।

ইউপি সদস্যরা আরও অভিযোগ করেন, টিআর, কাবিখা-কাবিটা প্রকল্পের কাজ করাতে প্রতি সদস্যের বরাদ্দ থেকে শতকরা ১৫ টাকা হারে ঘুষ নিচ্ছেন। এ ছাড়া এলজিএসপি-৩-এর কাজের জন্য ওই ইউনিয়নের ইউপি সদস্যদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা উৎকোচ নিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য নাজমুল হাওলাদার, ৩ নম্বরের নাসির উদ্দিন শেখ, ৪ নম্বরের তপন মণ্ডল, ৫ নম্বরের সুজিত গাইন, ৬ নম্বরের মনোজ কান্তি মণ্ডল, ৭ নম্বরের মো. নাসিম শেখ, ৮ নম্বরের মো. শহিদুল মোল্লা, ৯ নম্বরের মো. কদম আলী শেখ এবং সংরক্ষিত নারী আসনের নাসরিন আক্তার, শোভা রানী মণ্ডল ও সামছুন্নাহার।

সংবাদ সম্মেলনে ইউপি সদস্যরা অভিযোগ করেন, এ বিষয়ে নাজিরপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলেও পুলিশ মামলা নিচ্ছে না।

উল্লেখ্য, মালিখালী ইউপি চেয়ারম্যান রুহুল আমীন বাবুল আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আনারস মার্কা নিয়ে নির্বাচন করেন। নির্বাচনে মন্ত্রীর বড় ভাই নজরুল ইসলাম বাবুল আনারস মার্কার পক্ষে প্রচারণা করেন। ২০০৭ সালে চেয়ারম্যান বাবুল সরকারি চাল চুরির মামলায় ঢাকায় র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে গিয়েছিলেন।

হামলার বিষয়ে চেয়ারম্যান মো. রুহুল আমীন বাবুল বলেন, হামলার ঘটনার দিন তিনি নাজিরপুরেই ছিলেন না।

ইউপি সদস্যের অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করে চেয়ারম্যান বলেন, তার প্রতিপক্ষের সহযোগিতা ও ইন্ধনে ইউপি সদস্যরা এমন অভিযোগ করেছেন।

নাজিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হুমায়ুন কবির বলেন, একটি লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *